দেশজুড়ে

বিএনপিতে কোন্দল, নৌকায় ঐক্য আ.লীগে

পাবনা জেলার গুরুত্বপূর্ণ একটি সংসদীয় আসন পাবনা-৪। এটি ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। দুটি উপজেলা মিলিয়ে প্রায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার ভোটার। রাজনৈতিক সক্রিয়তার দিক থেকেও এই আসনটি গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে প্রায় ডজন খানেক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই দৌড় ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে মূলত ভোটের লড়াই হয় এখানে। পাবনা-৪ আসনে নানা কারণে বিএনপিতে কোন্দল থাকলেও নৌকায় প্রতীকের পক্ষে আওয়ামী লীগে ঐক্য রয়েছে।

Advertisement

বিগত দুই দশক বছর এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। বর্তমান ভূমিমন্ত্রী ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরিফ চারবার এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মনে করেন দল এবং জনগণের জন্য কাজ করার মত শারীরিক সক্ষমতা তার এখনও আছে।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ্বাস, হাইকোর্টের আইনজীবী নেতা অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদু, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগ নেতা প্রকৌশলী আব্দুল আলীম, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি পাঞ্জাব বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম লিটন ও পৌর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান স্বপন।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ছিলেন। আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের অন্যতম সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রবিউল আলম বুদু, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটন, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি ও সমাজসেবক প্রকৌশলী মো. আব্দুল আলীম, আটঘরিয়ার সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতা পাঞ্জাব আলী বিশ্বাস ও ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান স্বপন দলীয় মনোনয়ন লাভের আশায় দৌড় ঝাঁপ করছেন। পাঞ্জাব বিশ্বাস পূর্বে জাসদের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

Advertisement

বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। তিনি ১৯৮৬ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল থেকে পাবনা-৪ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০২ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। তার ছোট ভাই মোয়াজ্জেম বিশ্বাস আটঘরিয়ার যুবলীগের একটি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি।

রফিকুল ইসলাম লিটন ১৯৮৫ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। তার বড় ভাই জহুরুল ইসলাম ডাবলু ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতি শুরু করা প্রকৌশলী আব্দুল আলীমের ভাই ও তার স্ত্রী সুইডেনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়। আব্দুল আলীম বিভিন্ন জনহিতকর কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে পছন্দ করেন। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

অ্যাডভোকেট রবিউল আলম বুদুর পরিবার দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি একাধিকবার সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনে সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছেন। তার বড় ভাই প্রয়াত পান্না সরদার দীর্ঘদিন ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ছিলেন।

Advertisement

অপরদিকে বিএনপি থেকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম সরদার, সাবেক পৌর মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু মনোনয়ন চাইবেন। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন লড়াই হয় সিরাজ-হাবিব এর মধ্যেই। অতীতে তাই দেখা গেছে।

বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন নিতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। কিন্তু এখানেও মনোনয়ন না পেয়ে টেলিভিশন মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিপুল ভোট পান। তবে এতে তিনি ও বিএনপি প্রার্থী দুজনেই পরাজিত হন এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামসুর রহমান শরিফ বিজয়ী হন।

১৯৯১ সালে সিরাজুল ইসলাম সরদার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৮ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি ৫৫ হাজার ৯৪৪ ভোট পান। ২০০১ সালে ৬৫ হাজার ৭২১ ভোট পান এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৪ হাজার ৯০১ ভোট ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে আসে।

তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মূল্যায়নে সিরাজ ও হাবিবের দ্বন্দ্বের কারণেই এই আসনে বারবার বিএনপি পরাজিত হয়েছে। কারণ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী সিরাজ সরদার ও বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবের সম্মিলিত ভোট বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে বেশি। নেতাকর্মীরা মনে করেন সম্মিলিতভাবে কাজ করলে এই আসনটি আবার ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বিএনপির এই অবস্থার মধ্যে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবু তালেব মন্ডল মনোনয়ন চাইবেন। তিনি স্থানীয় সংবাদপত্রে মাঝেমধ্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে ঈশ্বরদী-আটঘরিয়ার ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। এছাড়াও জাতীয় পার্টি এখানে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এই আসনে তাদের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না।

আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ বলেন, এবারের নির্বাচন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আবারও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করা প্রয়োজন। আমি মনে করি দল এবং জনগণের জন্য কাজ করার মত শারীরিক সক্ষমতা আমার আছে।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা পাঞ্জাব বিশ্বাস বলেন, সাধারণ মানুষ এই আসনে পরিবর্তন চাচ্ছে। তারা নতুন মুখ দেখতে চাচ্ছে।

অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া এদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পাবনা-৪ আসনে আমরাই বিজয়ী হবো।

ভোটার ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন- চলমান নির্মাণাধীন রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য অভিজ্ঞ ও দক্ষ একজন এমপি এই আসনে দরকার।

আওয়ামী লীগ কর্মীদের দাবি- এবার পাবনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান আগের চেয়ে অনেক মজবুত হয়েছে। নৌকা প্রতীকের পক্ষে সকলে ঐক্যবদ্ধ। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে। কারণ বিএনপির কার্যক্রম এই আসনে অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে।

আরএআর/জেআইএম