বিশেষ প্রতিবেদন

এ যেন এক ছিটমহল!

এবারো ভোটার হতে পারলো না দিনাজপুর সদর ও বিরল উপজেলার প্রায় ৪ হাজার মানুষ। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই মানুষগুলো। আর ভোটার হতে না পারায় তারা পায়নি জাতীয় পরিচয়পত্রও। পরিচয়পত্র না থাকায় পদে পদে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষগুলোকে। কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তারা তাদের সঠিক পরিচয় দিতে পারছেন না। ভোটার না হওয়া এবং জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকায় সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে তার বঞ্চিত। তাদের কোনো জনপ্রতিনিধিও নেই। এ যেন এক নতুন ছিটমহলে পরিণত হয়েছে।এরকমই ঘটনার শিকার হয়েছেন দিনাজপুর শহর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মাঝাডাঙ্গা সুইহারীপাড়া গ্রামের মানুষ। গ্রামটিতে প্রায় ১০ হাজার লোকের বসবাস। কিন্তু কেউ ভোটার হতে পারেনি।গত ২০০৮ সালের ৯ম ও ২০১৩ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কোনো নির্বাচনেই ভোট দিতে পারেননি এই এলাকার মানুষ।এলাকাবাসী জানিয়েছে, আগে এই গ্রামটি দিনাজপুর সদর উপজেলার অর্ন্তভূক্ত ছিল। কিন্তু গত ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে সীমানা নির্ধারণের মাপযোগের সময় এই এলাকাটির একটি বৃহৎ অংশ বিরল উপজেলায় অর্ন্তভূক্ত হয়। কিন্তু এই এলাকার মানুষ সেটা মেনে নিতে পারেনি। এরপর বারবার তারা যোগাযোগ করেছে ভোটার হতে। গিয়েছেন উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও হতে পারেননি ভোটার, পাননি কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র। এলাকার অনেকেই জানালেন, তাদের ভোটার না হওয়ার কথা। বললেন তারা গত ৩টি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। তারা চাচ্ছেন ভোটার হতে। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার কারণে চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। তারা চাইলেন এই সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ। এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম জানালেন, ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ে সীমানা নির্ধারণের পর থেকেই তারা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।  গ্রামের মানুষ এবার আশায় বুক বেধেছিল ভোটার হবে। কিন্তু এবারো সমাধান হলো না।দিনাজপুর সদর উপজেলার ১ নং চেহেলগাজী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমীর আলী জাগো নিউজকে বলেন, মাঝাডাঙ্গা সুইহারীপাড়া বরাবরই আমাদের সাথে ছিল।  তারা ১ নং চেহেলগাজী ইউনিয়নে ভোট দিয়ে আসছিল। তারা এখনো এই ইউনিয়নের ভোটার হতে চায়। কিন্তু তাদেরকে ভোটার করা হচ্ছেনা। তারা বড় অসহায় অবস্থায় রয়েছে। নাগরিক সব সেবা থেকে বঞ্চিত।এ ব্যাপারে কোনো মামলা মোকদ্দমা আছে কি না জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমীর আলী জানান, কোনো মামলা নেই। তবে এই এলাকার মানুষ ১ নং চেহেলগাজী ইউনিয়নে ভোটার হওয়ার জন্য বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেছেন।দিনাজপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে আমার কোনো কিছু জানা নেই। ভোটার না হওয়ায় এই এলাকার মানুষ শুধু নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না, জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় চাকরিসহ পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই তাদেরকে ভোটার ও জাতীয় পরিচয়পত্রের আওতায় নিয়ে আসা হোক এমনটিই প্রত্যাশা এখানকার মানুষের।এমএএস/এআরএস/এমএস

Advertisement