কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় ধর্ষণের শিকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী (১২) কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে পুত্র সন্তান প্রসব করেছেন। প্রতিবেশি হাসনাবাদ ইউনিয়নের খেওনীটারী গ্রামের মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে জাকিরুল ইসলাম ওরফে জাকরুল (২০) ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ওই ছাত্রীকে পাশবিক নির্যাতন চালায়। এর এক পর্যায়ে শিশুটি অন্তঃসত্ত্বা হলে চাপ সৃষ্টি করে গর্ভপাতের।এতে স্থানীয় মাতবর ও চেয়ারম্যান বিচারে ব্যর্থ হওয়ায় মামলা গড়ায় থানা পর্যন্ত। ধর্ষিতার পিতা শাহ আলম এ ব্যাপারে নাগেশ্বরী থানায় মামলা দায়েরের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও ধর্ষক গ্রেফতার হয়নি। উল্টো ধর্ষকের পরিবারের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী গোবর্ধনকুটি গ্রামে পালিয়ে আশ্রয় নেয় এই পরিবারটি।মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, খেওনীটারী গ্রামের (খামার হাসনাবাদ) দিনমজুর শাহ আলমের স্কুল পড়ুয়া কন্যা (১২) পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় প্রতিবেশী জাকিরুল ইসলাম ওরফে জাকরুলের দ্বারা। মেয়েটির মা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার সুযোগে দীর্ঘদিন ধরে এ অপকর্ম চালায় জাকরুল। মেয়েটি গোবর্ধনকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। জন্মনিবন্ধন সূত্রে তার জন্ম ২০০২ সালের ২৩ ডিসেম্বর।ধর্ষণের শিকার শিশুটি জানায়, গত নভেম্বরের একদিন সন্ধ্যাবেলা জাকরুল ছুরির ভয় দেখিয়ে জোড় করে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করে। এরপর থেকে সে বাড়ি ফাঁকা পেলেই একইভাবে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল জাকরুল। এ ঘটনার কথা কাউকে বললে গলা কেটে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এ কারণে ভয়ে মেয়েটি বাড়িতে কাউকে বিষয়টি জানায়নি।ধর্ষিতার বাবা শাহ আলম জানায়, পরিবারে ছয় সন্তান নিয়ে আটজনের সদস্য। বাড়তে আমার স্ত্রী দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবৎ মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে। অভাবী সংসার আর এলাকায় কাজ না থাকায় সে ঢাকায় রিক্সা চালার কাজ নেয়। চলতি বছরের মে মাসে বাড়িতে এসে দেখতে পায় তার শিশু কন্যার পেট উচু এবং পায়ে পানি নামা। সে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে মেয়েটির চিকিৎসা করায়। এতেও ভালো না হলে ফকিরের হাট বাজারে মেয়ের চিকিৎসার জন্য বার’শ টাকা চাঁদা তোলে।পরে নাগেশ্বরীতে মানিক ডাক্তারের কাছে নিলে টিউমারের চিকিৎসা করায়। এভাবে কেটে যায় ২০ থেকে ২৫ দিন। মেয়ে আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। যন্ত্রণা অসহ্য হলে এক পর্যায়ে মেয়ে জানায় টিউমার নয়, আমার পেটে বাঁচ্চা। আর এর জন্য দায়ী প্রতিবেশী জাকরুল। একথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে শাহ আলমের।শাহ আলম জানান, বিষয়টি ছেলের পরিবারকে জানালে জাকিরুলের বড় ভাই দুলু ও গ্রামের মাতবর আ রহমান দুই লাখ টাকা নিয়ে মীমাংসা করে পেটের সন্তানকে নষ্ট করতে বলে। আর ব্যাপারটি বেশি দূর গড়ালে মেয়েসহ তাদের আরো বড় ক্ষতি করা হবে।বিচার চেয়ে গ্রামের মোড়ল, মসজিদ কমিটি ও হাসনাবাদ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুর জামালের কাছে দফায় দফায় বৈঠক হয়। কিন্তু ধর্ষকরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ বিচার করেনি। উল্টো হুকমি দেয় গ্রাম ছাড়ার। বাধ্য হয়ে গত ৭ জুলাই নাগেশ্বরী থানায় বাদি হয়ে ধর্ষনের মামলা দায়ের করি।এরপর নিরাপত্তার অভাবে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। আশ্রয় নেই গোবর্ধনকুটি গ্রামের মোকলেছ ব্যাপারির বাড়িতে। এরপরও লোক মারফৎ হুকমি দিয়ে আসছে ধর্ষকের পরিবার।তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার রাতে মেয়েটি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। বুধবার সকালে একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। এখন মা এবং নবজাতক শিশু দুজনেই অসুস্থ। বুকের দুধ পাচ্ছে না শিশুটি।কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নজরুল ইসলাম জানান, মা এবং শিশু দুজনই অপুষ্টিতে ভুগছে।নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান সরকার জানান, শাহ আলম আমার নিকট এসেছিল আমি বিচারের আশ্বাস দিলেও পরে তারা আর আমার নিকট আসেনি। এখন পরবর্তীতে বিষয়টি কী হয়েছে আমি জানি না।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাগেশ্বরী থানার ওসি(তদন্ত) খান মো. শাহরিয়ার ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বলেন, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধিত/০৩) আইনের ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। যার মামলা নং ০৮। বিলম্বে মামলা হলেও আসামকে ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।বিএ
Advertisement