বিশেষ প্রতিবেদন

চ্যালেঞ্জের মুখে লতিফ, বিএনপির খসরু

আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা কাজ করলেও এরই মাঝে ‘দৌড়ঝাঁপ' শুরু করেছেন প্রায় সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে শেষ ঈদে ‘এক ঢিলে দুই পাখি' মেরেছেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

Advertisement

ঈদুল আজহায় চট্টগ্রামের শহর-গ্রাম সব স্থানেই চোখে পড়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনসংযোগ। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি- বড় এই তিন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গেছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। প্রায় প্রতিটি আসনেই বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থিতার ছড়াছড়ি। মন্ত্রী-এমপিরা ঘন ঘন যাচ্ছেন নিজ এলাকায়। ভোটাররাও চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন তাদের কর্মকাণ্ডের।

আরও পড়ুন >> বিএনপির নোমান, আ.লীগে নবীন-প্রবীণ লড়াই

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক প্রস্তুতি, দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, সর্বশেষ অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, মাঠের অবস্থাইবা কী- এসব নিয়ে জাগো নিউজ’র ধারাবাহিক প্রতিবেদন ‘ভোটের বাদ্য’। একাদশ কিস্তিতে আজ থাকছে ‘চট্টগ্রাম-১১’ এর সার্বিক চিত্র।

Advertisement

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) সংসদীয় আসনটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৭ থেকে ৩০ এবং ৩৬ থেকে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। নগরের পতেঙ্গা, বন্দর, সদরঘাট ও ইপিজেড থানা এবং ডবলমুরিং থানার একাংশ পড়েছে এ সংসদীয় আসনে।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্যপ্রার্থী এম এ লতিফ, খোরশেদ আলম সুজন ও মোহাম্মদ ইলিয়াস

শুধু চট্টগ্রাম নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্য এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ। বন্দর-পতেঙ্গা এলাকাকে বলা হয় দেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। বন্দর, রফতানিকরণ অঞ্চল, কাস্টম হাউস, বিমানবন্দর, তেল শোধনাগারের মতো এক ডজনেরও বেশি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে এই এলাকায়। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের আসন পুনর্বিন্যাসে চট্টগ্রাম নগরীতে যে চারটি আসন বাড়ানো হয় এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ একটি। এ সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা পাঁচ লাখ দুই হাজার ২৩৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৫৯ হাজার ১১ এবং মহিলা ভোটার দুই লাখ ৪৩ হাজার ২২৩ জন।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে পতেঙ্গা ও বন্দর আসনে (চট্টগ্রাম-১১) আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন জামায়াত ঘরনার বলে পরিচিত চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী এম এ লতিফ। নির্বাচনে অংশ নিয়েই বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে হারিয়ে প্রথম এমপি হন তিনি। পরের দফায় বিএনপিবিহীন নির্বাচনেও তার উপর আস্থা রাখে আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রায়শই বিতর্কের জন্ম দেয়া এই সংসদ সদস্য এবার আর সহজে পার পাবেন না বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের তৃনমূল নেতাকর্মীরা।

Advertisement

তারা বলছেন, এবার মনোনয়ন পেতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে নানা কারণে বিতর্কিত এম এ লতিফকে। তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মাঠে আছেন চট্টগ্রাম নগর কমিটির দুই সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস ও পাঠানটুলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম বাহাদুর।

বিএনপির একক প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম

মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলেও অনেকটা নির্ভার বিএনপি। পতেঙ্গা-বন্দর আসনে মনোনয়ন নিয়ে স্বস্তিতে আছে দলটি। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ আসনে বিএনপির প্রার্থী এটা প্রায় নিশ্চিত। ২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের আগে এখান থেকে টানা তিনবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি। জাতীয় পার্টির ব্যানারে এখানে প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে চিটাগাং চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমকেও।

আরও পড়ুন >> আ.লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি, সুবিধায় বিএনপি-জাপা

২০০৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনে প্রথমে দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাকে বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী এম এ লতিফকে মনোনয়ন দেয়া হয়। লতিফ ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষা করতে পারবেন এবং সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে চট্টগ্রাম বন্দরকে সচল রাখতে পারবেন- মূলত এই বিবেচনাতেই মনোনয়ন পান বলে মনে করেন কর্মীরা। মনোনয়ন পেয়ে সবাইকে চমকে দেন এম এ লতিফ। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও চেম্বার প্রেসিডেন্ট এম এ লতিফ সেই নির্বাচনে বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রায় ২২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তাই লতিফের ওপর আস্থা রাখে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় হেসেখেলেই বিজয়ী হন এমপি লতিফ।

