অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় সংকটে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। ডুবতে থাকা ব্যাংকটির হাল ধরতে চাচ্ছে না কেউ। শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ব্যাংকটি।
Advertisement
বেসিক ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, ঋণ কেলেঙ্কারি, পর্ষদের অপকর্ম আর প্রভাবশালী পরিচালকদের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নিতে নারাজ দক্ষ ব্যাংকাররা। এরপরেও বেশ গুরুত্ব দিয়ে অভিজ্ঞ ব্যাংকারকে এমডির জন্য খোঁজা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি কাঙ্ক্ষিত এমডির।
এর আগে বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আউয়াল খান যোগদানের ১০ মাসের মাথায় গত ১৪ আগস্ট ব্যাংকের ৪৪৪তম সভায় পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি শারীরিক অসুস্থতা ও ব্যক্তিগত বিষয়ের কথা উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন : এমডির পদত্যাগে সঙ্কটে পড়বে না বেসিক ব্যাংক : অর্থমন্ত্রী
Advertisement
তবে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, নানা অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত বেসিক ব্যাংকে নতুন করে শুরু হয়েছে ঋণ অনুমোদন এবং ঋণ পুনঃতফসিলের লবিং। এ নিয়ে পর্ষদ সদস্যদের সঙ্গে এমডির মতপার্থক্য চলছিল। ব্যাংক পর্ষদের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত এমডি পদ থেকে সরে যান আউয়াল খান। গত ১৪ আগস্ট ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। এরপর ৩০ আগস্ট ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় আউয়াল খান পদত্যাগ করলেও আগামী তিন মাস অফিস করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। ফলে পদত্যাগের পরও বেসিক ব্যাংকের এমডি হিসেবে এখন পর্যন্ত বহাল রয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, বর্তমান এমডি ইস্তফা দিলেও আগামী তিন মাস অফিস করবেন। তবে তার ইস্তফার পরপরই নতুন এমডির খোঁজ শুরু হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত এমডি না পেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।
বেসিক ব্যাংকের এমডি পদে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের যোগ্যতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ বছরের ব্যাংকিং পেশার অভিজ্ঞতা। স্বীকৃতি বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং বয়স ৬০ বছরের নিচে। আগ্রহী প্রার্থীদের ২২ অক্টোবরের মধ্যে আবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন : বেসিক ব্যাংকে গৃহবিবাদ!
Advertisement
এ বিষয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা একজন যোগ্য এমডি খোঁজ করছি। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। যেন সবাই আবেদন করতে পারে।
যোগ্য ব্যাংকাররা বেসিক ব্যাংকে আসতে চাচ্ছে না এমন অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে চেয়ারম্যান বলেন, এ পর্যন্ত অনেকেই এসেছে। অনেকের রেফারেন্সেও আমার সঙ্গে দেখা করেছে। আমরা যাচাই বাছাই করছি। একজন ভালো, দক্ষ ও যোগ্য প্রার্থী খুঁজছি।
এর আগে গত ১ নভেম্বর তিন বছরের চুক্তিতে আউয়াল খান বেসিক ব্যাংকে এমডির দায়িত্ব নেন। অভিজ্ঞ এ ব্যাংকার বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এমডি ছিলেন। এর আগে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এবং অগ্রণী ব্যাংকে ডিএমডির দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু দায়িত্বে থাকাকালীন ২০০৯-১৩ সাল পর্যন্ত ঋণ জালিয়াতি হয় চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৪ বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের লোকসান হয়েছে দুই হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, ব্যাংকটির ৬৮টি শাখার মধ্যে ২১টিই লোকসানে রয়েছে।
আরও পড়ুন : বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির সকল প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ
সর্বশেষ চলতি বছরের জুন শেষে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ৫৭ দশমিক ০৮ শতাংশ খেলাপি।
এদিকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বেসিক ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে শেখ আবদুল হাই বাচ্চু চেয়ারম্যান হওয়ার পর ২০১৩ সালের মার্চে ঋণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। ওই চার বছর তিন মাসে ব্যাংকটি ছয় হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়, যার প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভেঙে দেয়া হয়।
পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে ঋণ বিতরণে অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ার পর প্রথমে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করা হয়। ২০১৪ সালের ২৯ মে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ৪ জুলাই অর্থমন্ত্রীর বাসায় যেয়ে পদত্যাগপত্র দেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু।
এসআই/এএইচ/আরআইপি