দেশজুড়ে

সরিষার মধ্যেই ভূত

ফিটনেস সনদ ছাড়াই রাস্তায় চলছে রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) অর্ধশত যানবাহন। তাছাড়া ১৩টি মোটরযানের কাগজপত্রের হদিসই পায়নি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আর এসব যানেই চড়ে বেড়াচ্ছেন আরএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

Advertisement

ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরতে যখন রাস্তায় তৎপর আরএমপি তখন নিজেদের গাড়ির এ অবস্থাকে সরিষার ভেতর ভূত আখ্যা দেয়াই যায়। আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার রাজস্ব ফাঁকির এই প্রবণতাকে সুশাসনের পরিপন্থী বলছেন বিশিষ্টজনরা। তবে আরএমপির ভাষ্য, শিগগিরই ফিটনেট হালনাগাদ প্রক্রিয়া শেষ করবে তারা।

নগর পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, নগর পুলিশের ৭১টি যানবাহনের কাজগপত্র মেয়াদ উত্তীর্ণ। এগুলোর কাগজপত্র কখনোই যাচাই-বাছাই করা হয়নি। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের সড়ক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। এরপর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।

তবে পুলিশের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, কাগজপত্রের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বহু আগেই। কাগজপত্র হালনাগাদ করতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিআরটিএকে চিঠি দিয়েছে আরএমপি। সর্বশেষ গত ১৬ আগস্ট আরেক দফা চিঠি দেয়া হয়। এরই মধ্যে হালনাগাদ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement

এদিকে নগর পুলিশের যানবাহনের তালিকা অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একমাত্র প্রিজনভ্যানের (রাজ মেট্রো ম-০৫-০০০১) ফিটনেস সনদের মেয়াদ পেরিয়েছে ১৯৯৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরপর আর সেটির হালনাগাদ নেই। একমাত্র রেকারের (রাজ মেট্রো শ-১১-০০০১) ফিটনেস মেয়দ উত্তীর্ণ হয়েছে ২০০২ সালের ১০ অক্টোবর। এটিরও ফিটনেস হালনাগাদ করা হয়নি।

প্রায় ৩১ বছর আগে মেয়দোত্তীর্ণ হয়েছে আরএমপির একটি পিকআপের (ঢাকা মেট্রো ন-৭৩৪৮)। বাকি ১৫ পিকআপের মধ্যে ১৯৯৩ সালে একটি, পরের বছর তিনটি, ১৯৯৫ সালে একটি, ১৯৯৭ সালে দুটি, পরের বছর আরেকটি, ১৯৯৯ সালে দুটি, ২০০০ সালে একটি, ২০০১ সালে আরেকটি, ২০০২ সালে দুটি এবং সর্বশেষ ২০০৪ সালে আরেকটি পিকআপের ফিটনেস মেয়দোত্তীর্ণ হয়।

এছাড়া আরএমপির ৯টি জিপ, এটি মাইক্রোবাস, দুটি টেম্পু, একটি কার, ৬টি ট্রাক, একটি বাস এবং দুটি অ্যাম্বুলেন্স দিব্যি চলছে ফিটনেস হালনাগান ছাড়াই। এসবের একটিরও কাগজপত্র হালনাগাদ দীর্ঘ দিনেও হয়নি।

এদিকে রাজশাহীর সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ যান ঠেকাতে ব্যস্ত ট্রাফিক পুলিশ। চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ইনস্যুরেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক হচ্ছে। কাগজপত্রের ঘাটতি থাকলে আর রক্ষা নেই। সরাসরি মামলা এমনকি জরিমানাও আদায় করছে পুলিশ।

Advertisement

আইনত, যানবাহনের ফিটনেস হালনাগাদ না থাকা দণ্ডনীয় অপরাধ। তাহলে সড়কে পুলিশেরই এসব অবৈধ যান কিভাবে চলছে? এ প্রশ্নের জবাব নেই চেকপোস্টে থাকা সার্জেন্টদের কাছে।

তবে সুজন আঞ্চলিক সমন্বয়কারী সুব্রত কুমার পাল পুলিশের এই কর্মকাণ্ডকে সুশাসনের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, যে রাজস্ব দেশকে এগিয়ে নিতে বড় ভূমিকা রাখে, সেক্ষেত্রে সরকারেরই একটি প্রতিষ্ঠান রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।

যানবাহনের কাগজপত্র হালনাগাদ না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে আরএমপির মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম বলেন, মেয়াদ পার হওয়া গাড়িগুলোর কাগজপত্র শিগগিরই হালনাগাদ করা হবে। এরইমধ্যে এই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

জানতে চাইলে বিআরটিএ রাজশাহী সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) এএসএম কামরুল হাসান বলেন, আরএমপির বেশ কিছু যানবাহনের কাগজপত্র হালনাগাদে চিঠি দিয়েছে। এ খাতে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে তা জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।

তারা জানিয়েছেন, তালিকায় থাকা কিছু যানবাহনের অনলাইন নিবন্ধন নেই। এগুলো অনলাইন নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া মেয়াদ পার পাওয়া ৫৮টি যানের কাগজপত্র হালনাগাদ করতে জরিমানাসহ প্রায় ২৩ লাখ টাকা ব্যয় হবে। চিঠি দিয়ে পরে সেটি জানিয়ে দেয়া হয়েছে আরএমপিকে। অচিরেই এই প্রক্রিয়া শেষ হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

অপরদিকে বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহীতে কেবল ফিটনেস সনদ নিতে হবে এমন যানবাহন রয়েছে ৭ হাজার। এর মধ্যে ফিটনেস হালনাগাদ নেই ২ হাজার ২০০ যানের। এসব যানের অধিকাংশ বাণিজ্যিক যানবাহন। এছাড়া জেলা পুলিশ, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নেসকোর বেশ কিছু যানের ফিটনেস হালনাগাদ নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক যানবাহনেরও একই দশা। কাগজপত্র হালনাগাদে চিঠি চালাচালির কথা জানিয়েছে বিআরটিএ।

এফএ/জেআইএম