জাতীয়

পরিবেশ দূষণ : বাংলাদেশে এক বছরেই ২ লাখ ৩৪ হাজার মানুষের প্রাণহানি

২০১৫ সালে বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণজনিত কারণে ২ লাখ ৩৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ হাজার মানুষ মারা গেছে শহর এলাকায়। এ সংখ্যা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যার দশগুণ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এ তথ্য জানিয়েছে। শুক্রবার (১২ অক্টোবর) বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদে এক সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানানো হয়।

Advertisement

বাপার সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আব্দুল মতিন, যুগ্ম সম্পাদক ও শব্দ, বায়ু এবং দৃষ্টিদূষণ কমিটির সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, যুগ্ম সম্পাদক, মিহির বিশ্বাস, শরীফ জামিল, অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, শাহজাহান মৃধা বেণু প্রমুখ।

অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘দূষণ আমাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। ইটের ভাটা, পুরাতন গাড়ি, পানি, বায়ু ও শব্দদূষণ মানুষের বেঁচে থাকার স্বাভাবিক পরিবেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কার্বনের মতো বিষাক্ত গ্যাস আমরা প্রতিনিয়ত গ্রহণ করছি।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে একদিক থেকে বাতাস ঢোকে অন্যদিক দিয়ে বের হতে পারে না। এর কারণ সরু রাস্তা ও সুউচ্চ বিল্ডিং। যার ফলে বিষাক্ত গ্যাস, ধুলা-বালিযুক্ত বাতাস ঘুরে ফিরে মানুষের শরীরেই প্রবেশ করছে।’

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের যারা নীতিনির্ধারক আছেন তারা কোনো রকম দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই যেকোনো কাজ হুটহাট করে বসেন। সরকার ২০ বছরের পুরনো আইন দিয়েই বর্তমান পরিবেশ নীতি পরিচালনা করছে। এই আইন সেই সময়ের জন্যই প্রযোজ্য ছিল, বর্তমানে অকেজো। তাই সরকারকে অতিদ্রুত পরিবেশ আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী আইন করতে হবে।’

ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘বর্তমানে দেশের পরিবেশের যে সংকট তা বাপাকে ভাবিয়ে তুলেছে। প্রতিনিয়ত মারাত্মকভাবে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, দৃষ্টিদূষণসহ নানা সমস্যায় নিপতিত আজকের সামগ্রিক পরিবেশ।’

তিনি বলেন, ‘পরিবেশের যেকোনো সংকট সমাধানে সরকারের আগ্রহ সবসময়ই কম। আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের দৈন্যতা খুবই দুঃখজনক।’ তিনি আইন বাস্তবায়নে সরকারকে নীতিনিষ্ঠ ও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে এম সিরাজুল ইসলাম মোল্লা সাম্প্রতিককালের বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে। প্রায় এক দশক আগে বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছিল, বাংলাদেশে বছরে ১৫ হাজার মানুষ বায়ু দূষণজনিত কারণে মারা যায়। সেই বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণজনিত কারণে ২ লাখ ৩৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ হাজার মানুষ মারা গেছে শহর এলাকায়। এ সংখ্যা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যার দশগুণ।’

Advertisement

উল্লেখ্য, সড়ক দুর্ঘটনায় ওই বছরে বাংলাদেশে মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ২৮৬ জন এবং নানা রোগব্যাধিতে মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৪৩ হাজার। বায়ু দূষণজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা মোট মৃতের সংখ্যার প্রায় ২১ শতাংশ এবং সংখ্যায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৪০ জন, যা এক দশক আগের তুলনায় ১১ গুণেরও বেশি।

মিহির বিশ্বাস তার বক্তব্যে বলেন, ‘ঢাকা শহরকে একটি গ্যাস চেম্বার বললে বেশি বলা হবে না। ঢাকা শহরের প্রায় সব রাস্তাই বর্তমানে গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘লেড এক ধরনের একটি বিষাক্ত সিসা। এর মধ্যে অনেক বিষাক্ত গ্যাস রয়েছে। এগুলো বাতাসে মিলিত হয়ে বিষাক্ত গ্যাসে পরিণত হয়।’

তিনি শহরগুলোকে ডিসেন্ট্রালাইজড করা দরকার বলে মনে করেন। এ ছাড়া পরিবেশ আইনগুলো সরকারি নীতিনির্ধারকরা ফ্রিজিং করে রেখেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গত ১৬ সেপ্টেম্বরের বিশ্বব্যংকের একটি সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে আহম্মেদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘পরিবেশ দূষণজনিত কারণে বছরে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তা টাকার হিসেবে দাঁড়ায় ৫৪ হাজার কোটি। শব্দ, নদী, বর্জ্য, যানজট, জলবায়ু ও খাদ্যে ভেজালজনিত কারণে বিশ্বে ক্ষতির পরিমাণ ১৬ শতাংশ, এশিয়াতে ১৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশে ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।’

শরীফ জামিল বলেন, ‘যেকোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে হলে প্রথমেই গুরুত্ব দিতে হবে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে। তিনি আরও বলেন, যেখানে উন্নত দেশ কয়লাভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছে, সেখানে আমাদের সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করতে যাচ্ছে।’

তিনি সিটি গভর্নেন্স চালু ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এমএ/এসআর/এমএস