ধর্ম

আরশের ধনভাণ্ডার থেকে নাজিল হয়েছে যে দোয়া

সুরা বাকারার সর্বশেষ আয়াতে এ কথার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে যে কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যাতীত কষ্ট দেয়ার ইচ্ছা আল্লাহ তাআলার নেই। সাধ্যাতীত কাজ দ্বারা কাউকে কষ্ট দেয়া মহান আল্লাহ তাআলার নীতি বিরোধী কাজ। আর তা তিনি আয়াত নাজিল করে বান্দাকে আশ্বস্ত করেছেন।

Advertisement

পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন যে, বান্দার অন্তরে যা আছে, তা প্রকাশ করুক কিংবা গোপন রাখুক; সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলা বান্দার কাছ থেকে হিসাব নেবেন। আর তা শুনে সাহাবায়ে কেরাম পেরেশান হয়ে যান।

মূলত আয়াতের উদ্দেশ্য ছিল যে, বান্দা স্বেচ্ছায় যেসব কাজ করবে, আল্লাহ তাআলা তার হিসাব নেবেন। অনিচ্ছাকৃত কু-চিন্তা ও ত্রুটি বিচ্যুতি এর অন্তর্ভূক্ত ছিল না।

সাহাবায়ে কেরামের পেরেশানিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়াতের ভাব-ভাষা জানা সত্ত্বেও আল্লাহর ওহির অপেক্ষায় ছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেন-

Advertisement

আয়াতের অনুবাদসুরায়ে বাকারার ২৮৬নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে এ নিশ্চয়তা প্রদান করেন যে, তিনি কোনো বান্দাকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন না। এটা আল্লাহর নীতি বিরোধী কাজ। আর এ আয়াতের মাধ্যমেই শেষ হয় সুরা বাকারা।

এ আয়াতের শেষে বান্দাকে তার কাছে ক্ষমা ও দয়া প্রার্থনা ভাব-ভঙ্গি শিখিয়েছেন। আর এ আয়াতসহ আগের আয়াতের রয়েছে অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত।

সুরা বাকারার সর্বশেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকে একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন। যাতে ভুল-ভ্রান্তিবশতঃ কোনো কাজ হয়ে যাওয়ার পর তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনার পদ্ধতি রয়েছে। যাতে ভুল-ভ্রান্তির কারণে পূর্ববর্তী নবিদের উম্মতের মতো শাস্তিতে পতিত হতে না হয়। আর দোয়াটি হলো-

رَبَّنَا لاَ تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَارَبَّنَا وَلاَ تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَارَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِوَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَاأَنتَ مَوْلاَنَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

Advertisement

আরও পড়ুন- সাহাবাদের পেরেশানিতে সান্ত্বনামূলক যে আয়াত নাজিল হয়েছিল (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮৫)

সুরা বাকারার ২৮৫ ও ২৮৬ আয়াতদ্বরে ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেউ রাতের বেলায় এ আয়াত দু’টি পাঠ করলে তা তার জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)

অন্য হাদিসে প্রিয়নবি ঘোষণা করেন, ‘সুরাহ বাকারার শেষ আয়াতগুলো আমাকে আরশের ধনভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছে। আমার আগে আর কোনো নবিকে এগুলো দেয়া হয়নি।’ (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকি)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মিরাজের সময় আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনটি জিনিস দেয়া হয়-- ৫ ওয়াক্ত নামাজ;- সুরাহ বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং- তাওহিদের অনুসারীদের সব পাপের ক্ষমা।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ)

হজরত নোমান ইবনে বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আসমান জমিন সৃষ্টির দু’হাজার বছর আগে আল্লাহ তাআলা লিখে রেখেছেন যে, সুরা বাকারার শেষ দু’আয়াত যে ঘরে ৩দিন পাঠ করা হবে, সে ঘরের কাছে শয়তান আসতে পারবে না।’ (বাগবি- তাফসিরে মাজহারি)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো নিয়মিত আমল করার পাশাপাশি আয়াতের ভাব ও শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম