খেলাধুলা

‘সাকিবের আঙুলের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ঠিকই থাকবে’

‘আমার বাঁহাতের কনিষ্ঠা আঙুল আর পুরোপুরি ভাল হবেনা। হারটা ছোট ও নরম। তাই আর কখনো জোড়া লাগার সম্ভাবনা নেই’ - কোন সাধারণ মানুষের সংলাপ এটা নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণভোমরা, জাতীয় দলের প্রধান চালিকাশক্তি এবং টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি, তিন ফরম্যাটে টিম বাংলাদেশের বোলিং ও ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা সাকিব আল হাসানের নিজের কথা।

Advertisement

শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়ায় বাঁ হাতের আঙুলের চিকিৎসা করাতে যাবার আগে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে ওপরের কথাগুলো বলে গেছেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার।

তাৎক্ষণিকভাবে সে মন্তব্যর রেশ বা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হলেও আজ দিনে বাংলাদেশের টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের অমন মন্তব্য ভক্ত, সমর্থক, সাধারন ক্রিকেট অনুরাগী এবং বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো আলোড়ন তুলেছে। সাকিব ভক্ত ও সমর্থক তথা টাইগার ফ্যান, ফলোয়ার মহলে রীতিমতো, ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, হ্যারিকেন-টাইফুনই বয়ে যাচ্ছে।

খুব যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে - ‘সে কি! বাঁহাতি সাকিব যে হাতে বোলিং ও ব্যাটিং করেন, সেই হাতের ছোট আঙুল (কনিষ্ঠা) আর কখনো ভালো হবে না! মানে এই ছোট আঙুলের কচি ও নরম ভাঙা হাড় আর কখনো জোড়া লাগবেনা?

Advertisement

বাঁ হাতের ওই কনিষ্ঠা আঙুলের কচি ও নরম ভাঙা হার যদি আর কখনো পুরোপুরি ভাল নাই হয়, তাহলে সাকিব খেলবেন কি করে? পারফর্ম করবেন কিভাবে? তবে কি বাংলাদেশ দলের প্রধান চালিকাশক্তির ক্যারিয়ারই হুমকির মুখে?

এমন প্রশ্ন ডাল পালা ছড়াচ্ছে। সবার মনে রাজ্যের সংশয়, শঙ্কা, চিন্তা-ভাবনা এসে ভর করেছে। সাকিবের মত নির্ভরযোগ্য পারফরমার এবং ব্যাটিং ও বোলিংয়ের অন্যতম প্রধান স্তম্ভের ক্যারিয়ার নিয়ে এমন সংশয়-শঙ্কা তৈরি হবার চেয়ে আর বড় খবর কি হতে পারে?

তবে অগণিত সাকিব ভক্ত, সমর্থক ও অনুরাগীদের জন্য আছে আশার খবর। তাদের চিন্তার কোনই কারণ নেই। শঙ্কিত হবারও কিছু নেই। বাঁ হাতের কনিষ্ঠা আঙুল শতভাগ ঠিক না হলেও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের ওপর এতটুকু নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। তার ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়া তো বহু দূরে, এত টুকু চিন্তা নেই।

তার বোলিং এবং ব্যাটিংয়ের ওপর ঐ আঙুল কোন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। আঙুল শতভাগ ঠিক না হলেও সাকিবের বোলিং ও ব্যাটিংয়ের পথে কোন বাঁধা হবে না। এতটুকু জটিলতা বা সমস্যার উদ্রেক ঘটাবে না। সাকিব আগে যেমন বোলিং ও ব্যাটিং করেছেন, আগামীতে মানে অস্ট্রেলিয়ায় চিকিৎসা শেষেও ঠিক অমনই পারফর্ম করতে পারবেন।

