পাঁচ টাকায় দুপুরের খাবার! তাও আবার মাছ-মাংসে। সঙ্গে ভর্তা, সবজি, ডালও মিলছে। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে! হওয়ারই কথা। বাজারমূল্য যখন ঊর্ধ্বগতি, রেস্টুরেন্টে বসলেই যখন শত টাকার পকেট কাটা, তখন পাঁচ টাকায় খাবার! কে বিশ্বাস করে?
Advertisement
আরও পড়ুন >> দিনে ১২ লাখ লিটার পানির শোধন প্রাণ এ্যাগ্রোতে
হ্যাঁ, পাঁচ টাকাতেই দুপুর বা রাতের খাবার মিলছে নাটোরের প্রাণ ফ্যাক্টরিতে। শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা সবাই পাঁচ টাকায় খাবার খেতে পারেন ফ্যাক্টরির ক্যাফেটেরিয়ায়। খাবারেও সন্তুষ্ট প্রাণ পরিবারের সদস্যরা। একদিন মাছ তো অন্যদিন মাংস। ডাল থাকছে নিত্যদিন। আর ভাজি বা ভর্তার কোনো একটি পছন্দ মতো।
মূলত, শ্রমিকদের কল্যাণেই স্বল্পমূল্যে এই খাবারের ব্যবস্থা। পাঁচ টাকার পরিবর্তে বিনামূল্যেও খাবারের ব্যবস্থা করতে পারতেন প্রাণ কর্তৃপক্ষ- এমন প্রশ্নও জাগতে পারে যে কারও মনে। কিন্তু খাবারে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতেই পাঁচ টাকার এই ব্যবস্থা। বিনামূল্যে খাবার খেয়ে শ্রমিকরা যেন হীনম্মন্যতায় না ভোগেন, সে জন্যই সামান্য অর্থ নেয়া।
Advertisement
আরও পড়ুন >> হাজার কৃষকের সফল গল্পের কারিগর প্রাণ এ্যাগ্রো
গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রাণ এ্যাগ্রো লিমিটেডের ক্যাফেটেরিয়ায় দুপুরে রুই মাছ দিয়ে খাবার খাচ্ছিলেন আবু বকর। ২০১২ সাল থেকে এই ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন। বলেন, প্রাণ তো আমাদেরই প্রতিষ্ঠান। আমরা ভালো থাকলে কারখানাও ভালো থাকবে। এ কারণে কর্তৃপক্ষ দুপুর বা রাতে মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে খাবারের ব্যবস্থা করেছে। খাবার নিয়ে কারও কোনো আপত্তি নেই। প্রতিদিন মাছ অথবা মাংস থাকবেই। যার যেটা ইচ্ছা, সেটাই খেতে পারেন।
আরও পড়ুন >> প্রাণ ডেইরি থেকে স্বপ্নবুনন, সফল নারী হাওয়া বেগমের গল্প
আবু বকর বলেন, আমাদের সঙ্গে স্যারেরাও (ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা) খাবার খেয়ে থাকেন প্রতিদিন। খাবার টেবিলে কোনো ভেদাভেদ নেই। ক্যাফেটেরিয়ায় সবাই সমান। এটিই বড় আনন্দের বিষয়।
Advertisement
এদিন ফ্যাক্টরির প্রাণ মসলা বিভাগে শিফট ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করছিলেন মোছাম্মত শিউলি। বলেন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার বাইরেও প্রতিটি ফ্লোর বা বিভাগে খাবার পরিবেশন হয়। দর একই। পাঁচ টাকায় খাবার! শুনলে অনেকেই অবাক হন। কিন্তু এটিই সত্য। আমরা পাঁচ টাকা দিয়েই খাবার কিনে খাই। এতে খাবারে যেমন নিজের অংশগ্রহণ থাকছে, আবার সাশ্রয়ও মিলছে।
আরও পড়ুন >> স্বপ্নডানা মেলছে আমজাদ খান চৌধুরী মেমোরিয়াল হাসপাতাল
‘একেবারে ফ্রি খাচ্ছি না বলে নিজের কাছে খারাপ লাগে না’- যোগ করেন তিনি। প্রাণ কারখানার জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কাদের সরকার বলেন, এখানে শ্রমিকের স্বার্থই আগে। শ্রমিক ভালো থাকলে কারখানা ভালো থাকবে- এটিই প্রাণ কোম্পানির নীতি। পাঁচ টাকায় দুপুর বা রাতের খাবার পরিবেশন হয় সবার জন্য। খাবারে সবার অংশগ্রহণ রাখতে সামান্য এই টাকা নেয়া।
খাবারের মান নিশ্চিতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কারখানা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকি হয়। শ্রমিকদের সঙ্গে সকল কর্মকর্তা খাবার গ্রহণ করেন। দিন দিন কারখানার সমৃদ্ধি ও সাফল্যের মূল মন্ত্র মূলত এখানেই।’
আরও পড়ুন >> অজপাড়া গাঁয়ের নারী শ্রমিকরাও টাকা তোলেন বুথ থেকে
প্রসঙ্গত, নাটোরের একডালায় ৯৩ বিঘা জমির উপর নির্মিত প্রাণ এ্যাগ্রো লিমিটেড। বর্তমানে এখানে আট হাজার শ্রমিক কর্মরত। যার ৮০ ভাগই নারী শ্রমিক।
এএসএস/এমএআর/বিএ/এমএস