মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে মাহাথির নায়ক হলে আনোয়ার মহানায়ক। পাকাতান হারাপান প্রার্থী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম পোর্ট ডিকসনের উপ-নির্বাচনে ২৫ হাজার ৪০৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলে ভোট গণনা।
Advertisement
৩১ হাজার ১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। পিএএস প্রার্থী লেট-কোল (বি।) মোহাম্মদ নজরুরী মোখতার পেয়েছেন ৭ হাজার ৪৫৪ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তানশ্রী ইয়াশা সামাদ ৪ হাজার ২৩০ ভোট পেয়েছেন।
এছাড়া লাউ সেক ইয়ান (২১৪), কান চেই ইউয়েন (১৫৪) এবং মোহাম্মদ সাইফুল বুখারী আজলান (৮২) ভোট পেয়েছেন। পোর্ট ডিকসন নির্বাচনের ফলে এমপি দাতুক আব্দুল্লাহ পদত্যাগ করেন, যিনি আনোয়ারের পক্ষে সংসদে ফিরে আসার পথ বেছে নেন।
পোড় খাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আনোয়ার ইব্রাহিম। দীর্ঘ সংগ্রামের পর সফল হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। আবার সেই মাহাথির মোহাম্মাদের হাত ধরেই দেশের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন পালাবদলের।
Advertisement
মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আবার সক্রিয় হয়েছেন রাজনীতিতে। শনিবার তাই নতুন এই ক্ষেত্রে প্রথম পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে বিজয়ী হয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তার জন্য প্রতিশ্রুতি অনুসারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পথ প্রস্তত হলো। দেশটির মূলধারার রাজনীতিতে আবার শুরু হবে আনোয়ার যুগ।
উপকূলীয় আসন পোর্ট ডিকসনের এই নির্বাচনে সকল আগাম হিসাব-নিকাশে আনোয়ার ইব্রাহিকেই সম্ভাব্য বিজয়ী বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। তবে পরে সমালোচকদের জবাব দিতে তাকে জোরালো ম্যান্ডেন্ট হাজির করতে হয়েছে। সমালোচকরা বলেন, মাহাথিরের কাছ থেকে দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি বেশ তাড়াহুড়ো করছেন। পাঁচ মাস আগে তিনি কারাগার থেকে বের হয়েছেন।
গত মে মাসের নির্বাচনে এই আসনে যিনি জয়ী হয়েছিলেন তার ভোটের ব্যবধান ছিলে ১৭ হাজারের বেশি। মূলত আনোয়ারকে পার্লামেন্টে যাওয়ার সুযোগ করে দিতেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। রাজনৈতিক ঝুঁকিবিষয়ক পরামর্শ প্রতিষ্ঠান ভিরিয়েন্স অ্যান্ড পার্টনারসের বিশ্লেষক আদিব জালকাপলি বলেন, বড় ব্যবধানে জয়ী হলে দায়িত্ব নেয়া তার পক্ষে সহজ হবে। যেটির জন্য তিনি ২০ বছরের বেশি অপেক্ষা করেছেন।
গত মে মাসের একাদশ নির্বাচনে পাকাতান হারাপান জোট ক্ষমতায় আসে। এতে ৬১ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বারিসন ন্যাশনাল জোট ক্ষমতাচ্যুত হয়।এক সময় মাহাথির সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম। আবার মাহাথিরের প্রতিহিংসার শিকার হয়েই তাকে কারাগারে যেতে হয় সমকামীতার অভিযোগে। যদিও সেই অধ্যায়কে পেছনে ফেলে গত নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের দলের সাথেই যুক্ত হয়েছিলেন মাহাথির মোহাম্মাদ।মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে মাহাথির নায়ক হলে আনোয়ার মহানায়ক।
Advertisement
কারণ দেশের মানুষের চোখ আসলে আনোয়ার ইব্রাহিমের দিকে। মিত্র থেকে শত্রুতে পরিণত হওয়া মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহিম আবার বৈরিতা ভুলে এসেছেন পাশাপাশি মঞ্চে। রাজ ক্ষমায় মুক্তি পেয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। মাহাথির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের পরই জানিয়েছিলেন রাজার সঙ্গে আনোয়ারের মুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুতই তিনি মুক্তি পাবেন। বাস্তবেও হয়েছে তাই।
মুক্তি পেয়ে এখন রাজনীতির মূল ধারায় আনোয়ার। এখন দুই নেতা কিভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রেখে এগিয়ে যান তা দেখার বিষয়। এই দুই নেতার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত কয়েক বছরে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও দেশটি ডুবে গেছে ঋণের মধ্যে। নাজিব রাজাকের শাসন আমলে বিভিন্ন প্রকল্পে বড় অঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই জায়গা থেকে দেশটিকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি মাহাথির মোহাম্মদ দিয়েছিলেন নির্বাচনী প্রচারণায়।
পাকাতান হারাপান জোটের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহীদের একই পদে দুই বারের অধিক নির্বাচন বন্ধ করা, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বাজেট অর্ধেকে নামিয়ে আনা, নির্বাচন কমিশনকে পার্লামেন্টের অধীনে আনা, গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিটিএস) সংস্কার, বিরোধী দলের নেতার সাংবিধানিক মর্যাদা বাড়ান, আগামী তিন বছর উন্নয়ন বাজেটের অর্ধেক দরিদ্র ৫ অঞ্চলে ব্যয় করা, বিদেশিদের বরাদ্দ দেয়া বড় বড় প্রকল্পের বিষয়ে নতুন করে তদন্ত করা; দুর্নীতির তথ্যদাতাদের জন্য আইনি শূরা বাড়ানো প্রভৃতি।
এছাড়া ছিল তথ্য স্বাধীনতা আইন কার্যকর করা, আগামী এক দশকের মধ্যে মালয়েশিয়াকে শীর্ষ দশ ‘কম দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশে অন্তর্ভুক্ত করা, ন্যূনতম মজুরি ৫০ শতাংশ বাড়ানো, স্বল্প ব্যবহারকারীদের জন্য পেট্রলে ভর্তুকি, তেল উত্তোলনকারী রাজ্যগুলোর পেট্রোলিয়াম রয়্যালটি ২০ শতাংশে উন্নীত করা, রিঙ্গিতের মুদ্রা মান তিন বছরের মধ্যে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
এমআরএম/আরআইপি