উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী, ক্বারি ও সংগঠক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন হাফেজ তারেক মাহমুদ। ছোটবেলা থেকেই ইসলামি গানের প্রতি তার আগ্রহ ছিল প্রচণ্ড। গান গাইতেই পছন্দ করতেন। সে আলোকে গড়ে তোলেন দারুসসুন্নাহ ও নূরে মদিনা নামে দুটি ইসলামি শিল্পীগোষ্ঠী। ‘ওগো আল্লাহ শোকর তোমার’ গানটি গেয়ে সর্বমহলে জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি।
Advertisement
গানের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই কুরআনের প্রতি তার আকর্ষণ ছিল প্রবল। তাই তো সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর পবিত্র কুরআনের হেফজ শুরু করে তা খুব কম সময়ে শেষ করেন। এরপর ২০১০ সালে বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের উদ্যোগে জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত পবিত্র হেফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।
গান ও হেফজের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডেও পিছিয়ে নেই হাফেজ তারেক মাহমুদ। মানুষের মাঝে সামাাজিক ঐক্য, ইসলামের নৈতিক শিক্ষা ও অসহায় মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করেন ‘প্রিন্সিপালনগর হিলফুল ফুযুল’ সংগঠন। এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিও তিনি।
তাছাড়া লক্ষ্মীপুর তরুণ মুফাসসির সংঘের সহকারী প্রতিষ্ঠাতা এবং কমলনগর কুরআন অধ্যয়ন সেন্টারের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
Advertisement
শিক্ষা জীবনে সাফল্যউদীয়মান কণ্ঠশিল্পী হাফেজে কুরআন ও সংগঠক তারেক মাহমুদ পড়ালেখাতেও পিছিয়ে নেই। মাতাব্বরনগর মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করলেও সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তিনি লক্ষ্মীপুর শহরের আত-তারতিল হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখান মাত্র ২ বছরে পবিত্র কুরআনের হেফজ শেষ করেন।
হেফজ শেষ করার পর লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্যবাহী টুমচর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল (এসএসসি) পরীক্ষায় গোল্ডেল এ প্লাস ও ট্যালেন্টফুল বৃত্তি পান।এরপর বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকার দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসায় ‘আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ’-এ অনার্স ভর্তি হন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিজিপিএ আউট অব ফোরে ৩.৯৯ নিয়ে ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হন।
উভয় প্রতিষ্ঠানে অনার্স তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন সময়ে বিশ্ব বিখ্যাত ২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ লাভ করেন। তার একটি হলো মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যটি বর্তমান বিশ্বের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রথমে বিশ্বের প্রাচীনতম ও বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটে ২০১৭-১৮ সেশনের জন্য ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ সম্পন্ন করেন।
Advertisement
অতঃপর চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর চলে যান বর্তমান বিশ্বের বিখ্যাত ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে তিনি ২০১৮-১৯ সেশনে আরবি ভাষা বিজ্ঞানের জন্য জন্য ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ মনোনীত হন।
আরও পড়ুন > মদিনায় চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণকারী হাফেজ হুসাইনের তেলাওয়াত
হাফেজ তারেক মাহমুদের পরিচয়উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী ও সংগঠক হাফেজ তারেক মাহমুদ লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মাতাব্বরনগর দারুসসুন্নাহ সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা আলী হোসাইন ও সাইয়্যেদা হাসিনা হোসাইনের মেঝো ছেলে। তাঁর নানা কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে গোল্ড মেডেন প্রাপ্ত মাওলানা ছাইয়েদ আহমদ।
তারেক মাহমুদের বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্সে সিজিপিএ আউট অফ ফোরে ফোর পাওয়ায় এবং ডিপার্টমেন্টে সর্বোচ্চ স্কোর পাওয়ায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ থেকে স্বর্ণপদক পান। সম্প্রতি জার্মান সংসদে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করা সাইয়্যেদ রাশেদ হাসান চৌধুরী তুরস্কের আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
