কৃষি প্রধান জেলা চুয়াডাঙ্গার আবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন কমতে শুরু করেছে। আবাদি জমির মধ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা, অপরিকল্পিত রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, হাটবাজারসহ বিভিন্ন বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও নানা স্থাপনা। ফলে আবাদি জমিতে কৃষি পণ্য উৎপাদনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। গত পাঁচ বছরে প্রায় ৩১২ হেক্টর চাষযোগ্য জমি অনুৎপাদনশীল খাতে চলে গেছে বলে জানা গেছে। এই প্রক্রিয়াকে রোধ করতে না পারলে আবাদি জমির উৎপাদন হ্রাস পাবে। কমে যাবে জমির পরিমাণ, দেখা দিতে পারে খাদ্য ঘাটতি। চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট জমির পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার ৭ শত ৪২ হেক্টর। তার মধ্যে বর্তমানে আবাদযোগ্য জমি হচ্ছে ৯৭ হাজার ৮৯২ হেক্টর। ৫ বছর আগে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৯৭ হাজার ৫৮২ হেক্টর। গত ৫ বছরে জেলায় বিভিন্ন কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ৩১২ হেক্টার। আবাদি জমির মধ্যে বর্তমানে ৫০ ভাগ জমিতে ধান, ২০ ভাগ জমিতে ভুট্টা, ৫ ভাগ জমিতে আখ, ১৫ ভাগ জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ও ফলের বাগান এবং ১০ ভাগ জমিতে সবজি আবাদ করা হয়। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় খাদ্য চাহিদা বাৎসরিক ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৯ মেট্রিক টন হলেও উৎপাদন হয় বাৎসরিক প্রায় ৭ লাখ ৩ হাজার ৯২৩ মেট্রিক টন। অতিরিক্ত খাদ্যশস্য রাজধানীসহ অন্য জেলায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এখন জমির উৎপাদন বন্ধ করে যেভাবে জমিতে ঘর-বাড়িসহ নানান স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে খাদ্য উৎপাদন এখন হুমকির সম্মুখীন। এর অন্যতম কারণ বিপুল জনসংখ্যার আবাসস্থানের সঙ্কট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘর-বাড়িসহ জমির মধ্যে স্থাপনা নির্মাণে যদি প্রশাসনের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হয় তবেই আবাদি জমি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আকুন্দবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন জানান, গত কয়েক বছর ধরে ধান চাষে অব্যাহত লোকসান হচ্ছে। এক বিঘা ধান চাষ করতে সেচ, সার, কিটনাশক ও কামলাসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগে। অপরদিকে উৎপাদিত ধান বাজারে বিক্রি করেও পাওয়া যায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এ কারণে ধান চাষ বাদ দিয়ে নিজের ৩ বিঘা এবং অন্যের ২ বিঘা জমি দীর্ঘ মেয়াদি বর্গা নিয়ে মোট ৫ বিঘা জমিতে আম বাগান করেছি। এ বছর সমস্ত খরচ বাদে আম বাগানে ৮০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। একই কথা বলেন জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের বর্গাচাষী মুজিবর রহমান, তিনি বলেন অন্যের ১০ বিঘা জমি নিয়ে ধানসহ অন্যান্য আবাদ করতাম। কিন্তু গত ৩/৪ বছর ধরে ধান চাষে ব্যাপক লোকসান হচ্ছে। এ কারণে এবার ১৫ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে পেয়ারা বাগান করেছি। আশা করছি আগামী বছর উৎপাদিত পেয়ারা বিক্রি করে সমস্ত খরচ বাদে কমপক্ষে ২ লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে। আবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে আসার কারণ জানতে চাইলে জেলা কৃষি অফিসের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক প্রবির কুমার জানান, প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত, খরা, কিটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত ফসলের কাঙ্খিত বাজার মূল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক কৃষি জমিতে নানা রকম বনজ ও ফলজ বাগান করার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এছাড়া অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট নির্মাণ, বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, হাটবাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও নানা স্থাপনার কারণে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।# সংকুচিত হচ্ছে খুলনা# যশোরে ৫ বছরে আবাদি জমি কমেছে পাঁচ হাজার হেক্টর# রাজশাহীতে প্রতিদিন কমছে আবাদি জমি# পাবনায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে আবাদি জমিএমএএস/পিআর
Advertisement