দেশজুড়ে

বঙ্গবন্ধুর প্রথম শাহাদাৎবার্ষিকীতে গ্রেফতার হয়েছিলেন তারা

ঘটনাটি ৩৯ বছর আগের। ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম শাহাদাৎবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে ভৈরবে ২২ জন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে সেদিন অভিযোগ ছিল, তারা সামরিক শাসন ভঙ্গ করে বঙ্গবন্ধুর নামে মিলাদের আয়োজন করেছে।  তখন সামরিক শাসক ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। এ ঘটনার খবরে সামরিক শাসকের নির্দেশে ভৈরব থানা পুলিশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ পড়াতে দেয়নি।  মৃত্যুবার্ষিকীর সব আয়োজন ব্যর্থ করে দিয়ে সেদিন আয়োজক স্থানীয় যুবলীগ নেতা ফখরুল আলম আক্কাছসহ (সাবেক পৌর মেয়র) ২২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।গ্রেফতার হওয়া অন্যরা হলেন, আসাদুজ্জামান ফারুক (সাংবাদিক), রুহুল আমিন, মাহাবুব (মৃত), মতিউর রহমান, মফিজুর রহমান, মোশারফ হোসেন (জজ মিয়া, মৃত) জিল­ুর রহমান জিল­ুর (মৃত), আসাদ মিয়া, আতাউর রহমান, আসাদুল হক শিশু, দীলিপ চন্দ্র সাহা, দিপেন্দ্র চন্দ্র সাহা, ফজলুর রহমান, আবদুল হামিদ, ইদ্রিস মিয়া, মাহাবুব আলম, রসরাজ সাহা, সুবল চন্দ্র কর (মৃত), শাহজালাল, ফিরোজ মিয়া ও আজমল ভূঁইয়া।জানা গেছে, ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট ভৈরবের সেই সময়ের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম আক্কাছ হাজী আসমত কলেজের শহীদ আশুরঞ্জন ছাত্রাবাসে (বর্তমান শৈবাল আবাসিক হোটেল) জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল ও কোরআন খতমের আয়োজন করে।  দুপুরের পর থেকে ১৫ জন মৌলভীর প্রতিজন দুই পারা করে কুরআন খতম দিতে থাকেন।  এসময় উপস্থিত ছিলেন ২৪ জন স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।  কথা ছিল আসরের নামাজের পর মিলাদ পড়ানো হবে।  কিন্তু ইতোমধ্যে এ খবর পৌঁছে যায় সামরিক সরকারের উচ্চ পর্যায়ে।  তৎক্ষণাৎ ভৈরব থানা পুলিশের কাছে নির্দেশ আসে মিলাদের আয়োজন ভেঙে দিয়ে আয়োজকদের গ্রেফতার করতে।  পুলিশ নির্দেশ পেয়ে নামাজের আগ মুহূর্তে আয়োজন ব্যর্থ করে দিয়ে ১৫ মৌলভীসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।  তারা সেদিন গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ তাদের ওপর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন চালায়।  পুলিশের বুট দিয়ে লাথিসহ বেত মারা হয় তাদের।  পুলিশের নির্যাতনে তারা অনেকেই রক্তাক্ত হলেও সেদিন আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থাটুকুও করা হয়নি।  পরে ১৫ জন মৌলভীকে মুচলেকা দিয়ে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।  এছাড়া গ্রেফতার আব্দুস ছাদেক (ছেতু মিয়া) ও মোহাম্মদ হানিফ কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে গ্রেফতারকৃত ২২ জনকে পরদিন ১৬ আগস্ট কোমরে রশি বেঁধে হাতকড়া লাগিয়ে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ মহকুমা কোর্টে পাঠানো হয়।  পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠায়।  পরবর্তী সময় দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকার পর পর্যায়ক্রমে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়।  অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একে একে সবাই মামলা থেকে খালাস পান। সেদিনের ভৈরব থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, ৭১ এ যার নির্দেশে আমরা দেশ স্বাধীন করতে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম, সেই বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী তার প্রিয় স্থান ভৈরবে পালন করতেই আয়োজন করেছিলাম মিলাদ মাহফিল ও কুরআন খতমের। তিনি আরো বলেন, মৃত্যুই যেখানে তুচ্ছ’ কারাবরণ তো স্বাভাবিক ঘটনা।  আমার দুঃখ একটাই যারা সেদিন কারাবরণ করেছিলেন, তারা আজ অনেকেই রাজনৈতিকভাবে নিদারুণ উপেক্ষিত।  সাংবাদিক আসাদুজ্জামান ফারুক এ ব্যাপারে জানান, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবেই তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়েছিলাম।  সেদিন অনেকেই সামরিক সরকারের ভয়ে বঙ্গবন্ধুর নামটি পর্যন্ত উচ্চারণ করতে পারেনি।  দেশের অনেক আওয়ামী লীগ নেতা সামরিক সরকারের ভয়ে পালিয়ে ছিল।  অথচ আক্কাছ ভাই এর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে গিয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হলো আমাদের।  দুঃখ একটাই আমরা আজো এর মূল্যায়ন পাইনি বরং উপেক্ষিত হয়ে আছি।এমএএস/পিআর

Advertisement