ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার আরিফুল ইসলাম। ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় তার অবস্থান ৩০৩ তম। তার এমন সাফল্যে পরিবারে নেই কোনো আনন্দ। ছেলে মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাবা-মা। কারণ ছেলেকে মেডিকেলে পড়ানোর সামর্থ্য নেই তাদের।
Advertisement
মেধাবী শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের আমঝোল গ্রামের ওসমান গণি ও আনজুয়ারা বেগমের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। ছোট ভাই চট্টগ্রামের একটি হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়াশুনা করে।
ওসমান গণি স্থানীয় দইখাওয়া বাজারে কখনও দর্জি আবার কখনও দিনমজুরির কাজ করেন। বাজারে পুরাতন কাপড় সেলাই করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলে সংসার ও দুই ছেলের পড়াশোনা। তার বড় ছেলে আরিফুল এবার ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেও অর্থের অভাবে তার মেডিকেলে ভর্তি অনিশ্চিত।
আরিফুল ইসলাম উপজেলার গোতামারী ডিএনএসসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৪.৪৯ ও হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজ থেকে ২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
Advertisement
আরিফুলের বাবা ওসমান গণি বলেন, অনেক কষ্টে দিনমজুরি আর দর্জির কাজ করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। বাড়ি-ভিটাসহ ১ বিঘা জমি ছাড়া আর কিছুই নেই আমার। ছেলের পড়াশোনার অর্থে জোগাতে আমার স্ত্রী আনজুয়ারাও অন্যের বাড়িতে কাজ করেছে। ছেলে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে জেনে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। কীভাবে জোগাড় করবো তার ভর্তির টাকা। বাড়ি-ভিটা বিক্রি করে ছেলেকে মেডিকেলে ভর্তি করার চিন্তা করছি।
তিনি আরও বলেন, এর আগে ছেলের পড়াশোনার জন্য আশা এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। এদিকে ঋণের টাকা ও ছেলের ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সমাজের কেউ যদি আমার ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসে তাহলে আমার ভিটেটুকু বিক্রি করতে হবে না।
আরিফুলের মা আনজুয়ারা বেগম বলেন, অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছি। ছেলের মুখে কোনো দিন ভালো খাবার তুলে দিতে পারিনি। শত কষ্টের মাঝেও পড়াশোনা করিয়েছি। এখন তাকে কীভাবে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাবো?
আরিফুল ইসলাম বলেন, কলেজের স্যারদের সহযোগিতায় আমি পড়াশোনা করে মেডিকেলে চান্স পেয়েছি। আমি চিকিৎসক হয়ে সমাজের গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।
Advertisement
হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান জাগো নিউজকে বলেন, আরিফুল মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আমরা খুশি। দর্জির কাজ করে আরিফুলকে তার বাবা পড়াশোনা করিয়েছেন। এখন ছেলেটির ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
কেউ আরিফুল ইসলামকে সহযোগিতা করতে চাইলে তার মোবাইল নম্বরে (০১৭৩৭-৬০৬৯৪২) যোগাযোগ করতে পারেন।
রবিউল হাসান/আরএআর/পিআর