তবে বিভিন্ন সময় বিতর্ক তার পিঁছু ছাড়েনি। বন্দরের বিভিন্ন কাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রয়াত সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে লতিফের বিরোধ লেগেই ছিল। আওয়ামী লীগে ‘জামায়াতের অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবেও তাকে চিহ্নিত করা হয়। আগ্রাবাদে জামায়াত-সমর্থিত একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। সর্বশেষ নিজের ছবির সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখমণ্ডলের ছবি লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে সমালোচিত হন এম এ লতিফ। তবে তার সমর্থকদের দাবি, দুই মেয়াদে এমপি থাকায় সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগেও বেশকিছু কাজ করে আলোচিত হন এমপি লতিফ। হাজার হাজার গরিব-দুস্থের মাঝে কম দামে চাল-ডাল বিক্রি করে প্রশংসা কুড়ান তিনি।

দুস্থদের মাঝে ঢেউটিন বিতরণ করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ

এদিকে, মনোনয়নের ক্ষেত্রে লতিফের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে নগর আওয়ামী লীগ কমিটির সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে। জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ লাঘবে মহেশখালের বাঁধ অপসারণে ব্যতিক্রমধর্মী আন্দোলন গড়ে তুলে ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর কাছে আলোচিত হন তিনি। তার সমর্থকদের দাবি, মহেশখালের বাঁধ অপসারণ করে বাঁকটি সোজা করায় হালিশহর, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডসহ আশপাশ এলাকার মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছে জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানির দুর্ভোগ থেকে। ইপিজেড, বন্দরসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনেও রয়েছে তার আলাদা নেটওয়ার্ক। এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। এছাড়া খোরশেদ আলম সুজনকে ভাবা হয় প্রয়াত নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের ঘনিষ্ট হিসেবে।

আরও পড়ুন >> জোট নিয়ে জটে আ.লীগ, নির্ভার বিএনপি

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবারও এ আসন (চট্টগ্রাম-১১) থেকে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ায় এ আসনে তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এম এ লতিফের কাছে পরাজিত হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবার বিপুল ভোটে তিনি জিতবেন বলে বিশ্বাস করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, বর্তমান সরকার বারবার উন্নয়নের কথা বললেও পতেঙ্গা-বন্দরে আসল উন্নয়ন হয়েছে বিএনপি আমলে। এ আসনের আওতাধীন কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, বিমানবন্দরের উন্নয়ন, দুটি টেকনিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে পোর্টকানেকটিং রোড নির্মাণ, পতেঙ্গা বেড়িবাঁধসহ বড় বড় সব প্রকল্পই বিএনপি সরকার করেছে। আজকাল আওয়ামী লীগ কর্ণফুলী টানেল ও মেরিনড্রাইভসহ সব প্রকল্প নিয়ে বড় বড় কথা বলে, এর সবই বিএনপির আমলে নেয়া। সরকারের জুলুম নির্যাতনে দল স্বাভাবিক কর্যাক্রম চালাতে না পারলেও এ আসনে বিএনপির অবস্থান সবসময়ই ভালো। সুষ্ঠু ও নিরেপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি আবারও এ আসনে বিজয়ী হবে।

এদিকে জাতীয় পার্টির সমর্থকরা বলছেন, বন্দর-পতেঙ্গা আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য জাতীয় পার্টির সম্ভাব্যপ্রার্থী ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কারণ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে যে ৭০টি আসন দেয়ার কথা ছিল, এর মধ্যে বন্দর-পতেঙ্গা আসনটি ছিল। কিন্তু পরে ৩৫টি আসন দেয়া হয়। যে কারণে আসনটি হাতছাড়া হয়। তারা আশা করছেন, আগামীতে জোটগত নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টিকে এ আসন ছেড়ে দেয়া হবে। যদি তা না হয়, জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করলেও মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম জাতীয় পার্টির প্রার্থী হবেন।

দলীয় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছেন খোরশেদ আলম সুজন

নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়া প্রসঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০০৮ সালে আমি রাজনীতি ও আওয়ামী লীগে নতুন ছিলাম। নবাগত হলেও আমি আওয়ামী লীগকে হৃদয়ে ধারণ করছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা দুই দফায় আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। সেই সময় তৃণমূল আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে আমাকে জিতিয়েছে। জনগণের কল্যাণে কাজ করে সে আস্থা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। কখনও গ্রুপিংয়ের রাজনীতি করিনি। তৃণমূল আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরাও গ্রুপিং করেন না। তারা নৌকায় ভোট দেন। তাদের সমর্থন নিয়েই রাজনীতি করি। আমার কাজের বিচার করবে এলাকাবাসী। দল যদি আমাকে আবারও মনোনয়ন দেয় তবে নির্বাচন করব।’