সেজো ভাই সাইয়্যেদ নাসের নাফিস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত এবং ছোট ভাই সাইয়্যেদ তানভির নবম শ্রেণিতে পড়ছে।
হাফেজ তারেক মাহমুদের বাবা প্রিন্সিপাল হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই গান তেলাওয়াত ও সমাজ কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহ পেয়েছেন। পরিবারের অন্য সদস্যদের উদ্দীপনা ও তুরস্কে অধ্যয়নরত বড় ভাই সাইয়্যেদ রাশেদ হাসান চৌধুরীর প্রেরণা ও সঠিক গাইড লাইনের কারণেই সফলতা পেয়েছেন।
হাফেজ তারেক মাহমুদ তাঁর স্বপ্নে কথা তুলে ধরেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই ‘কণ্ঠ অনুশীলন, কুরআন তেলাওয়াত, সংগঠন সমন্বয় এবং উচ্চ শিক্ষার লাভ করার ইচ্ছা। ধীরে ধীরে আমার সব স্বপ্নগুলো বাস্তবে পাখা মেলছে।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষিত পরিবার হওয়ার কারণে পড়াশোনার কোনো ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধকতা শব্দটা অনুধাবন করতে হয়নি। বিশেষ করে আমার গৃহ শিক্ষক মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও মঞ্জুরুল ইসলামের তত্ত্বাবধান বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রসঙ্গে হাফেজ তারেক মাহমুদ জানান, ‘প্রিন্সিপালনগর হিলফুল ফুযুল সংগঠন প্রতিষ্ঠাতার পেছনে মূল লক্ষ্য হলো মানুষের মধ্যে ঐক্য ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ এবং অসহায় মানুষের কল্যাণ সাধন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
কণ্ঠশিল্পী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই গান গাইতে পছন্দ করতাম, সেই ধারাবাহিকতায় শিল্পী হওয়া। পরবর্তীতে নূরে মাদিনা ও দারুসসুন্নাহ শিল্পীগোষ্ঠী গড়ে তুলি। আর এই জায়গায় অসংখ্য মানুষের আন্তরিকতা ও সাড়া পেয়েছি, যা আমার জীবনের অন্যতম একটি অর্জন।’
বর্তমান অনুভূতি...মদিনায় অবস্থানকারী হাফেজ তারেক মাহমুদের কাছে বর্তমান অনুভূতি কেমন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানের অনুভূতি সত্যিই ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়। কারণ প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস আমাদেরকে মসজিদে নববিতে নিয়ে যায়। সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায়, প্রতিনিয়ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারত এবং বিশ্বের বিখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের দরসে (আলোচনার অনুষ্ঠানে) অংশগ্রহণ করার সুযোগ আমার জীবনে এক অন্যরকম অনূভুতির জন্ম দিচ্ছে।তিনি আরো বলেন, ‘মিসরে থাকাকালীন সময়ে এবং বর্তমানে মদিনাতেও দেখি বিশ্বের অনেক দেশের ছাত্ররা এটা জানে না যে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। বাংলাদেশি ছাত্রদের প্রতি তাদের সম্পর্কও সেরকম উন্নত ছিল না। তারা যখন দেখে যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভালো পারফর্ম করছে, এক্সামে ভালো করছে, প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে তখন তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করছে।
মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের ১৮২ দেশের সাড়ে ৪ লক্ষ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। বিশ্বসেরা দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র হওয়ার পাশাপাশি ভালো ফলাফল করতে পেরে সত্যি উচ্ছ্বাসিত।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও স্বপ্নহাফেজ তারেক মাহমুদ তাঁর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘পৃথিবীর বুকে সত্যিকারের একজন বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও মুফতি হওয়া। যাতে করে আমাদের জাগতিক যাবতীয় বিষয়ের মাসয়ালাগত জটিলতা সুন্দর নির্ভুল ও শান্তিপূর্ণ সমাধান করে ভ্ৰাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি।
সারা দুনিয়ায় ইসলামের নূরকে সম্প্রসারিত করে নানান ধর্ম ও কর্মের মানুষগুলোকে সঠিক জীবনব্যবস্থা অনুধাবনে আগ্রহী করে তোলার এবং ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আনার যোগ্যতা অর্জন করতে পারি।
সে লক্ষ্যে আল-আজহার ও মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণায় আগ্রহী তরুণ কণ্ঠশিল্পী হাফেজ তারেক মাহমুদ।
একাধারে কুরআনের হাফেজ, কণ্ঠশিল্পী, সংগঠক ও আলোচক হওয়ার পাশাপাশি পড়ালেখায়ও পিছিয়ে নেই এ তরুণ। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কণ্ঠশিল্পী হাফেজ তারেক মাহমুদ তরুণ শিক্ষার্থীদের জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণা।
এমএমএস/এসইউ/পিআর