সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট সুনামিতে প্রায় সাড়ে ১৩শ’ মানুষ মারা গেছেন। সুনামির কয়েক সপ্তাহ আগেই একদল গবেষণা বলেছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির উচ্চতা অল্প বৃদ্ধি পেলেই এ সুনামির ভয়াবহতার মাত্রা অনেকখানি বেড়ে যাবে। তবে ভবিষ্যতে ছোট সুনামিগুলোও আজকের দিনের বড় বড় সুনামির ভয়াবহতা বয়ে আনবে বলে মনে করছেন ভার্জিনিয়া টেক-এর ভূতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রবার্ট ওয়াইস।
Advertisement
ওয়াইস সেই গবেষক দলের একজন। যারা দেখিয়েছেন, বিশ্বের যেসব এলাকায় পানির উচ্চতা বাড়ছে সেখানে সুনামি কতটা বিপদজনক হতে পারে। গত মাসে বিখ্যাত জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ প্রকাশিত তাদের গবেষণাপত্রটির শিরোনাম ছিল, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ০ দশমিক ৫ মিটার (১ দশমিক ৫ ফুট) বাড়লে মাকাউতে সুনামি হবে দ্বিগুণ ভয়াবহ’।
ওই গবেষণাপত্রের আরেক লেখক ছিলেন সিঙ্গাপুরের আর্থ অবজারভেটরির সহযোগী অধ্যাপক অ্যাডাম সুইটজার। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার পালুতে যে সুনামি হয়েছে ৫০ বছর পর তার মাত্রা হবে আরও ভয়াবহ। কারণ, পৃথিবীর এ অংশে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়ছে।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সুনামি ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি দু’টি ভিন্ন বিষয়। যদিও ধারণা করা হতো পানির উচ্চতা বাড়লে নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হবে কিংবা ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর কারণে এসব অঞ্চলে বড় বিপর্যয় ঘটবে। তবে পানি বাড়ার পর সুনামি হলে সেখানকার পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার গবেষণা খুব একটা ছিল না।
Advertisement
ওয়াইস বলেন, মাত্র পাঁচ থেকে দশ বছর আগেও যে পরিস্থিতিকে সবচেয়ে খারাপ মনে করা হতো তাকে এখন মাঝারি মানের বলে মনে করছেন গবেষকরা। সামগ্রিকভাবে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি মানে ছোট ছোট সুনামি বেড়ে যাওয়া। যদিও ভবিষ্যতে এসব ছোট ছোট সুনামি আর ছোট থাকবে না।
সুনামির হাত থেকে বাদ যাবে না যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপওওয়াইস-এর মতে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়লে সুনামির ছোবল থেকে মুক্তি পাবে না অনেক উপকূল, যত দূরেই থাকুক না কেন। ২০১১ সালের জাপানের সুনামি ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে পৌঁছেছে মাত্র ১০ ঘণ্টায়। যার ঘণ্টায় গতিবেগ ছিল ৭০০ কিলোমিটার। এ অবস্থা ভবিষ্যতে আরেও কঠিন হবে।
ওয়াইস আরও বলেন, আট থেকে দশ মিটার উচ্চতার ঢেউ আক্রান্ত করতে পারে ফ্রেঞ্চ উপকূলকেও। অর্থাৎ সুনামির হাত থেকে ইউরোপ-অ্যামেরিকা কেউই নিরাপদ নয়।
সুনামি থেকে বাঁচার উপায়ঝড়-বন্যার মতো দুর্যোগ থেকে প্রাণহানি বা অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে নানা উপায় অবলম্বন করা হয়। কিন্তু সুনামির ভয়াবহতা তার চেয়ে অনেক বেশি। তাই কোনো ধরনের ব্যবস্থাই এর প্রতিরোধক নয় বলে মনে করছেন গবেষকরা। তবে একমাত্র উপায় জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো।
Advertisement
সুইটজার-এর মতে, ‘তা (জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো) করতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করতে হবে এবং কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে।’ সূত্র : ডয়চে ভেলে
আরএস/জেআইএম