আগামীকাল বুধবার (১০ অক্টোবর) ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণার দিন রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে পুলিশ। রায়কে কেন্দ্র করে কিংবা রায় বিপক্ষে যাওয়ার আবেগে কোনো পক্ষ যদি নাশকতার চেষ্টা করে তাদের শক্ত হাতে দমনের জন্য প্রস্তুত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে রায়ের দিন জঙ্গি কিংবা সন্ত্রাসী হামলার কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Advertisement
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, রায় ঘোষণার দিন আসামি ও ঢাকাবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে আদালতের চারপাশের সড়কে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের বিশেষ আদালতে তল্লাশি চলবে, বসানো হবে চেকপোস্ট। এ ছাড়াও রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে পুলিশ সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করবে। শহরজুড়ে থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। সব মিলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫ সহস্রাধিক সদস্য এই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘রায় ঘোষণার দিন কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলার কোনো থ্রেট নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ও চেকপোস্ট থাকবে।’
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই মামলার সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের নেতারা জড়িত সে কারণে নয়াপল্টনসহ বিএনপি অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকায় বিশেষ নজরদারি থাকবে। রায়ের পর কেউ যাতে সড়কে নেমে যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটাতে পারে, নাশকতা করতে না পারে সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ। নাশকতা হতে পারে এমন সম্ভাব্য স্পটগুলোতে আগে থেকেই পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
Advertisement
রায়কে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী র্যাবের ব্যাটালিয়নগুলোকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রায়কে কেন্দ্র করে কেউ যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য রাজধানীসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।’
রায় ঘোষণার দিন নাশকতার বিষয়ে সোমবার এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘দেশের জনগণ এ মামলার রায়ের জন্য অধীর আগ্রহে রয়েছেন। এ রায়ের মাধ্যমে জাতি একটি কলঙ্ক থেকে মুক্ত হবে। ওই নৃশংস গ্রেনেড হামলার বিচার মানুষ দেখতে চায়। তাই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নেই।’
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে বহুল আলোচিত গ্রেনেড হামলার মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে গ্রেনেড মামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা দুই মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১০ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। গত ১৮ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকায় ১নং অস্থায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন।
Advertisement
আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)।
২০০৮ সালের ১১ জুন মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আখন্দ।
তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়।
ফলে এ মামলায় এখন আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯ জন। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। বাকি আসামিদের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন এবং জামিনে ছিলেন ৮ জন। জামিনে থাকা ৮ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এআর/এমবিআর/জেআইএম