জাতীয়

রাজনীতি এখন গরিবের ভাবি : রাষ্ট্রপতি

রাজনীতি এখন গরিবের ভাউজ (ভাবি) বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

Advertisement

শনিবার (৬ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ এ কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ সমাবর্তন হয়।

লিখিত বক্তব্যের শেষ প্যারার আগে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আর একটি প্যারা শেষ হলেই আমরা বক্তব্য শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আমি লেখার বাইরেও দু’চারটি কথাও বলতে চাই।’ সঙ্গে সঙ্গেই সমাবর্তন মাঠে হর্ষধ্বনি উঠে।

Advertisement

আবদুল হামিদ বলেন, ‘আসলে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আসলেই কেন যেন কিছু বলতে চাই। আবার ভয়ও করে। কারণ যে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারিনি, সেখানে এসব ভালো ভালো ছাত্রের সামনে বক্তৃতা দেয়া-যারা এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে গেছে। এদের সামনে বক্তৃতা দিয়ে জাহির করতে যাওয়া ইটস ভেরি টাফ। তবুও বলছি।’

রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আইবার কথা মনে হইলেই কেন জানি ঠাণ্ডা লাইগা গলাডা আগেই বসে যায়।’

‘রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চাই। আমাদের গ্রামে একটা প্রবাদ আছে- গরিবের বউ নাকি সবারই ভাউজ। যারা শহরে থাকেন তারা তো ভাউজ চিনবেন না, ভাউজ হল ভাবি। ভাইয়ের বউকে ভাবি ডাকি আমরা, সেটা গ্রামে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাবিদের ভাউজ ডাকা হয়। গরিবের বউ হইলে মোটামুটি পাড়া বা গ্রামের সবাই আইসা ভাউজ ডাকে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এখন রাজনীতি কার্যত হয়ে গেছে গরিবের বউয়ের ভাউজের মতো। এখানে যে কেউ যে কোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে। কোনো বাধা-বিঘ্ন নেই। আমি যদি বলি আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফিজিকসের লেকচারার অইতাম চাই বা প্রফেসর অইতাম চাই, নিশ্চয়ই ভিসি সাহেব আমারে ঢুকাইতো না।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘বা আমি যদি কোনো হাসপাতালের ডাইরেক্টরকে বলি এত বড় রাজনীতিবিদ অইছি, এত বছর রাজনীতি করছি এখন আমাদের হাসপাতালে ডাক্তারি করার লাইগ্যা দাও, এখানে তো বোঝেন অবস্থাডা কি হবে! ফিজিকস, ক্যামেস্টি পড়াইতে যাব এ কথা বললে হাসির পাত্র হওয়া ছাড়া কিছুই হবে না।’

‘ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কথা যদি বলি, এতদিন রাজনীতি করছি সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারের পদটা তো দিতে পার? অসুবিধা কি? সেখানে আমাকে দেবে? দেবে না। কিন্তু রাজনীতি গরিবের ভাউজ... সবাই, ইঞ্জিনিয়ারই কইন, আর ডাক্তারই কইন, এই ভিসি সাহেব ৬৭ বছর হইলে উনি বলবেন আমিও রাজনীতি করিব।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘জজ সাহেব যারা আছেন ৬৭ বছর চাকরি করব, রিটায়ার্ড করে কইব আমিও রাজনীতি করিব। আর্মির জেনারেল হয়, সেনাপ্রধান হয়, অনেক আগে রিটায়ার্ডমেন্টে গিয়ে কয় আমিও রাজনীতি করিব। সরকারি সচিব, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, কেবিনেট সেক্রেটারি বা জয়েন্ট সেক্রেটারি রিটায়ার্ড করার পরই বলে আমি রাজনীতি করব।’

তিনি বলেন, ‘মনে হয় এটার কোনো রাখঢাক নেই, কোনো নিয়ম বালাই নেই। যে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা রাজনীতিতে ঢোকা যায়। কেউ ৫৯ বছর, কেউ ৬৫ বছর, কেউ ৬৭ বছর চাকরি করে, ওনার যা কিছু করার করে এরপর এসে বলেন আমি রাজনীতি করব।’

