দেশজুড়ে

যন্ত্রণায় প্রতিদিন কাঁদি, তাদের ফাঁসি চেয়ে আর্তনাদ করি

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহত অনেকে এখনও দেহে বয়ে বেড়াচ্ছেন স্প্লিন্টার। যার ব্যথা এখনও মনে করিয়ে দেয় দুঃসহ সেই স্মৃতি। নৃশংস ওই হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার বিচারকাজ আদালতে শেষ হয়েছে। আগামীকাল বুধবার রায় ঘোষণা হবে।

Advertisement

সেদিনের বিভীষিকাময় মুহূর্তের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি আগামীকালের রায় নিয়ে নিজেদের প্রত্যাশার কথা জাগো নিউজকে জানিয়েছেন বেঁচে যাওয়া কয়েকজন। শরীরে স্প্লিন্টারের ব্যথা আর যন্ত্রণা নিয়ে আজও কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন ভৈরবের নাজিম উদ্দিন। ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ এলাকার আকবরনগর গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে তিনি। তিন সন্তান, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে তার সংসার। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দিন বেঁচে গেলেও এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। রায় নিয়ে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘গ্রেনেড হামলার বিচার দেখতে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে অপেক্ষায় আছি। ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে আজও বেঁচে আছি। আগামীকাল গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা হবে। আমাদের অপেক্ষার পালাও শেষ হবে।’

‘আমার প্রত্যাশা, এ মামলার সব অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। তাদের ফাঁসি দেখার অপেক্ষায় আছি। তারা সেদিন ইতিহাসের একটি নৃশংস ও জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।’ ওইদিন বিকেলে আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল। শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরপরই তা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু গ্রেনেড হামলায় স্তব্ধ হয়ে যায় সেই কর্মসূচি।

ওই হামলায় প্রাণ হারান আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। এছাড়া আহত হন কয়েকশ মানুষ। সেদিন বেঁচে গেলেও স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার মতো অসংখ্য নিরীহ মানুষ সেদিন পঙ্গু হয়ে যায়। আইভি রহমানকে বাঁচাতে গিয়ে গ্রেনেড হামলার শিকার হই আমি। পরে সামরিক হাসপাতালে আমার জ্ঞান ফেরে। এরপর জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ভারতের পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠান। তিন মাস চিকিৎসার পর আমি দেশে ফিরি। চিকিৎসক বলেছিলেন পরে আবার অপারেশন করা লাগবে। কিন্তু টাকার অভাবে আজও অপারেশন করতে পারিনি। শরীরে এখনও অসংখ্য স্প্লিন্টার রয়ে গেছে। যন্ত্রণায় প্রতিদিন কাঁদি। ওই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চেয়ে আর্তনাদ করি।’

Advertisement

‘ঘটনার পর বিএনপি সরকার জজ মিয়া নাটক শুরু করলে মনে হয়েছিল, বিচার আর পাবো না। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার বিচারকাজ শুরু করে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর রায় হবে। আমি চাই সব আসামির ফাঁসি হোক।’ সেদিনের নৃশংস হামলায় আহত হন ভৈরবের জুবায়ের আলম দানিছও। তিনি বর্তমানে উপজেলার শিমুলকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান। জুবায়ের আলম দানিছ বলেন, ‘ধরে নিয়েছিলাম এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না। সেদিন আমি আইভি রহমানের পাশেই ছিলাম। অনুষ্ঠান শুরুর একটু পর আমি পাশের দোকানে চা খেতে যাই। ওই সময় বিকট শব্দে চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। শুরু হয় মানুষের ছোটাছুটি। হঠাৎ শক্ত কিছু একটা আমার শরীরে এসে লাগে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে জানতে পারি সেটি ছিল স্প্লিন্টার। শরীর রক্তাক্ত হলেও ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই।’

‘নানা নাটকের পর কাল এ মামলার রায় হবে। সেদিনের ঘটনায় স্বজনহারাদের জন্য এটি খুশির খবর। আমি চাই রায়ে সব অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি হোক।’ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় প্রাণ হারান আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। আইভি রহমানের একমাত্র ছেলে নাজমুল হাসান পাপন সেদিন মাকে হারিয়ে ভেঙে পড়েন। ভুলতে পারেননি সেই স্মৃতি আজও। মামলার রায়ে নিজের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে পাপন বলেন, ‘আমার মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু আজও ভুলতে পারিনি। আজও মায়ের মৃত্যু আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বিচারের জন্য অপেক্ষা করেছি। আগামীকাল এ মামলার রায় হবে, অপরাধীদের শাস্তি হবে; এর চেয়ে খুশির খবর আর কী হতে পারে।’

‘আমি চাই ওই ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হোক’- যোগ করেন নাজমুল হাসান পাপন। আসাদুজ্জামান ফারুক/এএম/আরআইপি

Advertisement