দেশজুড়ে

সোনালি আঁশের রুপালি কাঠিতে আশার আলো

সোনালি আঁশ পাটের জন্য বিখ্যাত ফরিদপুর জেলা। গুণে ও মানে দেশসেরা এ জেলার পাট। তবে আগে পাটের দুর্দিন গেলেও এখন পাটের সুদিন চলছে। কারণ পাটের আর কোনো কিছুই এখন ফেলনা নয়। আগে পাটকাঠি অবহেলা করে ফেলে দেয়া হতো। কখন আবার রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া কিংবা পানের বরজের ছাউনি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববাজারে পাটকাঠির ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। আর তাই সোনালি আঁশের রুপালি কাঠিতে আশার আলো দেখছে এই জেলার কৃষকেরা।

Advertisement

ফরিদপুরের পাট চাষিরা চাহিদা অনুপাতে পাটের ভালো দাম না পেলেও এই মৌসুমে সোনালি আঁশের কাঠিতে তা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন। জেলার বোয়ালমারী, মধুখালী, সালথা, নগরকান্দা, ভাঙ্গা, সদরপুর ও ফরিদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার চাষিরা পাট ঘরে তোলার পাশাপাশি পাটের কাঠি আগের মতো অবহেলায় ফেলে না রেখে যত্ন করে শুকিয়ে গুছিয়ে রাখছেন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার আলিয়াবাদ এলাকার পাট চাষিরা জানান, গত কয়েক বছর আগেও পাটকাঠির তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন এর বেশ চাহিদা। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটের এই রুপালি কাঠি কিনে নিচ্ছেন, ভালো দামও দিচ্ছেন। একশ মোটা পাট কাঠি বিক্রয় হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়।

তারা বলেন, পাটের আবাদে যে খরচ তা শুধু পাট বিক্রয় করে হয় না। নতুন করে পাটের এই কাঠি আমাদের আশা যুগিয়েছে।

Advertisement

বোয়ালমারীর সাতৈর এলাকার চাষি সিদ্দিকুর শেক, তবিবুর মাতুব্বরনহ বেশ কয়েকজন পাট চাষি জানান, এই পাটকাঠি এক সময় রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজের ছাউনির কাজে ব্যবহৃত হত। কিন্তু এখন এই রুপালি কাঠি দেশের পার্টিকেল বোর্ড তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাটকাঠির ছাই বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তাই ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

পাট কাঠিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু কারখানা গড়ে উঠেছে। একদিকে সোনালি আঁশ অন্যদিকে রুপালি কাঠি দুটি মিলে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে পাট উৎপাদনে বলে মনে করেন ফরিদপুর চেম্বার অব কর্মাসের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান।

তিনি বলেন, চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাটকাঠির ছাই থেকে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচা মাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণেই দিন দিন পাটকাঠির চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অনেক ভালো বিষয়।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, পাটের দাম একটু কম থাকাতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে তাদের জন্য পাট কাঠিটা বিক্রি করে লোকসান পুষিয়ে নেয়া সম্ভব। এখন ফরিদপুর, বরিশাল, দাউদকান্দি, ভোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টিকেল বোর্ড কারখানায় এ কাঠি ব্যবহৃত হচ্ছে।

Advertisement

তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় ৮২ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরে চেয়ে বেশি।

জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের লংকারচর গ্রামের পাট কাঠি ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার শেখ বলেন, গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে আমি পাটকাঠির মৌসুমের সময় তা ক্রয় করে পরে পাইকারি দরে বিক্রয় করি। ব্যবসায়ীরা মধুমতি নদী দিয়ে আমাদের এলাকার পাটকাঠি বড় বড় নৌকা ও ট্রলারে করে নিয়ে যায়। আমার এই ব্যবসা দেখে ঘোষপুর এলাকার অনেকেই এখন পাটকাঠির ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, জেলা ব্র্যান্ডিং পণ্যে (সোনালি আঁশ) বহুবিধ ব্যবহার কিভাবে করা যায় সেটা আমরা খুঁজে দেখছি। পাটের রুপালি কাঠি এখন কৃষকের নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা জেলার প্রতিষ্ঠিত পাটকলের মালিক ও ফরিদপুরের চেম্বারের নেতৃবৃন্দর সঙ্গে কিভাবে পাটের আরও বেশি ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে কাজ করার জন্য কথা বলেছি।

আরএ/পিআর