‘আমার মনে হয়, সকল রাজনৈতিক দলকে এটা চিন্তা করা উচিত। হ্যাঁ, এক্সপার্টাইজও দরকার আছে। অনেক সময় পেশাভিত্তিক...হ্যাঁ পেশাভিত্তিক করেন। ডাক্তারি পড়ে পেশাভিত্তিক চাকরিটা করেন নাই, এমবিবিএস পাস করে সরাসরি রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন। কোনো অসুবিধা নাই, ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন, সরাসরি ঢুকেন। বিসিএস পাস করেই রাজনীতিতে ঢুকে পড়েন। এভাবে আসেন।’

রাষ্টপতি বলেন, ‘পুলিশের আইজিরাও রাজনীতি করে। মনে মনে কই- রাজনীতি করার সময় তোমার বাহিনী দিয়ে কত পাছার মধ্যে বাড়ি দিছ, এখন আবার আমার লগে আইছ রাজনীতি করতে।’

তিনি বলেন, ‘কই যাইবেন, রাজনীতি আসলে হয়ে গেছে গরিবের ভাউজ। রাজনৈতিক দলগুলোকে এসব ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। বিজনেসম্যানরা তো আছেই। শিল্পপতি, লগ্নিপতিদের আগমন এভাবেই হয়ে যায়। কী করবেন? এগুলোকে থামানো দরকার।’

‘রাজনীতি যারা করবেন স্কুলে বাদ দিলাম, অন্তত কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় রাজনীতিতে জড়িত হোক। রাজনীতির মানুষের সঙ্গে উঠাবসা চলাফেরা করল। এমনও রাজনীতিবিদ আছে, বড় বড় কর্মকর্তা ছিল জুনিয়র অফিসাররা তাকে স্যার ডাকছে, এখন পাবলিকে স্যার না ডাকে তাহলে তাদের গোস্যা হয়’ বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্য।

তিনি বলেন, ‘আমি সব দলকেই বলি- বিশেষ করে চিন্তা করেন, যারা ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করে আসছে শুধু এরাই থাকুক, এক্সপার্টদের প্রয়োজন আছে, এক্সপার্ট হিসেবে তাদের মতামত নেন। এটা নিতে তো কোনো বাধা নেই। বিভিন্ন জায়গায় তাদের কমিটি করে দেন, উপদেষ্টা করে দেন। পার্টিকুলার ব্যাপারে তাদের মতামত নিতে পারেন। কিন্তু তারা ডাইরেক্ট রাজনীতির মধ্যে এসে এমপি ইলেকশন করবে, এমপি হয়ে যাবে, মন্ত্রী হয়ে যাবে। এটা যেন ক্যামন ক্যামন লাগে।’

এজন্য দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে না মন্তব্য করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষক ও ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই এজন্য যে, ডাকসু ইলেকশন নিয়ে একটা আশার আলো দেখছি। তবে এ ব্যাপারে আমি ছাত্র সমাজের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ রাখতে চাই- ডাকসু হলেই দেখা যাবে আরও অনেক ধরনের ক্যালকুলেশন হবে। ছাত্র সংগঠন-সংগঠন, ছাত্র-ছাত্র, নেতৃত্ব অনেক কিছু নিয়ে কিন্তু ভেজাল সৃষ্টি করে দিতে পারে। অনেকে অনেক স্বার্থে এটা করতে পারে। আমি মনে করি ঢাকা ভার্সিটির সব ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করা আপনাদের ঠিক হবে না। সাধারণ ছেলেদের বলছি এ ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে- যাতে করে এ প্রক্রিয়াকে কোনো ধরনের বাধাগ্রস্ত করতে না পারে।’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ঢাকসু ইলেকশন হয়ে যায় দেখা যাবে, দেশের সব সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হয়ে যাবে। কলেজগুলোতেও ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়ে যাবে। তাহলে রাজনীতিতে ওই ঢুকে পড়া, ওই প্রক্রিয়াটি বাধাপ্রাপ্ত হবে। কারণ নেতৃত্ব ছাত্র সমাজ থেকেই গড়ে উঠতে হবে। আগে তো তাই ছিল। এখন যে কইত্তে যে কেডা ক্যামনে নেতা হইয়া যায়গা, আল্লাহ মালুম। মনে হয় উপর থেকে আইসা..উইড়া আইসা জুইড়া বইছে। এ ধরনের একটা অবস্থা। ইট সুড ডিস্টার্ব।’

সব ছাত্র সমাজকে সম্মিলিতভাবে এটা প্রতিহত করারও আহ্বান জানান আবদুল হামিদ।

আরএমএম/এনডিএস/এএইচ/এমএস/জেআইএম