জাতীয়

টার্গেট ছিল শেখ হাসিনা

এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের হাজারও গল্প শুনছে বিশ্ব। স্বপ্নময় মানুষের হাতে হাত রেখে চলা এক বিস্ময়ের নাম ‘বাংলাদেশ’। অথচ আজকের উন্নয়ন সড়কের খানিক পেছনে হাঁটলেই এক ‘রক্তাক্ত বাংলাদেশ’-এর প্রতিচ্ছবির দেখা মেলে। একটি নেতৃত্বকে নিকেশ করে দেয়ার প্রতিচ্ছবি। একজন শেখ হাসিনাকে চিরতরে শেষ করার ভয়ংকর নকশা।

Advertisement

ভয়াল গ্রেনেডের থাবা। মুহুর্মুহু গুলি। রাষ্ট্রীয় সংস্থার আয়োজন! নির্মম ওই হামলার টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। যেন জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ কন্যাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে ইতিহাস পাল্টে দেয়ার এক ভয়ঙ্কর নীলনকশা।

কিন্তু যিনি নীলকণ্ঠী, তাকে বিষপান করিয়ে খতম করার সাধ্য কার? যিনি বাঁচলে নয়া বাংলাদেশের রূপায়ন ঘটবে, তার তো বেঁচে থাকাই আবশ্যক। বেঁচে আছেন বঙ্গবন্ধু তনায়, বেঁচে আছে বাংলাদেশ। বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অভিশপ্ত মাসের নাম ‘আগস্ট’। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তেমনই এক অভিশপ্ত দিন। সেদিন ছিল শনিবার। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরেুদ্ধে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরের পর থেকেই সমাবেশস্থলে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হতে থাকে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে সন্ত্রাসবিরোধী একটি মিছিল হওয়ার কথা। মিছিল-পূর্ব সমাবেশের জন্য মঞ্চ করা হয় ট্রাকের ওপর।

ঘড়ির কাঁটায় তখন ৫টা বেজে ২২ মিনিট। কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা বক্তব্য দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার সন্ত্রাসবিরোধী ঝাঁঝালো বক্তব্যে গোটা সমাবেশ তখন উদ্দীপ্ত। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তব্যের ইতি টেনেছেন। হাতে একটি কাগজ ভাজ করতে করতে মঞ্চের সিঁড়ির কাছে এগিয়ে আসছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। নিচে মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান হাত বাড়িয়ে শেখ হাসিনার জন্য অপেক্ষারত।

Advertisement

ঘাতকদের যেন আর তর সইল না। ঠিক তখনই বিকট শব্দ। মুহুর্মুহু গ্রেনেড বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল গোটা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। মুহূর্তেই রক্তগঙ্গা বয়ে গেল পিচঢালা কালোপথ। আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্বর যেন এক মৃত্যুপুরী। রক্ত-মাংসের স্তূপে ঢেকে যায় সমাবেশস্থল। পরপর ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী। আহত হন শত শত মানুষ।

ওই হামলার প্রধান টার্গেট ছিল শেখ হাসিনা। এ কারণে প্রথম গ্রেনেডটি মঞ্চ অর্থাৎ ট্রাকটি লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু ট্রাকের ডালায় লেগে গ্রেনেডটি নিচে বিস্ফোরিত হয়। দেহরক্ষী এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের ত্যাগের বিনিময়ে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।

এদিকে ১৩টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেই ঘাতকরা ক্ষান্ত হয়নি। জীবিত আছেন জেনে তারা শেখ হাসিনা এবং তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। কিন্তু শেখ হাসিনার গাড়িটি বুলেটপ্রুফ হওয়ায় এ বেলায়ও প্রাণে রক্ষা পান। ঘাতকের গুলি গ্লাস ভেদ করে শেখ হাসিনাকে আঘাত করতে পারেনি। তবে শেখ হাসিনাকে আড়াল করে ঘাতকের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে নিজের জীবন বিলিয়ে দেন তার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান। বর্বর ওই হামলায় প্রাণে বেঁচে গেলেও শেখ হাসিনা বাম কানে মারাত্মক আঘাত পান। আঘাতপ্রাপ্ত কানের শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন।

শেখ হাসিনাকে হত্যার মূল পরিকল্পনা ব্যর্থ হলেও ওইদিনের বীভৎসতা এক কালো অধ্যায়ের জন্ম দেয়। ঘাতকের প্রথম নিক্ষেপ করা গ্রেনেডটি ট্রাকের ওপর বিস্ফোরিত হলে ওইদিন হয়তো আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই প্রাণে রক্ষা পেতেন না। রচিত হতো আরেক ১৫ আগস্ট।

Advertisement

বিস্ফোরিত ১৩টি গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বহু মানুষ। অনেকের হাত-পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নিহতদের নিথর শরীর আর আহতদের বেঁচে থাকার করুণ আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আকাশ-বাতাস।

এএসএস/এমএআর/এমএস