বিশেষ প্রতিবেদন

পাবনায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে আবাদি জমি

প্রতিবছর পাবনায় আশঙ্কাজনক হারে আবাদি জমি কমছে।  অথচ এর উল্টো চিত্র হিসেবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। এ নিয়ে চিন্তিত কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।  গত ৫ বছরে পাবনায় ১ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি কমে গেছে।  পাশাপাশি গত ১০ বছরে জেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে ৫ লাখের বেশি।  সে হিসেবে ৫ বছরে জেলায় জনসংখ্যা ২ লাখের বেশি বেড়েছে।  তবে এত কিছুর পরেও পাবনা জেলায় খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকছে।  এটিকে অনেকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে দেখছেন।  আর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন এটি সরকারের তথা তাদের সাফল্য।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পাবনায় ৫ বছর আগে আবাদি জমি ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩৬ হেক্টর।  এখন তা কমে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯০৫ হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে।  এখন যে পরিমাণ আবাদি জমি রয়েছে তাতে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়ে থাকে ধান।  এরপরই গমের আবাদ হয়ে থাকে।  কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান জমির মধ্যে ৪৪ ভাগ ধান, ১০ ভাগ গম, পেঁয়াজসহ মসলা জাতীয় ১১ ভাগ, পাট ৯ ভাগ, তেল জাতীয় ৯ ভাগ, ডাল জাতীয় ফসল ১ ভাগ, শাক সবজি ৪ ভাগ, ফল ২ ভাগ এবং অন্যান্য ৩ ভাগ জমিতে আবাদ হয়ে থাকে। জেলায় খাদ্য চাহিদা ৪ লাখ ১৮ হাজার ১৩৪ মেঃ টন এবং উৎপাদন হয়ে থাকে ৬ লাখ ৯০ হাজার ২৫৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে পঁচে নষ্ট হওয়া, বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করা, গুদামে নষ্ট হওয়া ও ইঁদুরে খাওয়াসহ নানা কারণে কিছু পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হয়ে থাকে।  এরপরও উদ্বৃত্ত থাকে ১ লাখ ৯২ হাজার ১৩৮ মেট্রিক টন খাদ্য। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিভুতি ভুষন সরকার জানান, প্রতি বছরই বেশ কিছু পরিমাণ আবাদি জমিতে ঘর-বাড়ি নির্মাণ, ইটের ভাটা, রাস্তা-ঘাট সহ নানা কারণে অনাবাদির তালিকায় চলে যাচ্ছে।  কিন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি থেমে থাকছেনা। জেলা পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পাবনা জেলায় জনসংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ২৪ হাজার ৬৮৪ জন।  এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৩২ জন।    জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জানান, বিদ্যমান জমিতে বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উৎপাদন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে।  যদিও পাবনা জেলা খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে স্থান লাভ করেছে, সেটি সরকারের তথা কৃষি বিভাগের সাফল্য।  কিন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ, আবাদি জমি নষ্ট করার প্রবনতা না কমলে এই সাফল্য কতদিন ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে শংকা থেকেই যাচ্ছে। তিনি জানান, আমরা ধানের পাশাপাশি গম চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছি।  কেননা, গম এর প্রোটিন ক্ষমতা বেশি। এছাড়া এই ফসল চাষে সেচ, নিড়ানি, মাড়াই এবং শ্রমসহ অন্যান্য উপকরণ তুলনামূলকভাবে কম লাগে।  অনেক সময় সেচ ছাড়াই গমের ভালো ফলন হয়ে থাকে।এদিকে দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অতিরিক্ত খাদ্য চাহিদা পুরণে চার ফসল ভিত্তিক ফসল বিন্যাস ধারা উদ্ভাবন” করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।  সরেজমিন গবষেনা বিভাগ পাবনা এখানকার আটঘরিয়া উপজেলায় এই চার ফসল ভিত্তিক কার্যক্রম চালু করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে।  পাবনা সরেজমিন কৃষি গবেষনা বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শামিম হোসেন মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি এবং ২০২৫ সালে জনসংখ্যা বেড়ে হবে প্রায় সোয়া ১৯ কোটি।  অথচ প্রতি বছর চাষযোগ্য জমি কমছে ১% হারে।  কিন্তু আমাদের কোটি কোটি মানুষের জন্য অতিরিক্ত খাদ্য চাহিদা পুরণসহ খাদ্য রফতানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।  আর এ লক্ষ্য নিয়েই ‘‘ফসল নিবিড়তা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।# সংকুচিত হচ্ছে খুলনা# যশোরে ৫ বছরে আবাদি জমি কমেছে পাঁচ হাজার হেক্টর# রাজশাহীতে প্রতিদিন কমছে আবাদি জমিএমএএস/পিআর

Advertisement