দেশজুড়ে

আ.লীগ সরব, বাকিরা নীরব

আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা হয়নি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতেও হয়তো আরো কিছুটা সময় লাগবে। তবে সে অপেক্ষায় বসে নেই নির্বাচনে অংশ নিতে চাওয়া সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বেশকিছু দিন আগে থেকেই তাদের অনেকেই নেমে পড়েছেন ভোটের মাঠে। বিভিন্ন সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যে যেভাবে পারছেন নিজের পক্ষে জনসমর্থন জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে সরাসরি নিজের নাম উল্লেখ না করে দল বা প্রতীকের নামে চালাচ্ছেন প্রচারণা।

Advertisement

তবে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ বেশ সরব হলেও অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি।

লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম)

এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি। মোতাহার হোসেনের পাশাপাশি ওই আসন থেকে রুহুল আমিন বাবুলও এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন। মনোনয়ন নিয়ে এই আসনে সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল মধ্যে চলছে দলীয় কোন্দল।

Advertisement

তবে দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা মোতাহার হোসেন এমপি হওয়ায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনেকটাই বাবুলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। ফলে নিজের উপজেলা হাতীবান্ধা সামলে আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাটগ্রামেও বিভিন্ন ভাবে পদচারণা রেখে চলেছেন এই সংসদ সদস্য।

এছাড়া রুহুল আমিন বাবুল দুই বারের টানা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে উপজেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও ঘোষণা হয়নি বিএনপির কমিটি। হাতীবান্ধায় দলের মধ্যে স্পষ্ট বিভক্তি থাকলেও পাটগ্রামে বিএনপির সকলেই আপাতত একত্রে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, বর্তমান সরকারের আমলে হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম উপজেলায় সবমিলিয়ে ৬০টিরও বেশি মামলা হয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। মামলায় জর্জরিত দলটি।

Advertisement

সবমিলিয়ে নানা প্রতীকূলতার মাঝে একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে এখন পর্যন্ত খুব একটা প্রকাশ্যে নির্বাচন কেন্দ্রীক সভা-সমাবেশ করতে দেখা যাচ্ছে না তাদের। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক নেতা হাতীবান্ধা-পাটগ্রামে ‘কৌশলী’ প্রচারণা চালাতে শুরু করেছেন বেশকিছু দিন আগে থেকেই।

ওই আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এমএ শাহীন আকন্দ এবং হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান সেলিম ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম পাটোয়ারী উজ্জল।

অপরদিকে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মেজর (অব.) খালেদ হোসেনের নাম দলের চেয়ারম্যান এইচ.এম এরশাদ ঘোষণা করলেও নির্বাচনী কোনো কর্মকাণ্ডে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি তাকে।

এছাড়া হাতীবান্ধা উপজেলা জাপার আহ্বায়ক এমজি মোস্তফা ও সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মিলনকে ‘কোনো কারণ ছাড়াই’ অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় জাপার একটি অংশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।

লালমনিরহাট-২ (কালীগঞ্জ ও আদিতমারী)

এ আসনের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সকলেই চলেন নুরুজ্জামান আহমেদের নেতৃত্বে। তিনি গত নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে প্রথমে খাদ্য প্রতিমন্ত্রী ও পরে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে নুরুজ্জামান আহমেদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই পাল্টাতে থাকে কালীগঞ্জের পাশাপাশি আদিতমারীর চিত্র।

এ আসনে আওয়ামী লীগের ‘চূড়ান্ত’ প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে বর্তমান এমপি ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নাম।

তবে তার পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে শোনা যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও ব্যবসায়ী সিরাজুল হকের নামও।

এদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে শোনা যাচ্ছে সালেহ উদ্দিন আহমেদ হেলালের নাম। তিনি দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে তিনি ইতোমধ্যে নেমে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে। এর পাশাপাশি জেলা বিএনপির সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন।

এছাড়া মাঠ গোছানোর কাজ করছেন জেলা জাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন বাবুল। যিনি কয়েক বছর আগে বিএনপি থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে এরশাদ তাকে লালমনিরহাট-২ আসনের দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণাও করেছেন।

লালমনিরহাট-৩ (সদর)

লালমনিরহাট-৩ সদর আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবু সালেহ মো. সাঈদ দুলাল। তবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই ওই এমপিকে আর নিজের নির্বাচনী এলাকায় খুব একটা পাওয়া যায়নি। মূলত শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তিনি বেশিরভাগ সময় ঢাকাতেই থাকেন। এরপরও একাদশ নির্বাচনের জন্য এই সংসদ সদস্য দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।

এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় আরও উঠে এসেছে জেলা আওয়ামী লীগের ‘কাণ্ডারী’ হিসেবে পরিচিত অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের নাম। যিনি একাধারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে তিনি নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমি, সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের পরপর দুবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আদিতমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের নাম মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আরও শোনা যাচ্ছে।

এদিকে এ আসনে বিএনপির একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএপির সভাপতি সাবেক উপ-মন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। এ আসনে শক্তিশালী অবস্থানে আছে বিএনপি।

নেতাকর্মীদের কাছে বৈচিত্রময় ও ব্যতিক্রমী আন্দোলন-কর্মসূচির ‘উদ্ভাবক’ হিসেবে পরিচিত এই অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। যিনি গত জোট সরকারের আমলে লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে উপমন্ত্রী হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেন। নেতাকর্মীদের অসংখ্য মামলার মধ্যদিয়েও আন্দোলন কর্মসূচিতে কৌশলী নেতৃত্বে দিয়ে আসছেন তিনি। সরাসরি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতে না পারলেও বিকল্প কিছু কর্মসূচির মাধ্যমে দলীয় লোকজনকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন এ নেতা। এ সবের পাশাপাশি তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী গণসংযোগও।

অপরদিকে লালমনিরহাট-৩ আসন থেকে জিএম কাদের দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রথমে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পরে বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় সীদ্ধান্তের কারণে তিনি নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে আসেন।

তবে একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তিনি এখন মাঝেমধ্যেই লালমনিরহাট আসছেন। বর্তমানে এই আসনে শুধুমাত্র তারই নাম শোনা যাচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে।

এফএ/জেআইএম