ঘূর্ণিঝড় তিতলির তীব্রতা কমে গেলেও প্রভাব কমেনি। ভারতীয় উপকূল অতিক্রম করার আগে বুধবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিতলির প্রভাবে কক্সবাজারে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। টানা বৃষ্টির ফলে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভারি বর্ষণ ও বাতাসে ঝুপড়ি ঘর এবং নড়বড়ে ঘর পড়ে যাওয়া ও রাস্তায় কাদার সৃষ্টি হওয়ায় এ দুর্ভোগে দেখা দিয়েছে। এতে দুই উপজেলার ৩০টি ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের ঝুঁকি মোকাবেলায় সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন।
Advertisement
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, সংকেত কেটে গেলেও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাব রয়ে গেছে। ফলে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে কক্সবাজারে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মাঝে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৪৫ মিলিমিটার। তিতলির প্রভাবে আরও দু-একদিন বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিতদের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে জমেছে কাদা-পানি। অনেকের ঘরের ভেতরও ঢুকে পড়েছে পানি। পাহাড়ের পাদদেশ সংলগ্ন আশ্রয়স্থলে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। ফলে অনেকেই ডায়রিয়ার আক্রান্ত হয়েছেন। গত দু’দিনে ঠান্ড, জ্বর, কাশি বেড়েছে। ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগও।
লেদা ক্যাম্পের পাহাড়ি অংশে অবস্থান নেয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর মংনিপাড়া থেকে আসা নুর জাহান বেগম জানান, পাঁচ শিশু নিয়েই তার পরিবার। ভারি বর্ষণের কারণে ভোগান্তির পাশাপাশি প্রাণহানির শঙ্কাও রয়েছে। একটু জোরে বাতাস হলেই নড়বড় করে ঝুপড়ি ঘরটি। পাহাড়ের উঁচুতে নেমে আসা পানি আটকানো গেলেও চারপাশের ভেজা ভাব ঘরের ভেতর স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা তৈরি করেছে। ফলে রাতে ঠিক মতো শোয়া যায় না। তাই বসে থেকে সময় কাটাতে হয়।
Advertisement
লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি আবদুল মতলব বলেন, বৃষ্টি হলে রোহিঙ্গা শিবিরের দুর্ভোগ বেড়ে যায়, শিবিরের ঝুপড়ি ঘরগুলো খুবই নড়বড়ে। রাস্তাগুলো কাঁচামাটির হওয়ায় কাদায় চলাচল কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ব্লকরে কালাচান বিবি জানান, এখানে রোদ-বৃষ্টি উভয় সময়ইে সমস্যা। একটু বাতাসসহ বৃষ্টি হলইে ঝুপড়ির ছাউনি দেয়া ত্রিপল উড়ে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। আবার রোদ প্রখর হলে গরমে ছোট-বড় সবার ত্রাহি অবস্থা।
শিবিরের এ-১১ ব্লকের মাঝি মো. রহিম বলনে, রোহিঙ্গা শিবিরে অধিকাংশ ঘর পাহাড় কেটে তৈরি করা, যা ঝুঁকিপূর্ণ। ভারি বৃষ্টিতে ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। এতে আশ্রিতদের কষ্টের শেষ নেই।
উখয়িা উপজলো নির্বাহী র্কমর্কতা (ইউএনও) নিকারুজ্জামান চৌধুরী ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রবিউল হাসান বলেন, বৃষ্টিতে দুর্ভোগ হলেও যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে সেদিকে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।
Advertisement
কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবদুস সালাম বলেন, বৃষ্টি ও রোদ মিলে আবহাওয়ার তারতম্যে ছোঁয়াছে কিছু রোগ দেখা দেয়। এগুলো স্বাভাবিক বিষয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ক্যাম্পে কাজ করা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও এনজিও গুলোকে আগে থেকে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা নির্যাতনের ফলে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। পুরনোসহ উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে সাড়ে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। উখিয়া-টেকনাফের দুই পাশে পাহাড় ও বন কেটে বসতি গড়েছে রোহিঙ্গারা। এর মধ্যে উখিয়ার বালুখালী, কুতুপালং, হাকিমপাড়া, টেংখালী, মধুরছড়া, শূন্যরেখা ও টেকনাফের পুটুবনিয়া, শালবাগান, জাদিমুড়ায় পাহাড়ের পাদদেশে অনেক রোহিঙ্গা এখনও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। ফলে বৃষ্টি হলে উদ্বেগ ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটে তাদের।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/পিআর