আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ‘সোনালি যুগ’ চলছে

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। তবে এই সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন ঘটেছে ২০১৫ সালে; যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা ছিটমহল, ভূমি ও সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে মোদির এই সফরের মাধ্যমে।

Advertisement

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরে প্রাযুক্তিক বিভিন্ন খাত যেমন মহাকাশ, তথ্য ও প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিকস, সাইবার নিরাপত্তা, বেসামরিক পারমাণবিক বিদ্যুৎসহ ৯০টির বেশি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

এছাড়া দুই দেশের বাণিজ্য ৭ বিলিয়ন থেকে বর্তমানে ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সফরের পর থেকে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশ করছে। গত বছর ভারতের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ১১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে (১৩০ মিলিয়ন থেকে ২৮০ মিলিয়ন ডলার)। পাশাপাশি বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ সময়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় ভৈরব সেতু, তিতাস সেতুসহ অতিরিক্ত ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন স্থাপন ও আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন নির্মাণ এবং বিভিন্ন উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করেন।

Advertisement

আরও পড়ুন : নাগরিকত্ব হারানোদের বাংলাদেশে পাঠানো হবে না : হাসিনাকে মোদি

আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রকল্প বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতি ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। এ প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকা থেকে কলকাতার ১৬৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে দাঁড়াবে ৫৫০ কিলোমিটার।

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক কিছু প্রকল্প এখনো চলমান। এর মধ্যে রয়েছে- সুন্দরবনের কোলঘেষে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প, ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভারতে ৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মকর্তা ও দেড় হাজার বিচারকের প্রশিক্ষণ। ২০১৫ সালে মাত্র ৫ লাখ বাংলাদেশিকে ভারতীয় ভিসা দেয়া হলেও ২০১৭ সালের শেষে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ লাখে।

বাংলাদেশে বেশকিছু অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে যৌথভাবে কাজ করছে ভারত-বাংলাদেশ। গত ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে কুলাউড়া-শাহবাজার রেললাইন পুনর্নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ফলে আসামের করিমগঞ্জ ও ভারতের উত্তর-পূর্বের অন্য প্রদেশগুলোর মধ্যে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ চালু হবে।

Advertisement

প্রতিবেশী এ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী গত ১৮ সেপ্টেম্বর আবারও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি ও দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যে ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। এছাড়া বাংলাদেশের রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী, টঙ্গী-জয়দেবপুর রেললাইনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তারা।

আরও পড়ুন : মৈত্রী পাইপলাইনের উদ্বোধন করলেন হাসিনা-মোদি 

বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক পাইপলাইনের ১২৫ কিলোমিটার বাংলাদেশে এবং মাত্র ৫ কিলোমিটার ভারতের ভেতরে নির্মিত হচ্ছে। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে ১০ লাখ টন জ্বালানি সরবরাহ করা হবে। প্রথম বছরে এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত আড়াই লাখ টন ডিজেল পাঠাবে বাংলাদেশে। পরবর্তীতে প্রত্যেক বছর গড়ে ৪ লাখ টন ডিজেল সরবরাহ হবে।

সম্প্রতি সিলেটে ভারতীয় হাইকমিশনের শাখা চালু করা হয়েছে। সিলেট এবং এই অঞ্চলের মানুষের ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তির কাজ সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে এ অফিস চালু করা হয়। ফলে সিলেট এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক ও পর্যটন খাত এগিয়ে নেয়ার নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অতূলনীয় অবদান রাখা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ও স্মরণে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে বাংলাদেশে। ভারত সরকারও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি এন্ট্রি ভিসা, ভারতীয় আর্মড ফোর্স হাসপাতালে বিনামূল্যে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য স্কলারশিপ চালু করেছে।

আরও পড়ুন : জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে একমত হাসিনা-মোদি

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ২০০৬ সালে ভারত সরকার স্কলারশিপ চালু করে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে নতুন করে আবারো স্কলারশিপের ঘোষণা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ভারত সরকারের নেয়া এই দুই প্রকল্পে ৫৬ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এ প্রকল্প থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অন্তত ২১ হাজার সদস্য উপকার ভোগ করছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় চরম কষ্ট সহ্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের সেই উৎসর্গের স্বীকৃতি হিসেবে ভারত সরকারও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে। প্রত্যেক বছর কলকাতায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের একদল মুক্তিযোদ্ধাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা, জ্যেষ্ঠ নাগরিক, নারী আবেদনকারীদের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে ভারত। ২০১৭ সালে ঢাকা-খুলনা-কলকাতা বাস এবং খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস ও ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু করা হয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিবেশী এ দুই দেশ সম্পর্ককে ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

সূত্র : ইকোনমিক টাইমস।

এসআইএস/আরআইপি