জাতীয়

পঁচাত্তরের সেই সকালে কিশোরগঞ্জে বিক্ষোভ করেছিলেন যারা

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে স্বপরিবারে হত্যার পর সারাদেশে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। ঢাকার আঁচ লাগে কিশোরগঞ্জেও। কিন্তু নির্ভীক-সাহসী কিছু যুবক তখনও ছিল জেগে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা কিশোরগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এটি ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশে প্রথম প্রতিবাদ।  মিছিলটি শহরের রঙমহল সিনেমা হল এলাকার জেলা ছাত্র ইউনিয়ন কার্যালয় থেকে শুরু করে পুরান থানা, বড়বাজার, গৌরাঙ্গ বাজার, রথখলা, আখড়াবাজার, কালীবাড়ি হয়ে  ছাত্র ইউনিয়ন কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। এরই মধ্যে ছুটে আসে পুলিশের গাড়ি। যে যার মতো দ্রুত এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিশোরগঞ্জের রাস্তায় সেদিন যারা প্রতিবাদ করেছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই বেঁচে নেই। কেউবা জীবন সায়াহ্নে কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন। তাদেরই একজন কিশোরগঞ্জ জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি এ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন জানান, সারাদেশে তখন ভীতিকর অবস্থা। কিন্তু আমাদের বিবেক নাড়া দেয়। এ হত্যার প্রতিবাদ করতে হবে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মিছিলে যোগ দেই। সে দিনের মিছিলে যোগদানকারী এ্যাডভোকেট অশোক সরকার বলেন, আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্র ও যুব নেতা রঙমহল সিনেমা হলের কাছ থেকে প্রতিবাদ মিছিলটি বের হয়। ‘মুজিব হত্যার বিচার চাই, ‘ মুজিব হত্যার পরিনাম, বাংলা হবে ভিয়েতনাম’ ইত্যাদি শ্লোগান ছিল মিছিলে। তিনি জানান, ‘মিছিল শেষ করার সাথে সাথেই পুলিশের ট্রাক ছুটে আসে। আমরা যে যার মতো পালিয়ে যাই।’বর্তমানে বাম রাজনীতিক হাবিবুর রহমান মুক্ত, পিযুষ কান্তি সরকার ও রাখাল দেবনাথ বলেন, জাতির জনককে হত্যার পর কিশোরগঞ্জে প্রতিবাদ মিছিলটি ছিলো তাৎক্ষনিক ও স্বত:স্ফুর্ত। হত্যার প্রতিবাদ করায় আমাদের অনেককেই গ্রেফতারি পরোয়ানা, হুলিয়া নিয়ে দিনের পর দিন পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। তবে আদালতে বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচার হয়েছে। এখন আমাদের একটাই চাওয়া, সাজা পাওয়া বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। একই সাথে মানবতাবিরোধী সকল অপরাধীদের বিচার শেষ হবে- জাতীয় শোক দিবসে এমনটাই চাওয়া তাদের।ঐ সময়ে মিছিলে অংশ নেয়া আকবর হোসেন। অসুখে-বিসুখে ভুগে কিছুদিন আগে তার মৃত্যু হয়েছে। যারা বেঁচে আছেন এখনও, জীবন সায়াহ্নে তারা চান, বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিদেশের মাটি থেকে ধরে এনে আদালতের রায় কার্যকর করা হোক। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা রাজপথে নেমেছিলেন, স্বাধীনতার এতোটি বছর পরও তাদের ভাগ্যে জোটেনি সরকারি স্বীকৃতি কিংবা সম্মাননা। তবে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত ১৩ আগস্ট কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবে তাদের কয়েকজনকে সম্মাননা দিয়েছিল সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন। এ সময় তাদের হাতে হাতে সম্মাননা তুলে দেন জেলা পরিষদের প্রশাসক এ্যাড. মো. জিল্লুর রহমান। এ সময় অনেকের চোখে ছিল প্রাপ্তির আনন্দ আর প্রিয়জন হারানোর বেদনা।নূর মোহাম্মদ/এআরএস

Advertisement