টানা দু’বার মনোনয়নবঞ্চিত থাকলেও এবার মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘বর্তমান এমপি এম এ লতিফ বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন। ২০০৮ সালে আমাকে মনোনয়ন দিয়ে প্রত্যাহারের পেছনে তার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের ভূমিকা ছিল। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হলেও এম এ লতিফ জামায়াতের সমর্থক। আগ্রাবাদে জামায়াত-সমর্থিত একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। অথচ আওয়ামী লীগের মহানগর কমিটিতে রাখা হলেও কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেন না তিনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগ-শ্রমিক লীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ নেই। আমার বিশ্বাস, এমন বিতর্কিত ব্যক্তির ওপর আর আস্থা রাখবে না দল। গত দু'বার মনোনয়নবঞ্চিত হলেও আশা করছি এবার আমাকে নিরাশ করবে না দল।’

আরও পড়ুন >> আ.লীগের হাছান মাহমুদ, বিএনপির হুম্মাম কাদের?

নগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ বলেন, ‘আমি বন্দর এলাকার সন্তান। তৃণমূল থেকেই রাজনীতি করে আসছি। ২০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আমি সবসময় এলাকাবাসী ও দলের পাশে আছি। এ আসনে যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তারপরও বর্তমান সরকারের আমলে সারাদেশের মতো আমাদের আসনে যে উন্নয়ন হয়েছে তা আগের অন্য কোনো সরকারের আমলে হয়নি। দলের বাইরে থেকে এসে সুযোগ-সুবিধা লুটে নেবে, দলের স্বার্থ চিন্তা করবে না, সে ধরনের প্রার্থী এলাকার মানুষ ও দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা চান না। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অগ্রযাত্রার চিত্র এলাকাবাসীর কাছে তুলে ধরেছি। এলাকায় সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের কাছে আমার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তবে নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমার বিশ্বাস, সবাইকে নিয়ে কাজ করে আসনটি দল ও নেত্রীকে উপহার দিতে পারব।’

এলাকায় জনসংযোগ করছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজনীতির মাঠ এখনও অনিশ্চিত। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ প্লাটফর্মে নির্বাচন হলে বিএনপি ভোটের কথা ভাববে। আমাদের দল নির্বাচনে গেলে নগরের কোন আসনে কে মনোনয়ন পাবেন ও নির্বাচন করবেন, তা নিশ্চিত হয়ে গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ থেকে খসরু ভাই নির্বাচন করবেন।’

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম বলেন, ‘চট্টগ্রামের বন্দর-পতেঙ্গা আসনে আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। দলের প্রয়োজনে প্রার্থী হতে প্রস্তুত আমি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১৪ দল থেকে মনোনয়ন প্রথমে আমাকে দেয়া হলেও পরে জোটের স্বার্থে মনোনয়োন প্রত্যাহার করি। আশা করছি এবার জোটগত নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টিকে এ আসন ছেড়ে দেয়া হবে।’

বিগত নির্বাচনের ফলাফল

২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের আসন পুনর্বিন্যাসে চট্টগ্রাম নগরীতে যে চারটি আসন বাড়ানো হয়, এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১১ আসন একটি। মূলত তৎকালীন নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম–৮ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, বন্দর) থেকে পতেঙ্গা, বন্দর ও হালিশহরের কিছু অংশ নিয়ে এ আসন গঠন হয়। হিসেবটা ১৯৯১ সাল থেকে হলেও এখন পর্যন্ত পাঁচ দফা নির্বাচনে তিনবার বিএনপি এবং দুবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হন।

আরও পড়ুন >> চ্যালেঞ্জের মুখে ফজলে করিম, বিএনপির ভরসা সাকা পরিবার

১৯৯১ সালে তৎকালীন নির্বাচনী এলাকা–৮ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, বন্দর) থেকে খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে উপ–নির্বাচনে বিএনপি মনোনীতপ্রার্থী হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনেও খসরু সংসদ সদস্য হিসেবে একই এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পর পতেঙ্গা ও বন্দর আসনে (চট্টগ্রাম-১১) আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী এম এ লতিফ। প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েই বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আমীর খসরুকে ২২ হাজার ভোটে পরাজিত করেন। ২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে হেসে-খেলেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এম এ লতিফ।

[‘ভোটের বাদ্য’র দ্বাদশ কিস্তিতে থাকছে ‘চট্টগ্রাম-১২’ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম এবং তাদের নিয়ে স্থানীয়দের চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন জাগো নিউজে]

আবু আজাদ/এমএআর/এমএস