ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে সারাদেশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে দু’তিন দিন ধরে। ভারতের ওড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে আঘাত হানার পর ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়ে। এর প্রভাবে শুক্রবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তবে তিতলির কারণে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাব পড়েনি রাজধানীর সবজির বাজারে।
Advertisement
শীতের আগাম সবজি শিম, টমেটো, মূলা, ফুলকপি ও পাতাকপি গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে এ শীতের সবজি পাওয়া যাচ্ছে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে। যদিও এসব সবজির অধিকাংশ দাম নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে সব চেয়ে দামি সবজির তালিকায় রয়েছে শিম। অবশ্য গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে শিমের দাম কিছুটা কমে একশ’ টাকার নিচে নেমছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে আবার একশ’ টাকা ছাড়িয়ে যায় শিমের কেজি। আগের সপ্তাহের মতোই শুক্রবারও বাজার ও মান ভেদে শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৪০ টাকায়।
Advertisement
শিমের পাশাপাশি ১০০ টাকার উপরে কেজি বিক্রি হওয়া সবজির তালিকায় রয়েছে টমেটো ও গাজর। বাজার ও মান ভেদে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৮০-১২০ টাকা কেজি। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। গত সপ্তাহেও এ সবজি দু’টির দাম এমনই ছিল।
একশ’ টাকার উপরে বিক্রি হওয়া এ তিন সবজির পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের অন্যতম আগাম সবজি ফুলকপি। সবজিটি দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমদিকে ৩০-৪০ টাকা পিস বিক্রি হলেও এখন কোনো বাজারেই এ সবজিটি ৬০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ফুলকপিরর পিস ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আসা শীতের আগাম আরও এক সবজি মূলা পাওয়া যাচ্ছে প্রায় এক মাস ধরে। শুরু থেকেই এ সবজিটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকার উপরে। গত সপ্তাহে কিছু কিছু বাজারে মূলার কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। সপ্তাহের ব্যবধানে শুক্রবার এ সবজিটির দাম কিছুটা কমে বাজার ভেদে ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সব সময় বাজারে পাওয়া যাওয়া বেগুন, উচ্ছে, বরবটি, কাকরল, করলা, পটল, ঝিঙা, ধুন্দল, ধেঁড়স, লাউয়ের দাম এখন কিছুটা চড়া।
Advertisement
বাজার ভেদে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। উচ্ছের দাম বেড়ে ৬০-৭০ টাকা কেজি, তবে করলার দাম কিছুটা কম। এ সবজিটি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা কেজি। বরবটি ৬০-৭০ টাকা কেজি। এ ছাড়া চিচিংগা, পটল, ধেঁড়স, ঝিঙা, ধুনদল, কাকরল বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা কেজি। আগের সপ্তাহেও এ সবজিগুলোর দাম এমনই ছিল।
তবে কিছুটা কমেছে লাউয়ের দাম। গত সপ্তাহে ৫০-৬০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া লাউয়ের দাম কমে ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে আগের সপ্তাহের মতো ১৫-২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, বয়লার মুরগির। বাজার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ আগের সপ্তাহের মতো ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা ২৫০ গ্রাম। আর বয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকা।
কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী মো. জামাল বলেন, ভোরে যে বৃষ্টি হয়েছে, এ বৃষ্টি বৃহস্পতিবার দিনে হলে সবজির দাম নিশ্চিত বেড়ে যেতো। কারণ তখন ক্ষেত থেকে সবজি তোলা কঠিন হয়ে পড়তো। রাতে বৃষ্টি হওয়ায় সবজির দামে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
শীতের আগাম সবজি কপি, মূলা, শিম দীর্ঘদিন ধরে বাজারে পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ সবজির দাম চড়া হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগাম সবজি বাজারে আসছে ঠিক, কিন্তু সেভাবে তো এখনও আসেনি। বাজারে এসব সবজির চাহিদা যেমন সরবরাহ তার থেকে অনেক কম, তাই দাম কমছে না।
খিলগাঁও তালতলা বাজার থেকে সবজি কেনা জুবায়ের আহমেদ বলেন, আমি সপ্তাহের বাজার একদিনে করি। সকালে ঘুম থেকে উঠে যে হারে বৃষ্টি দেখলাম, তাতে মনে হচ্ছিল সবজির দাম অনেক বেড়ে যাবে। তবে বাজারে এসে দেখি নতুন করে দাম বাড়েনি।
তিনি বলেন, নতুন করে দাম না বাড়লেও অনেক দিন ধরেই বাজারে সব ধরনের সবজির দাম চড়া। ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি পাওয়া যায় না। কয়েকটি সবজির কেজি তো ১০০ টাকার উপরে। একটুখানি একটা কপির দাম ৬০ টাকা। সবজির দাম এমন চড়া হলেও আমাদের কিছু করার নেই। বাধ্য হয়েই চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। আমি না কিনলে অন্য কেউ কিনে নিচ্ছে। বাজারে কোনো সবজিই পড়ে থাকছে না।
এমএএস/এনডিএস/এমএস