ফিচার

পেটের দায়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন রতন

‘বুকে প্রচণ্ড ব্যথা করে। সম্পূর্ণ শরীর ব্যথা করে। পিঁপড়া, পোকা-মাকড় কামড়ায়। ভয় ভয় লাগে অনেক সময়। তারপরও নারিকেল গাছ ছিলতে উঠি। কিন্তু পেটের দায়ে উঠতে হয়। বছরে ৪ মাস কাজ বন্ধ থাকে। তখন বিলে কাজ করতে হয়। এ ছাড়া তো কোনো উপায় নাই। বাঁচতে হবে তো। কাজ না করলে কী খামু?’ কথাগুলো বললেন ৬০ বছরের বৃদ্ধ নারিকেল গাছি রতন মোল্লা।

Advertisement

রতন মোল্লার শৈশব, কৈশোর ও যৌবন কেটেছে মেঘনা উপকূলের দৌলতখার সাহবাজপুরে। মাঝখানে এসে নদীভাঙনের মুখে পড়েছেন। এ পর্যন্ত পাঁচ বার ভাঙনের কবলে ভিটে-মাটি হারিয়েছেন। জায়গা-জমি গড়েছেন, আবার তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কৃষিকাজ করে জীবন কাটাতেন। কিন্তু নদীভাঙন তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। পেশা বদল করে হাতে নিয়েছেন দা। তা দিয়ে নারিকেল গাছ পরিষ্কার করেন।

আবর্জনা পরিষ্কার করলে নারিকেল গাছে সজীবতা ফিরে আসে। তাই নারিকেল সমৃদ্ধ লক্ষ্মীপুরে গাছিদের চাহিদাও বেশি। এ জন্য তিনি লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর কালকিনির একদম মেঘনার তীরে বাড়ি করেছেন। কিনেছেন ৮ শতাংশ জমি। এখানে এসেও চার বার ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটে-মাটি হারিয়েছেন।

> আরও পড়ুন- প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সফল ভিডিও সম্পাদক রশিদ

Advertisement

রতন মোল্লার ২ ছেলে ৪ মেয়ে। সংসার চালানোর চিন্তাটাও কম নয়। স্ত্রী হাজেরা বেগম চল্লিশে পা রেখেছেন। বড় মেয়ে আরজু বেগম ও মেজ মেয়ে রেহানা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে আল আমিন গাড়ির হেলপার। সেজ মেয়ে সুফিয়া আক্তার পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে। ছোট মেয়ে তামান্না আক্তার পড়ে ২য় শ্রেণিতে। সবার ছোট মোবারক হোসেনকে এ বছর স্কুলে ভর্তি করেছেন।

সংসারের ঘানি টানতেই এমন ঝুঁকিপূর্ণ পেশা বেছে নিয়েছেন তিনি। গাছে উঠলে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। নারিকেল গাছে সাপের বাসা থাকে। ভিমরুল, মৌমাছির বাসা থাকে। গাছের ডাল ছিঁড়ে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। তবুও এই বয়সে এ কাজটিই করতে হয় তাকে। শুধু পেটের দায়েই এমন ঝুঁকিপূর্ণ পেশা তার। কাজের প্রতিবন্ধকতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রতন মোল্লা বলেন, ‘কৃষিকাজের চেয়ে নারিকেল গাছ ছিলাতে আয় বেশি। কিন্তু এটা খুব ভয়ঙ্কর, খুব ঝুঁকির কাম। আমি দৈনিক দশ থেকে বারোটা গাছে উঠতে পারি। এর বেশি সম্ভব হয় না। গাছপ্রতি চল্লিশ টাকা করে পাই। তবে কেউ কেউ পঞ্চাশ টাকাও দেয়।’

> আরও পড়ুন- রোভারিং চ্যালেঞ্জে দেশসেরা আশিক

ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেই স্বপ্ন দেখছেন তিনি। সে সম্পর্কে বলেন, ‘এখনো চিন্তা, দুইটা মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। নদী ভাঙলে জমি কিনতে হবে। মেয়েরা পড়লেও আর কী করতে পারবো? বেশি কিছু আশা করে লাভ আছে? ছেলেপক্ষ আসলে অন্তত বলতে পারবো, মেয়েটা পড়ালেখা করেছে। ছেলেরা যদি বড় হয়ে কিছু করতে পারে, তাহলে আমাদের খেদমত করবে। এটাই আশা করি।’

Advertisement

এসইউ/এমএস