কুড়িগ্রামে গত এক সপ্তাহ ধরে দুধকুমার নদীর তীব্র ভাঙনে অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর, গাছপালা এবং দেড়শ মিটার আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে একটি স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মাদরসা। যে কোনো সময় নদীগর্ভে প্রতিষ্ঠানগুলো বিলিন হয়ে যেতে পারে। গত দু’মাস ধরে প্রলয়ঙ্করী ভাঙনে আড়াই শতাধিক বাড়ি-ঘর নদীতে বিলিন হয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে। ভাঙন কবলিত গৃহহীন মানুষগুলো এখন খোলা স্থানে অবস্থান করছে।
Advertisement
রোববার সকালে সরজমিন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গ্রামটিতে যাওয়ার একমাত্র সেমি বাঁধ রাস্তাটির অর্ধেকাংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। চলছে তীব্র ভাঙন। ভাঙন কবলিতরা তাদের ঘর-বাড়ি ভেঙে অন্যত্র সড়িয়ে নিচ্ছে। কেউবা কাটছে গাছপালা। সেই ফাঁকে উন্মুক্ত আকাশে সকালের খাবার সাড়ছে কয়েকটি পরিবার। বাঁধ সংলগ্ন বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোয়ালমারী কমিউনিটি ক্লিনিক ও বোয়ালমারী দাখিল মাদরাসা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। যে কোনো সময় দুধকুমার নদীর পেটে চলে যেতে পারে প্রতিষ্ঠান তিনটি।
ওই গ্রামের জহুর আলী, নজরুল ও রোস্তম জানান, জায়গা জমি যা আছিল। নদী খায়া গেল। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই। এই গ্রামের প্রাক্তন মহিলা সদস্য পারুল আক্তার জানান, গত তিনদিনে ৩২টি বাড়ি গৃহহীন হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ইতোমধ্যে বাড়ি সড়িয়েছে নজরুল, জহুর আলী, রোস্তম, আল আমিন, খৈমুদ্দি, এনতাল, শমসের মাস্টার, মহুরন, শাহের আলী, ইসমাঈল, আজগার, এরশাদুল, আশরাফুল, ফরিদুল, আজিজুল, নুর ইসলাম, কাঞ্চা, জাহাঙ্গীর, সফিকুল, ছয়ফুল, শাহারুদ্দি, ছাইফুল, ফুলবর, আমিনুল, আতাউর, সহিদুল ও রহিমা। এছাড়া ঘড় সড়াচ্ছে আলী হোসেন, মজিবর, ইসমাঈল, ফজলে রহমান ও ইছিমুদ্দি।
এলাকার লোকজন জানান, ভাঙনে প্রতিবছর হাজার হাজার পরিবার বসতভিটা, আবাদি জমিন হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে যাচ্ছে। বিপুল সংখ্যক গৃহহীন পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারছে না কেউ। সরকারিভাবে ঢেউটিন ছাড়া আর কিছুই কপালে জুটছে না তাদের। ভাঙনে ভূমিহীন পরিবারগুলো অন্যের বাড়িতে কিংবা রাস্তার ধারে মানবেতরভাবে জীবন যাপন করছে।
Advertisement
বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন জানান, সামনে বাৎসরিক সমাপনী পরীক্ষা। স্কুলটি ভেঙে গেলে শিক্ষার্থী নিয়ে চরম বিপদে পড়ে যাব। এছাড়াও তিনি জানান, স্কুল ভবনটি নিলামের জন্য গত ২৬ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
নুনখাওয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন ব্যাপারী জানান, আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেন-দরবার করে কিছু জিও ব্যাগ পেয়েছি কিন্তু তাতে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের কাছে দাবি দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, ভাঙনের খবর আমরা পেয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আমরা আশা করছি সবাই মিলে ভাঙন রোধ করতে সক্ষম হবো।
Advertisement
নাজমুল/এমএএস/আরআইপি