জাতীয়

বোর্ড সদস্যদের সুপারিশে খালেদার চিকিৎসা

>> রোববার বসবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত বোর্ড >> বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা>> খালেদা জিয়ার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ>> উনি (খালেদা) বলার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো : পরিচালক

Advertisement

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড রোববার বৈঠকে বসবে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করা হবে।

বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন শনিবার বিকেলে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড আগামীকাল রোববার (৭ অক্টোবর) বৈঠকে বসবেন। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হবে।

নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগার থেকে শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া ভর্তি হওয়ার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে এসে আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের ষষ্ঠ তলায় উনি অবস্থান করছেন। ওনার বিষয়ে আদালত থেকে একটি আদেশ জারি করা হয়েছিল। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি।’

‘উনি (খালেদা জিয়া) আসার পর ওনার কেবিনে বোর্ডের সভাপতি, উনি যার আন্ডারে ভর্তি হয়েছেন প্রফেসার ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী ওনাকে দেখেছেন। চিকিৎসা শুরুর আগে যা যা ফরমালেটিজ উনি (আবদুল জলিল) কমপ্লিট করেছেন’- বলেন বিএসএমএমইউ পরিচালক।

ডা. আবদুল জলিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে বোর্ডের বাকি সদস্যরা হলেন- রিমোটলজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি, অর্থপেডিক বিভাগের অধ্যাপক নকুল কুমার দত্ত এবং ফিজিকাল মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুনন্নেসা আহমেদ।

‘আগামীকাল বেলা ১টার পর পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা শুরু করতে পারবো’- বলেন আব্দুল্লাহ আল হারুন।

Advertisement

প্রাথমিকভাবে খালেদা জিয়ার শারীরিক কোনো পরিবর্তন দেখা দিয়েছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘উনি আজ চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। আমরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করছি। আগামীকাল মেডিকেল বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে আমরা জানতে পারবো।’

খালেদা জিয়া কতদিনের জন্য ভর্তি হয়েছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হয়েছেন উনি। সুস্থ হতে কতদিন লাগবে, এটা বলা যায় না। তবে ভর্তি হতে হলে টাকা দিতে হয়। যেহেতু জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিনি এসেছেন, তাই ওনাকে ব্যক্তিগতভাবে কিছু করা লাগবে না।’

খালেদা জিয়াকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল- সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘উনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েল উপাচার্য গিয়েছিলেন, ওনার সঙ্গেও কুশল বিনিময় করেছেন। আমাদের সঙ্গে বিস্তারিত কথাবার্তা হয়েছে।’

‘আমাদের হাসপাতালে সবসময় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। ওনার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের সহায়তা, পুলিশের সহায়তা, আনসারের সহায়তা, সরকারের সকল এজেন্সির সহায়তায় আমরা যথেষ্ট কনফিডেন্ড, যাতে ওনার কোনো অসুবিধা না হয়’- বলেন বিএসএমএমইউ পরিচালক।

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের চিকিৎসক বোর্ডে আছেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আদালতের রায়ে বলা আছে- আমরা বোর্ড করে দিবো। বোর্ড করে দেয়ার পর ওনার (খালেদা জিয়া) যদি কোনো চিকিৎসকের বিশেষ কোনো... থাকে, ওই বিষয়ে উনি বলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কেউ থাকছেন কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএসএমএমইউ পরিচালক বলেন, জেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যার যার থাকার প্রয়োজন ওনারই থাকছেন।

কঠোর নিরাপত্তায় শনিবার বেলা ৩টা ১১ মিনিটে খালেদাকে বহনকারী গাড়িটি কারাগার থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হয়। বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে গাড়িটি হাসপাতালের গেটে এসে পৌঁছায়।

বিএনপি নেতারা বহুদিন ধরে বলে আসছিলেন যে, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার অসুস্থতার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বলছিল, জেলকোড অনুযায়ী তাকে বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। তবে খালেদা জিয়া এতে রাজি হচ্ছিলেন না। তিনি চেয়েছিলেন ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে।

চলতি বছরের ৭ এপ্রিল বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে নেয়া হয়েছিল। তার ছয় মাস পর আজ তাকে আবারও চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে নেয়া হলো।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। ওইদিন থেকেই রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে বন্দী রাখা হয়।

এমএএস/এসআই/এএইচ/জেআইএম