নওগাঁয় চালকলগুলোর গুদামে বিপুল পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। বাজারে ক্রেতা না থাকায় চাল বিক্রি করতে পারছেন না মালিকরা। ফলে তারা লোকসানের মুখে পড়েছেন। স্থানীয় চালকল মালিকরা উৎপাদিত পণ্যের বাজারদর হারিয়ে চালকলগুলোর উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ভারত থেকে অপ্রয়োজনে চাল আমদানি করায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন চালকল মালিকরা।
Advertisement
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে জেলার প্রায় সাড়ে ৯শ চালকলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। চাল উৎপাদন বন্ধ থাকায় ব্যাংক থেকে নেয়া প্রায় ৫শ কোটি টাকা ঋণের বোঝা চেপেছে ব্যবসায়ীদের কাঁধে।
সম্প্রতি চাল আমদানি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন জেলা চলকল মালিক গ্রুপের প্রতিনিধিরা। এছাড়া সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাংক ঋণে সর্বোচ্চ সুদ ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করার দাবি জানান জেলার চালকল মালিকরা।
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় ও চালকল মালিক সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় প্রতি বছর প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে ১২ লাখ মেট্রিক টন চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। জেলায় ১ হাজার ২৮০টি চালকল রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি অটোরাইচ মিল এবং বাঁকিগুলো হাসকিং মিল। হাসকিং মিলগুলো সারা বছর চাল উৎপাদন করতে পারে না। শুধুমাত্র ধান কাটা মাড়াইয়ের সময় মাত্র তিন/চার মাত্র চালু থাকে। বাঁকি সময় এই মিলগুলো বন্ধ থাকে। বিগত বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি হয়। সে সময় চাল আমদানির ওপর আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করে চাল আমদানি করে খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলা করা হয়। কিন্তু বিগত ইরি-বোরো ও আউশ মৌসুমে দেশে বিপুল পরিমাণ ধানের উৎপাদন হওয়ায় পর্যাপ্ত ধান-চাল মজুত আছে। কিন্তু এখনও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে চালের আমদানি অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় দেশে উৎপাদিত চালের বাজার মূল্য প্রতিনিয়ত কমছে। এতে কৃষকের পাশাপাশি চালকল মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
Advertisement
বাজারে বর্তমানে দেশীয় চালের ক্রেতা নেই বললেই চলে। চালকল গুদামে বিপুল পরিমাণ চাল মজুত থাকলেও ক্রেতা না থাকায় চাল বিক্রি করতে পারছেন না মালিকরা। এ অবস্থায় জেলার প্রায় সাড়ে ৯শ (৮০ শতাংশ) চালকলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ধান চালের মজুত আছে। বাইরে থেকে চাল আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। চাল আমদানির কারণে দেশের চালকলগুলো এখন ক্রমাগত লোকসান গুনছে। সেই সাথে কৃষকরাও ধানের নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানাকে রক্ষা করতে চাল আমদানি বন্ধ ও ব্যাংক ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ করার দাবি জানান তিনি।
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুস সালাম বলেন, জেলার হাসকিং চালকলগুলোর মধ্যে অধিকাংশ মৌসুমী ব্যবসায়ী। যার কারণে তারা সারা বছর চাল উৎপাদন করেন না। তাদের মূলধন কম হওয়ায় কয়েক মাস চাল উৎপাদন করেন এবং খাদ্য গুদামে সরবরাহ করে থাকেন। এ কারণে বলা সম্ভব হচ্ছে না জেলায় ৮০ শতাংশ চালকল বন্ধ আছে। তবে চাল আমদানির বিষয়টি সম্পূর্ণ সরকারের সিদ্ধান্ত।
আব্বাস আলী/আরএআর/পিআর
Advertisement