আন্তর্জাতিক

যে দেশে সমকামিতার শাস্তি ধর্ষণ

ক্যামেরুনে ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদুর চর্চা অবৈধ হলেও সমকামীদের এর আওতায় এনে শাস্তি দেয়া হয়। সমকামী নারীদের ডাইনি আখ্যা দিয়ে নির্যাতন ও ধর্ষণ করার নজিরও আছে অনেক।

Advertisement

এমন কয়েকটি ঘটনাই তুলে ধরেছে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন। ক্যামেরুনে বহু সমকামী নারী-পুরুষ নির্যাতনের শিকার হলেও সবাই নিজেদের নির্যাতিত হওয়ার কথা জানাতে ভয় পায়। তবে ভিভিয়ানে ও ফেদেরিকে এখন অন্য দেশে অবস্থান করায় পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।

লেসবিয়ান হওয়ার কারণে ভিভিয়ানেকে ডাইনি আখ্যা দিয়েছিল সেখানকার গির্জা। ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াওন্দেতে কেবল গির্জায় নয়, তার স্কুলেও শুনতে হয়েছে, সমকামী হওয়া কেবল পাপ নয়, এর মানে হলো কোনো খারাপ আত্মা তোমার উপর ভর করেছে।

ভিভিয়ানে এখন ফ্রান্সে আছেন। তার প্রেমিকার সহায়তায় সেখানে আশ্রয় পেয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই ফোনে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে ঘটনাটি জানান।

Advertisement

আরও পড়ুন : নোবেল পুরস্কার বাতিল নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই : সু চি

ভিভিয়ানের কাছে মনে হয়েছিল, চার্চে যা বলা হয়েছে তাই হয়ত ঠিক, খারাপ কোনো আত্মা ভর করার কারণেই হয়ত মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন তিনি। তাই গির্জায় প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন এ থেকে মুক্তি পেতে। এর ফল হলো উল্টা। ১৪ বছরের ভিভিয়ানকে চার বছর পর ডাইনি ঘোষণা করা হলো, দেয়ালে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হলো তাকে। এখানেই শেষ নয়, যে ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল, পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে ওই ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করল।

প্রায় একই চিত্র দেখা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত আর ইকুয়েডরে। পরিবারের সদস্য, অপরিচিত এবং অপরাধীদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন সেই দেশগুলোর সমকামীরাও। সেখানেও অনেকেই মনে করেন, সমকামিতা একটা মানসিক ব্যাধি এবং ধর্ষণই হলো এর ওষুধ।

ভিভিয়ানে একা নন, ক্যামেরুনের বেশ কয়েকজন সমকামী এসব ঘটনার কথা জানিয়েছেন থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে। এমনকি সমকামী পুরুষ ও নারীকে তাদের পরিবারের সদস্যরা হত্যাও করেন। ক্যামেরুনে সাধারণ মানুষের মধ্যে কালো জাদুর প্রতি অনেকেরই বিশ্বাস রয়েছে। যদিও দেশে এর চর্চা করা অবৈধ। কিন্তু এসব রোধে কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেয় না।

Advertisement

আফ্রিকাজুড়ে সমলিঙ্গের সম্পর্ক নিয়ে ট্যাবু রয়েছে। ২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্স অ্যান্ড ইন্টারসেক্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, আফ্রিকার ৫৪টি দেশের মধ্যে ৩৩টিতে সমকামিতা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। সমকামী প্রমাণ হলে ক্যামেরুনে পাঁচ বছর কারাভোগ করতে হয়।

আরও পড়ুন : সৌদি কনস্যুলেটে যুবরাজের সমালোচক সাংবাদিক খুন, নেপথ্যে কী?

দেশটিতে গত বছর সমকামীদের উপর ৬০০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রতি ৫ জন সমকামী নারীর মধ্যে একজন এবং প্রতি ১০ জন সমকামী পুরুষের মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।

ভিভিয়ানের পরিবার যখন তার ব্যাপারটা জানতে পারে, তারা তাকে গ্রামের এক ওঝার কাছে নিয়ে যায়। ওই ব্যক্তি প্রথমে তাকে মুরগির রক্ত পান করতে বলে, এরপর মলাশয়ে মরিচের গুড়া ঢুকিয়ে দেয়। তাদের ধারণা, এর ফলে সে যে যন্ত্রণা পাবে, তার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হবে।

পরে স্থানীয় গির্জার এক যাজকের কাছে যৌতুক নিয়ে ভিভিয়েনকে বিয়ে দেয় পরিবার। ওই ব্যক্তি তার চেয়ে ৩০ বছরের বড়। ক্যামেরুনে ধর্ষণ যদিও অপরাধ হিসেবে গণ্য, কিন্তু স্বামীর দ্বারা ধর্ষণ অপরাধ নয়। ভিভিয়ান বলেন, ক্যামেরুনে যাজকরা ঈশ্বরের মতো। ঈশ্বর তো ধর্ষণ করতে পারেন না। আর কেউ যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে, তাহলে সে শয়তান হিসেবে চিহ্নিত হয়।

আরও পড়ুন : এক কৈ মাছের দাম ১৫ কোটি টাকা!

ফেদেরিকের ঘটনাও অনেকটা একই রকম। ২০১৬ সালে তিনি যখন কর্মস্থল থেকে কাজ শেষে ফিরছিলেন, তখন রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয় তাকে। ধর্ষণকারীরা বলছিল, সমকামিতার জন্যই এ শাস্তি দেয়া হলো তাকে।

ফেদেরিকে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে জানান, তার এক বন্ধু ধর্ষিত হওয়ার পর আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। তবে কষ্টের চেয়ে তার মধ্যে রাগ হয়েছিল বেশি। তাই তিনি সমকামীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। ক্যামেরুন থেকে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি জানান, কেউ আমাদের রক্ষা করবে না, কেউ আমাদের মুক্তি দিতে এগিয়ে আসবে না। এটা আমাদের লড়াই, যা আমাদেরই চালিয়ে যেতে হবে। ডিডব্লিউ।

এসআইএস/জেআইএম