খেলাধুলা

এবার ফিক্সিংয়ের অভিযোগ নেইমারদের ম্যাচ নিয়ে

ফিক্সিংয়ের কালো থাবা ফুটবলে ছিল অনেক আগে থেকেই। তবে ফিফাসহ ফুটবলের সংস্থাগুলোর কঠোর আইন ও নীতির কারণে অনেকটাই কমিয়ে আনা গেছে। তবুও থেমে নেই ফিক্সিং। এবার সেই ফিক্সিংয়ের গুরুতর অভিযোগ উঠলো খোদ ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার ডি সিলভার জুনিয়রের ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের খেলা একটি ম্যাচ নিয়ে। যেন-তেন কোনো ম্যাচে ছিল না সেটা। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে। তবে অভিযোগটা উঠেছে, পিএসজির প্রতিপক্ষ রেড স্টার বেলগ্রেডের বিপক্ষে।

Advertisement

ইউরোপসহ পৃথিবীর নানা দেশেই জুয়া বৈধ। তবে তা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্যারিসের পার্ক ডি প্রিন্সেসে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ অক্টোবর সার্বিয়ান ক্লাব রেড স্টার বেলগ্রেডের মুখোমুখি হয়েছিল পিএসজি। ওই ম্যাচে সার্বিয়ানদের ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল নেইমার-কাভানিরা। জুয়ার নিয়ন্ত্রণকারী একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পিএসজি-রেড স্টারের ম্যাচ নিয়ে ৫০ লাখ ইউরোর লেন-দেন হয়েছিল। সেখানে শর্ত ছিল রেড স্টার বেলগ্রেডকে অন্তত ৫ কিংবা তার বেশি গোলে হারতে হবে।

পিএসজির ওই ম্যাচ নিয়ে জুয়ার অস্বাভাবিক লেন-দেন চোখে পড়ার পরই ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে। এরপরই অবশ্য ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ ম্যাচটি নিয়ে তদন্তে নেমে পড়েছে। তার আগেই ইউরোপিয়ান ফুটবল কর্তৃপক্ষ উয়েফা সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে ফ্রান্স ন্যাশনাল ফাইনান্সিয়াল প্রসিকিউটরস অফিসে (পিএনএফ)। কারণ, জুয়ার ওই লেনদেনই বলে দিচ্ছে, সম্ভবত ম্যাচের ফলাফলে তা প্রভাব ফেলেছে।

ফ্রান্সের এল’ইকুইপে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, ৫০ লাখ ইউরো লেনদেনের বিষয়ে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞসাবাদও করা হয়েছে। শুক্রবার পিএনএফ এপিকে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে, তারা ফিক্সিংয়ের অভিযোগ তদন্তে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে। তবে এর চেয়ে বেশি কোনো তথ্য দিতে তারা অপারগতা প্রকাশ করে।

Advertisement

এল’ইকুইপে এটাও জানাচ্ছে যে, ৩ অক্টোবর ম্যাচের আগেরদিনই পিএনএফসে সম্ভাব্য ফিক্সিংয়ের বিষয়ে তথ্য জানিয়েছিল উয়েফা। অভিযোগ রয়েছে, ম্যাচের আগেরদিন বিকেল থেকে রাতের মধ্যে রেড স্টার বেলগ্রেডের কয়েকজন ফুটবলারের কথাবার্তা এবং আচরণ সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। এছাড়াও বলা হচ্ছে, ওই রাতেই বেলগ্রেডের কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল পিএসজির সিইও এবং চেয়ারম্যান নাসের আল খেলাইফির সঙ্গে। যদিও শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি আর অনুষ্ঠিত হয়নি।

শুক্রবার ফ্রান্স দৈনিক এল ইকুইপে পত্রিকার ওয়েবসাইটে ফিক্সিংয়ের এই ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর নেইমারের ক্লাব পিএসজি বাধ্য হয়েছে এ নিয়ে কথা বলতে। শুক্রবার দেয়া এক বিবৃতিতে পিএসজি বলেছে, ‘এটা খুব হতাশাজনক যে, পিএসজি জেনেখে, এল ইকুইপে ওয়েবসাইটে শুক্রবার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে লেখা হয়েছে পিএসজি-রেড স্টার বেলগ্রেড ম্যাচটিতে নাকি ফিক্সিং হয়েছিল। তবে সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডটা পরিচালিত হয়েছে বেলগ্রেড থেকে। জুয়াড়িরা সেখান থেকেই জুয়া ধরেছে বলে জানা গেছে।’

পিএসজি জানাচ্ছে, তারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষাভাবে এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কখনোই জড়িত নয়। শুধু তাই নয়, ন্যাশনাল ফাইনান্সিয়াল কোর্ট যদি এ নিয়ে কখনো কোনো কিছু জানতে চায় আমাদের কাছ থেকে তাহলে আমরা বিনা দ্বীধায় তাদেরকে যে কোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি।

পিএসজি সেই ফিক্সিংয়ের অভিযোগ সম্পর্কে বলেছে, ‘ক্লাব চায় এই অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। পিএসজি তাদের সুনামের কোনো ক্ষতি হয় কোনো কিছুর সঙ্গে বিন্দু পরিমাণ বরদাস্ত করবে না। সর্বশেষ এটাও আমরা বলতে চাই, ক্লাব যে কোনো সময় যে কারও বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ারও ক্ষমতা সংরক্ষণ করে। যদি ক্লাবের বিরুদ্ধে কেউ কখনও বাজে মন্তব্য করে কিংবা দুর্নাম ছড়াতে চায়।’

Advertisement

রেড স্টার বেলগ্রেডের পক্ষ থেকেও ফিক্সিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এল ইকুইপে পত্রিকার পক্ষ থেকে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ড্রাগন জাযিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি সম্পূর্ণ বিষয়টা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রথম আমি এমন অভিযোগের কথা শুনলাম। সত্যিই আমি এ ধরনের কিছু শুনিনি। এটা কখনোই সম্ভব নয়। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

রেড স্টারের ডেপুটি মুখপাত্র নেবোজা তোদোরোভিক এএফপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এ নিয়ে মন্তব্য করার আসলে কোনো রাস্তাই খোলা নেই আমার সামনে।’ এএফপির পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল সার্বিয়া ফুটবল ফেডারেশনের মুখপাত্র মিলান ভুকোভিকের সঙ্গে। কিন্তু ফিক্সিংয়ের বিষয়ে একটি বক্তব্যও নেয়া সম্ভব হয়নি তার কাছ থেকে।

আইএইচএস/আরআইপি