মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে মঙ্গলবার ভোর থেকে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
Advertisement
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘মধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপটি কিছুটা উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসহ হয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৮ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়াসহ ঝড়ো হাওয়া আকারে ৭২ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপটি বর্তমানে মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬৭ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতি গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার আসঙ্কা প্রবল। এর প্রভাবে আগামী দুই থেকে তিনদিন চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।’
নিম্নচাপের প্রভাবে মঙ্গলবার ভোর থেকে চট্টগ্রামে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সকালের বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী কর্মজীবী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ ছাতা নিয়ে বাইরে বের হতে দেখা গেলেও টিপটিপ বৃষ্টিতে জনজীবনে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর হালকা ঠাণ্ডার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দিনমজুর, রিকশাচালকসহ শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষেরা।
Advertisement
এর আগে গতকাল (সোমবার) রাতে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরের সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও জোরদার হয়ে আগামী ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টার মধ্যে গভীর নিম্নচাপ, ৩৪ থেকে ৪২ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় এবং আগামী বৃহস্পতিবার নাগাদ (১১ অক্টোবর) শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। নিম্নচাপটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের খুলনার যেকোনো স্থান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হলে আজ আজ মঙ্গলবার থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকবে এবং উপকূলীয় এলাকাজুড়ে ৭৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে, তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
ইউএন ইকনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক (ইএসসিএপি) প্যানেল নির্ধারিত হিসেবে, এই অতি গভীর নিম্নচাপটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তবে তার নাম হবে ‘টিটলি’। এটি পাকিস্তানের প্রস্তাবিত নাম। ঝড় যেখানেই উৎপন্ন হোক না কেন, ইএসসিএপি-এর পূর্বনির্ধারিত নামগুলো পর্যায়ক্রমে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
Advertisement
অপরদিকে, আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘লুবান’ এর সৃষ্টি হয়েছে। এটি তীব্র ঝড়ে রূপ নিচ্ছে। এটি আগামী ৪ দিনের মধ্যে ওমান ও ইয়েমেনের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর। স্বভাবিকভাবে একই সময়ে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে সচরাচর দেখা যায় না।
পরিবেশবাদীদের দাবি, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে উত্তর ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাড়ছে। পরপর ঘূর্ণিঝড় তৈরি এবং একই সময়ে দুই সাগরে দুটি ঘূর্ণিঝড় তৈরির পরিস্থিতি তাদের সেই মতামতকে আরও জোরালো করল।
এসআর/জেআইএম