দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কিনা এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও ফেনী-১ আসনে তাকে ঘিরেই নির্বাচনী ছক আঁকছেন দলীয় নেতকর্মীরা। এ আসন থেকে খালেদা জিয়া পর পর ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ২০০১ সালের উপ-নির্বাচনে এ আসনটি তিনি ছোট ভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারকে ছেড়ে দেন।
Advertisement
২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় এ আসনটিতে সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার বিকল্প দেখছেন না দলীয় নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে প্রার্থী পরিবর্তন চায় সরকার দল আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথমে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান দলের জেলা শাখার সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপন। কিন্তু পরে জোটের শরিকদের আসন ছেড়ে দিলে তাকে বাদ দিয়ে জাসদের কেন্দ্রীয় নেত্রী শিরিন আক্তারকে মনোনয়ন দেয়া হয়। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এ আসনে দলীয় প্রার্থী চান। মহাজোট থেকে অন্য দলের প্রার্থী দিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই প্রার্থীর হয়ে ভোট যুদ্ধে নামবেন না বলেও একাধিক সভা-সমাবেশে বলেন।
ফুলগাজী পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া এ তিনটি উপজেলা নিয়ে ফেনী-১ আসনটি গঠিত। ৩৩৪ দশমিক ১৬ বর্গকিলোমিটারের এ আসনে এবার ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৩৫ ভোটার নির্বাচনে ভোট প্রদান করবেন। এদের মধ্যে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৬৬ পুরুষ ও এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৬৯ জন নারী ভোটার। এ আসনে ১০৬টি ভোট কেন্দ্র ও ৫৬৬টি ভোটকক্ষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
Advertisement
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আসনে বিজয়ী হতে হলে তৃণমূল থেকে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় প্রার্থী দিতে হবে। যদিও বর্তমানে ফেনী-১ আসনের মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি রয়েছেন। তিনি জোটের মনোনয়ন পেলে আবারও এ আসনে প্রার্থী হবেন বলে তার ঘনিষ্ঠজন সূত্রে জানা গেছে।
বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ফেনী আওয়ামী লীগের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক ৯৬-এর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম পর্দার অন্তরালে থেকে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে এবং কেন্দ্র ও জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার প্রভাব রয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে, বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ না নিলে তিনি এ আসন থেকে মনোনয়ন নেবেন এবং কোনো ঝুঁকি ছাড়া জয়লাভ করবেন। দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে চাইলেও তিনি সবসময় পর্দার অন্তরালে থাকতে চান। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কেউ মুখ খোলেননি।
সাবেক মন্ত্রী লে. কর্ণেল জাফর ইমাম বীরবিক্রম (অব) ১৯৭৯ সাল থেকে বিএনপি, পরে জাপা থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত এ আসনের এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯১ সালে জাপা প্রার্থী এবং ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এ আসন থেকে নির্বাচন করে বেগম জিয়ার সঙ্গে হেরে যান। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে হয়তো আবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে পারেন।
এছাড়াও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ও পরবর্তীতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বশর মজুমদার তপন, ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, ব্যবসায়ী নেতা শেখ আবদুল্লাহ, ঢাকা মহানগর যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় প্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা নাজমা আক্তার, জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগী কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমানে ট্রুথ পার্টির কেন্দ্রীয় মহাসচিব এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, জামায়াতে ইসলাম থেকে দলের ফেনী জেলা আমীর একেএম সামছুদ্দিন আহাম্মদ ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা দিদারুল আলম মজুমদারের নাম শোনা যাচ্ছে।
Advertisement
অন্যদিকে এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আলহাজ এমএ কাসেম, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স’র সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুন নেওয়াজ সেলিম ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহর নাম শোনা গেলেও নির্বাচনী মাঠে তাদের দেখা যাচ্ছে না।
ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান মজুমদার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ এখনও অনিশ্চিত। এ ছাড়া দলের চেয়ারপার্সন কারাগারে থাকায় তার নির্বাচনে অংশ নেয়াটাও অনিশ্চিত। সময় হলে সব কিছু জানা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হয়দার চৌধুরী সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, ফেনীর আওয়ামী লীগের অভিভাবক আলাউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী নাসিম ও আধুনিক ফেনীর রূপকার নিজাম উদ্দিন হাজারীর নেতৃত্বে যাকে ফেনী-১ আসনে মনোয়নয়ন দেয়া হবে তিনি তার পক্ষে কাজ করবেন। সেই ক্ষেত্রে আলাউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী নাসিম, খায়রুল বাশার মজুমদার তপনের পর তিনি নিজেকে প্রার্থী হিসেবে যোগ্য মনে করেন। তবে এ আসনে যদি ‘মহাজোট’ থেকেও প্রার্থী দেয়া হয় তাহলেও দলীয় নির্দেশে তার পক্ষে কাজ করবেন তিনি।
অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খায়রুল বাশার মজুমদার তপন বলেন, গতবারও আমি মনোনয়ন পেয়েছিলাম। কিন্তু পরে আমার নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রত্যাহার করি। এবার মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি শতভাগ আশাবাদী বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের তিনটি উপজেলা কমিটি যৌথ রেজুলেশন করে আমাকে দলের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে বাছাই করেছে এবং কেন্দ্রে সুপারিশ করেছে। মনোনয়ন পেলে এ আসনটি নেত্রীকে উপহার দেব।
বর্তমান সংসদ সদস্য শিরিন আক্তার বলেন, এবারও মহাজোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চাইব। মনোনয়ন পেলে আবার নির্বাচন করব। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এবারও এখানে মহাজোট প্রার্থী জয়লাভ করবে।
তিনি আরও বলেন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এতদিন কর্মকাণ্ড চালিয়েছি। গোটা এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সম্প্রতি ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে।
রাশেদুল হাসান/এমএএস/পিআর