খেলাধুলা

শান্ত মুমিনুল মোসাদ্দেক আরিফুল; কার কার কপাল পুড়বে?

সাকিব আল হাসান একাই দুজন; ‘টু ইন ওয়ান’। তার বিকল্প মানেই একজন বাঁহাতি স্পিনার পাশাপাশি একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। খুব স্বাভাবিকভাবেই সাকিব না থাকার অর্থ ওই ক্যাটাগরির দুজনের অন্তর্ভুক্তি। তাই তো এশিয়া কাপে সাকিব বাঁহাতের কনিষ্ঠার ইনজুরিতে ছিটকে পড়ার পরে তার বিকল্প হিসেবে একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস ও বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল অপু।

Advertisement

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজে সাকিব নেই। তাই তার একজনের বদলে নিতে হবে দুজন ক্রিকেটার। সে কারণেই ১৪ জনের বদলে ঘরের মাঠে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড করলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।

আগেই জানা, আঙুলের চিকিৎসার জন্য অস্ট্রেলিয়া যাওয়া সাকিবের পাশাপাশি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজে থাকছেন না দলের প্রধান ওপেনার তামিম ইকবালও। এখন তামিম-সাকিবকে ছাড়াই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দল সাজাতে হচ্ছে নির্বাচকদের।

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর দেয়া তথ্য অনুযায়ী ৩-৪ দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হয়ে যাবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দল। আজ সকালে জাগোনিউজকে নান্নু জানালেন, ‘আমরা ১১ অক্টোবরের মধ্যে দল চূড়ান্ত করে বোর্ডে জমা দিয়ে দেবো।’

Advertisement

কেমন হবে দল? সাকিব-তামিম ছাড়াও বাকি তিন সিনিয়র মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম কি থাকছেন? তাদেরও কম বেশি ইনজুরি সমস্যা রয়েছে। মাশরাফি ভুগছেন ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙুলের সমস্যায়, পাশাপাশি উরুতেও রয়েছে চোট। মুশফিকের পাজরে ব্যথা পুরনো, মাহমুদউল্লাহরও রয়েছে ছোটখাটো ইনজুরি।

দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই তিন স্তম্ভকে বিশ্রামে রেখে কজন সম্ভাবনাময় তরুণকে সুযোগ দেয়ার চাপা গুঞ্জনও আছে। প্রধান নির্বাচক সে গুঞ্জনকে অসাড় ও ভিত্তিহীন অভিহিত করে বলেন, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ হালকা করে নেয়ার সুযোগ নেই। সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ মিশন। কাজেই আমরা সামর্থ্যের সম্ভাব্য সেরা দল নিয়ে মাঠে নামার চেষ্টাই করবো। কাজেই কাউকে বিশ্রাম দেয়ার প্রশ্নই আসে না।’

প্রধান নির্বাচক যখন এমন কথা বলেন তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না সাকিব-তামিম ছাড়া পঞ্চপান্ডবের বাকি তিন জন ঠিকই খেলবেন। এখন প্রশ্ন হলো কাদের নিয়ে সাজানো হবে দল? এশিয়া কাপে তামিম-সাকিবসহ স্কোয়াড ছিল ১৯ জনের। পরে ইনজুরিতে এ দুজন ছিটকে যাওয়ায় এ সংখ্যা কমে ১৭তে নেমে আসে।

কিন্তু দেশের মাটিতে তো আর ১৭ জনের দল হবে না। প্রধান নির্বাচক জাগোনিউজকে জানিয়েছেন, ‘আমরা ১৪ জনের দল সাজাতে চাই। তাতে নতুন কারো অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা খুব কম। এশিয়া কাপ স্কোয়াডের বাইরে থাকা কারোর ঢোকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’

