একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দৌঁড়ে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী দাবড়িয়ে বেড়ালেও মাঠে নেই বিএনপি। দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় দেখা দিলেও সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন ভিপিসহ বেশ কয়েজন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতা মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
Advertisement
ফেনী-২ আসন একটি মাত্র উপজেলা ফেনী সদর নিয়ে গঠিত। এ আসনের আয়তন ২২৬ দশমিক ১৯ বর্গকিলোমিটার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৬৮৪ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এদের মধ্যে এক লাখ ৭৯ হাজার ৫২৭ জন পুরুষ ও এক লাখ ৬৮ হাজার ১৫৭ জন নারী ভোটার। নির্বাচনে এ আসনে ১২৬ ভোটকেন্দ্র ও ৬৩৮ ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালা ও ফেনীর উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালনে বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে ফের মনোনয়নের সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। তিনিও সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগ সরকাকে পুনরায় নির্বাচনে জয়লাভ করার লক্ষে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। তার সমর্থকদে মতে, নিজাম হাজারীর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ‘ডেইলি অবজারভার’ সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে ২০০৮ সালে মহাজোট থেকে এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হলেও চারদলীয় জোটের বিএনপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত আইডিতে একাধিকবার লাইভ করে বলেছেন, তিনিই আগামীতে দলের হাল ধরবেন এবং নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাবেন বলে প্রত্যাশা করছেন। তবে এ সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
Advertisement
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আজিজ আহাম্মদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আকরামুজ্জামান, ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আ ক ম সাহেদ রেজা শিমুল ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পদক সাইফুদ্দিন নাসির মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে দলীয় অন্তঃকোন্দলে জর্জরিত বিএনপির পরিস্থিতি অনেকটা নাজুক। জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিনের (ভিপি জয়নাল) নেতৃত্বাধীন একটি বলয় এবং সাবেক সভাপতি প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী রেহানা আক্তার রানুর নেতৃত্বাধীন একটি পৃথক বলয় মাঠে সক্রিয় রয়েছে। একটি সাংবাদ সম্মেলনে দুইজন তাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই বলে ঘোষণা দিলেও কার্যত এক হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ আসন থেকে তিনবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদিন ছাড়া এখনও এ আসনে ‘ধানের শীষের’ টিকিট পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা অন্য কারোরই নেই।
এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেত্রী রেহানা আক্তার রানু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি গাজী মানিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন।
নির্বাচনে জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টি থেকে দলটির জেলা কমিটির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান এম এম ইকবাল আলমগীর নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
Advertisement
ঢাকা মহানগর যুবদলের দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমি এলাকার সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে দলীয় কর্মসূচিগুলোতে অংশগ্রহণ করছি। মনোনয়ন পাব এ আশায় এলাকায় অবস্থান করছি। যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়েছি। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ‘গ্রীন সিগন্যাল’ পেয়ে ফেনী সদর আসনে বিএনপিতে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমি আশা করি ফেনীর বিএনপির রাজনীতিতে আগামী দিনে বড় কাণ্ডারি হিসেবে অবতীর্ণ হবো। আমাকে মনোনয়ন দেয়ার পর বিপুল ভোটে ম্যাডাম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে এ আসন উপহার দেব ইনশাআল্লাহ।
ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদিন (ভিপি) বলেন, আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন এবং মনোনয়ন পাবেন বলেও তিনি শতভাগ আশা করেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অতীতের মতো তিনি এ আসন থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলেও দাবি করেন জয়নাল আবেদিন।
বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী জাগো নিউজকে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথ অভিযানে সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন হাজারী ফেনী ছেড়ে পালিয়ে যান। এর কয়েক বছর পর দলের নেতাকর্মীরা তাকে দলের দায়িত্ব দেয়। তার সময়ে তিনি ফেনী জেলাকে শান্তির জনপদে পরিণত করেছেন। যে কারণে গতবার তাকে মনোনয়ন দেয়ায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও দলের মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি আশা করছেন তিনি। তবে কেন্দ্র থেকে দল যাকে মনোনয়ন দেবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করে ওই প্রার্থীকে বিজয়ী করবে। এ ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেও তিনি মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান বলেন, ফেনীর মানুষের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তিনি ফেনীতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশের মতো ফেনীতেও ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। ফেনীকে শান্তির জেলা হিসেবে পরিণত করা এবং চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন তিনি। দল তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করবেন।
রাশেদুল হাসান/এমএএস/জেআইএম