প্রবাস

‘শরণার্থী’ সমস্যায় জার্মানি, বাংলাদেশও

‘শরণার্থী’ সমস্যায় রয়েছে ইউরোপের দেশ জার্মানি পাশাপাশি বাংলাদেশও। একজন ব্যক্তি যখন নিজ ভূমি ছেড়ে অন্য দেশে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করেন তখন তাকে শরণার্থী বলা হয়। জাতিগত সহিংসতা, ধর্মীয় উগ্রতা, জাতীয়তাবোধ, রাজনৈতিক আদর্শগত কারণে সমাজবদ্ধ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তাহীনতাই এর প্রধান কারণ।

Advertisement

সম্প্রতি ‘মাইগ্রেশন- চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড অ্যাপ্রোচেস ইন দ্য ইস্ট অ্যান্ড দ্য ওয়েস্ট’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী এবং ডয়চে ভেলের এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ।

ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক ইনেস পোল বলেন, ‘প্রধানত সিরিয়া থেকে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থী জার্মানিতে আশ্রয় নিয়েছেন। শুরুর দিকে সব ঠিক থাকলেও পরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এর পেছনে প্রধানত দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, একটি সমাজে অন্য সংস্কৃতির এত মানুষকে একীভূত করা খুব কঠিন একটা কাজ। দ্বিতীয়ত, অনেকের মনে উগ্রপন্থা ছড়িয়ে পড়ার ভয়ও ঢুকে গেছে।’

‘ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরেই এ ধরনের চুক্তিতে আসার চেষ্টা করছে জার্মানি। যারা এরই মধ্যে অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন, তাদের সেসব দেশে এই চুক্তি অনুযায়ী ফেরত পাঠাতে পারবে জার্মানি।’

Advertisement

তাই চুক্তি অনুযায়ী এখন এথেন্সকে তাদের দেশে আশ্রয়ের আবেদন করেও অস্ট্রিয়া সীমান্ত পার হয়ে জার্মানিতে ঢুকে পড়া শরণার্থীদের ফেরত নিতে হবে। তবে বিনিময়ে এথেন্স কী পাবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

ইনেস পোল ঢাকায় অভিবাসন সঙ্কট নিয়ে আলোচনায় এই মত তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশেও শুরুতে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানালেও, এখন সামাজিক-রাজনৈতিক নানা কারণে বিরুদ্ধ মনোভাব তৈরি হয়েছে।

ইনেস পোলের সঙ্গে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে আসা ডয়চে ভেলের এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ এ বিষয়ে বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাবার হিসেবে চাল, ডাল ও তেল দেয়া হয়। কিন্তু কোনো ধরনের মাছ বা মাংস তারা পায় না। ফলে কিছু চাল-ডাল স্থানীয় বাজারে অল্প দামে বিক্রি করে তারা সে টাকা দিয়ে মাছ-মাংস কেনে। ফলে সেই অঞ্চলে এক ধরনের সমান্তরাল অর্থনীতির সৃষ্টি হয়েছে।’

পাশাপাশি, ক্যাম্প অঞ্চলে স্থানীয় বাংলাদেশিদের তুলনায় রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্থানীয়রাই সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন বলে মনে হয়েছে তার। ফলে স্থানীয়রা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও মনে করেন দেবারতি।

Advertisement

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আনুষ্ঠানিকভাবে ‘শরণার্থী’ স্ট্যাটাস না দেয়ায় অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন পোল। তিনি বলেন, ‘এখানে সবাই মনে করছে রোহিঙ্গারা খুব স্বল্প সময়ের জন্যই বাংলাদেশে থাকবে।’ এমন দৃষ্টিভঙ্গি রোহিঙ্গাদের জন্য ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে তৌফিক ইমরোজ খালিদী এমন অবস্থা সৃষ্টির জন্য দায়ী করেন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে। একদিকে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগে ব্যর্থতা, অন্যদিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির দেউলিয়াত্বের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের সঙ্গে জানুয়ারি মাসে চুক্তি হলেও এখনো কোনো প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। বাংলাদেশ আট হাজার শরণার্থীর তালিকাও দিয়েছে মিয়ানমারকে। কিন্তু মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার পরিস্থিতিই এখনো সৃষ্টি হয়নি। মিয়ানমার সত্যিকার অর্থে চালায় ইউনিফর্মধারীরা (সেনাবাহিনী)। এবং তাদের আইনের শাসন সম্পর্কে ন্যূনতম শ্রদ্ধা নেই।’

সূত্র: ডিডাব্লিউ/এমআরএম/জেআইএম