দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা প্রায় চার হাজার গায়েবি মামলায় মৃত ব্যক্তি কিংবা সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের আসামি করায় পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
আদালত বলেছেন, ‘এ ধরনের মামলায় (গায়েবি) পুলিশের ভাবমূর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। খন্দকার মাহবুব হোসেনের (সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান) মতো লোকদের বিরুদ্ধে এমন (গায়েবি) মামলা হলে জনগণের কাছে কী ম্যাসেজ যাবে?
এ সংক্রান্ত রিটের শুনানিতে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন প্রশ্ন তোলেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ। তাদের সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা, ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান প্রমুখ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।
Advertisement
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল আদালতের প্রশ্নের জবাবে বলেন, উনি (খন্দকার মাহবুব হোসেন) তো শুধু আইনজীবীই নন, একটি রাজনৈতিক দলের পদধারী।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, এটা কী বললেন? তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, এটা তো আইনে নেই। আর আগে আইনজীবীরাই বেশি রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।
এরপর এ মামলায় ড. কামাল হোসেন শুনানি করেন। শুনানির শেষ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করবেন বলে সময় চাইলে আদালত আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মামলাটি মুলতবি করেন এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন আদালত।
বিএনপির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা বলেন, গত ১ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় চার হাজার মামলা হয়। ১০ বছর আগে মারা গেছেন এমন লোকদেরও এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধেও একইস্থানে পরপর তিন-চারদিনে ৪-৫টি মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এর প্রত্যেকটি মামলায় তিনি ককটেল বিস্ফোরণের আসামি। তার মতো ব্যক্তি সন্ধ্যার পরে গিয়ে ককটেল মারতে পারেন এটা আদৌ কি বিশ্বাসযোগ্য? ২০০৭ সালে মারা গেছেন, কিংবা চলতি বছর হজে ছিলেন, বিদেশে থাকেন- এমন লোকদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।
Advertisement
এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন অ্যাডভোকেট একে খান। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ্ মিয়ার পক্ষে এই রিট করা হয়।
রিট আবেদনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা চার হাজার মামলা এবং তিন লাখেরও বেশি লোককে আসামি করার কারণ জানতে চাওয়া হয়। একইসঙ্গে, এ বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
এফএইচ/জেডএ/পিআর