Advertisement

খোদ বিসিবি প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী আজ বিকেলে জাগো নিউজের সাথে আলাপে এমন আশার বাণী শুনিয়েছেন। সাকিবের বাঁহাতে কনিষ্ঠা আঙুল আর ভাল হবে না- এমন ধারনা পোষণ করাকেও তিনি ঠিক মনে করেন না। ডা. দেবাশীষ বলেন, ‘বলা হচ্ছে , ‘সাকিবের আঙুলের নরম হার আর জোড়া লাগবেনা। আঙুল ভাল হবেনা’- কথাটি ঠিক নয়। আমরা বিশ্বাস করি ইনফেকশন ভাল হবার পর তার ইনজুরির যথাযথ চিকিৎসা হলে সাকিবের এ সমস্যা থাকবে না। সাকিব আবার মাঠে ফিরে আসতে পারবেন এবং স্বচ্ছন্দে ব্যাটিং ও বোলিং করতেও পারবেন।’

সাকিবের আঙুল আর কখনো ভালো হবে না বা ঠিক হবে না- ডা. দেবাশীষ চৌধুরী তা কোনভাবেই মানতে রাজি নন। তার ব্যাখ্যা, ‘সাকিবের আঙুল আর কখনো ভাল হবে না, একথাটি ঠিক না। দেখার বিষয় হলো ওই আঙুল সাকিবের স্বাভাবিক, স্বচ্ছন্দ ব্যাটিং ও বোলিংয়ের পথে বাঁধা হয়ে দাড়ায় কি-না? যদি আঙুলের কার্যক্ষমতা ঠিক থাকে, ওই আঙুল যদি সাকিবের বোলিং এবং ব্যাটিংয়ের পথে কোন বাঁধার সৃষ্টি না করে, মানে সাকিব যদি আগের মত বোলিং ও ব্যাটিং করতে পারেন, কোনই সমস্যা না হয়- তাহলে আঙুল ভালো হবে না- কথাটি অর্থহীন।’

ডা. দেবাশীষের কথা বার্তার মুল ভাবটা এমন, ‘ধরা যাক, কারো হাতে, পায়ে কোথাও আঘাত লাগলো। কিন্তু সেই আঘাতের চিকিৎসার পর তিনি আবার হাটতে পারলেন। হাটা চলা ফেরায় কোন সমস্যা হলোনা। মানে তার স্বাভাবিক জীবন বিঘ্নিত হলো না, তার স্বচ্ছন্দ চলাফেরায় বাঁধা পড়লো না- তখন আর বলা যাবেনা- ঐ আঘাত কোন দিন সাড়বে না বা ভালো হবে না।’

বিসিবি প্রধান চিকিৎসক বেশ আস্থা, দৃঢ়তা ও আত্ববিশ্বাসের সাথে বলেন, ‘সাকিব যদি তার কাজ কর্মটা নির্বিঘ্নে করতে পারে, তার বোলিং ও ব্যাটিংয়ে কোন সমস্যা না হয়- তখন আর বলার উপায় থাকবে না যে তার বাঁহাতের আঙুল আর ঠিক হবে না। আমাদের সবার দেখার বিষয় হলো, আঙুলের ফাংশন বা কার্যকরিতা ঠিক আছে কি-না। সেটা যদি ঠিক থাকে, আঙুলের কার্যকরিতা যদি ঠিক থাকে, তাহলে আর চিন্তা কি?’

বিসিবি প্রধান চিকিৎসক আবারও জানিয়ে দিয়েছেন সাকিবের ভেঙে যাওয়া আঙুলের শেষ চিকিৎসা হচ্ছে ‘সার্জারি’। তার ভাষায়, ‘শেষ পর্যন্ত সাকিবের অপারেশন লাগবেই। তবে তার আগে ইনফেকশনটা ভাল হতে হবে। আগে ইনফেকশন ভালো হোক। তারপর শুরু হবে আসল চিকিৎসা। তখনই বলা যাবে সার্জারি লাগবে কি-না? সার্জারির ধকল কাটিয়ে ভালো হতে কত দিন সময় লাগবে- সে সব কৌতুহলি প্রশ্নের জবাব খুঁজতে তাই অপেক্ষায় থাকতেই হবে।’

এআরবি/এসএএস/জেআইএম