Advertisement

তারপরেও নির্বাচকদের চোখ আছে রাজশাহীর মিজানুর রহমানের মিজানের দিকে। নান্নু জাগোনিউজকে জানিয়েছেন, ‘আমরা মিজানকে খুটিয়ে দেখব। পাশাপাশি নাজমুল শান্তর সর্বশেষ অবস্থাটাও পরখ করবো। তাই জাতীয় লিগের পরবর্তী পর্বে আমি রাজশাহী যাচ্ছি। মিজান ও শান্তর দল রাজশাহীর জাতীয় লিগের দ্বিতীয় ম্যাচ দেখতে।’

ওদিকে এশিয়া কাপে শেষ মুহূর্তে দলে ঢোকা ইমরুল-সৌম্যও নাকি থাকবেন স্কোয়াডে। যদি তাই থাকেন তাহলে ১৪-১৫ জনের দল সাজাতে হলে এশিয়া কাপের অন্তত ২-৩ জনকে বাদ দিতেই হবে। এখন প্রশ্ন হলো কে কে বাদ পড়তে পারেন?

মাশরাফি, মোস্তাফিজ, রুবেলের সাথে চতুর্থ পেসার হিসেবে ছিলেন আবু হায়দার রনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে হয়তো দুজন পেসারও খেলানো হতে পারে, তারপরও ব্যাকআপ হিসেবে চার পেসার নিতেই হবে।

স্পিনার কোটায় মেহেদি মিরাজ ও নাজমুল অপু ছিলেন, হয়তো থাকবেনও। এখন দেখার বিষয় ব্যাটসম্যান কজন থাকেন। চার পেসার ও দুই স্পিনার মিলিয়ে ছয়জন প্রায় নিশ্চিত। এর বাইরে ১৪ জনের দল হলে ৮ জন আর ১৫ জনের স্কোয়াড হলে ৯ জনের বেশি ব্যাটসম্যান অন্তর্ভুক্তির কোনোই সুযোগ-সম্ভাবনা নেই।

যেহেতু লিটন দাশ নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেছেন তাই তার দলে থাকা নিশ্চিত। পাশাপাশি মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ এবং এশিয়া কাপে এক জোড়া হাফসেঞ্চুরি করা মোহাম্মদ মিঠুনও থাকবেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজে।

এই চারজনের বাইরে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে ব্যাটসম্যান কোটায় ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মুমিনুল হক,আরিফুল হক, ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার। এই ছয়জনের যেকোনো দুজনকে বাইরে থাকতে হবে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নাজমুল শান্ত, মোসাদ্দেক সৈকত ও মুমিনুলের যেকোন দুজনের কপাল পুড়বে। বলার অপেক্ষা রাখে না এশিয়া কাপে এ তিনজনের কেউই সুবিধা করতে পারেননি। সর্বাধিক তিন ম্যাচ খেলে বাঁহাতি শান্তর সংগ্রহ ছিলো মোটে ২০ (৭, ৭, ৬) রান।

মুমিনুল হক দুই ম্যাচে করেছিলেন ১৪ রান (৯+৫)। আর তিন ম্যাচে মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে এসেছিল ৩৯ রান (১ +২৬*+১২) । অন্যদিকে পরে দলে ঢোকা ইমরুল প্রথম ম্যাচেই হাফসেঞ্চুরি (৭২*) করে দল ভুক্তির যথার্থতা প্রমাণ দিয়েছিলেন। সৌম্য ফাইনালে সুযোগ পেয়ে তেমন কিছু করতে না পারলেও শেষদিকে মড়কের মাঝে ৩৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। দেশে ফিরে জাতীয় লিগে সেঞ্চুরিও করেছেন বাঁহাতি সৌম্য। তাই ইমরুলের সাথে সৌম্যের থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

অর্থাৎ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সম্ভাব্য স্কোয়াড দাঁড়ায়: লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত/আরিফুল হক, মেহেদি হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মর্তুজা, নাজমুল ইসলাম অপু, মোস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন, আবু হায়দার রনি।

এআরবি/এসএএস/পিআর