চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর ও হাইমচর) আসনটি জেলা সদরে হওয়ায় এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরীর পর এ আসনে বরাবরই বিএনপি প্রার্থীরা জয়ী হয়ে এসেছেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ আসনটি পুনঃরুদ্ধার করেন।
Advertisement
এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করে দীপু মনি এবারও মনোনয়ন পাবেন এমনটাই বিশ্বাস কর্মীদের। তবে ডা. দীপু মনির বিপরীতে এ আসনে শক্ত অবস্থানে আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৭ হাজর ৪৪৩ জন। বিএনপির ঘাঁটি তথা ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত চাঁদপুর সদর আসনটি ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত ছিল তাদেরই দখলে। তবে ১/১১’র আগ মুহূর্তে হঠাৎ বিএনপির এ ভোট ব্যাংকে ফাটল দেখা দেয়। আর এ ফাটলকেই কাজে লাগায় আওয়ামী লীগ।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি নবম সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে এ আসনটি পুনঃরুদ্ধার করেন। নির্বাচিত হওয়ায় পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন তিনি। স্বল্পসময়ে তিনি চাঁদপুর ও হাইমচরকে নদীভাঙন থেকে রক্ষায় প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুর ও হাইমচর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেন। যেটা এ নির্বাচনী এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের নির্বাচিত হন ডা. দীপু মনি। বিগত ৯ বছরে ডা. দীপু মনি তার নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।
Advertisement
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ডা. দীপু মনি জাগো নিউজকে বলেন, চাঁদপুর সদর এবং হাইমচরের জনগণ সুযোগ দিয়েছে বলেই গত দশ বছরে আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় সেবা করে যাচ্ছি। এ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে যা এখন দৃশ্যমান।
এদিকে আওয়ামী লীগে ডা. দীপু মনির বিপরীতে শক্ত অবস্থানে আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক জনমত গড়তে সক্ষম হয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালে তিনি তৃণমূলের সর্বাধিক সমর্থন পেয়েও মনোনয়ন পাননি। এবারও দলীয় নেতা-কর্মীদের পূর্ণ সমর্থন ও জনমত তার পক্ষেই রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
এছাড়া চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাঁদপুর পৌরসভার দু’বারের সফল মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আওয়ামী শিবিরে গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী লীগ নেতা আলহাজ্ব রেদওয়ান খান বোরহান মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দীর্ঘদিন নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে আসছেন।
Advertisement
অপরদিকে গত নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক সংসদ সদস্য জিএম ফজলুল হক। নবম সংসদ নির্বাচনে ডা. দীপু মনির কাছে পরাজয় হয় তার। তার পরাজয়ের ক্ষেত্রে তখন নিজদলের অভ্যন্তরীণ বিরোধকে দায়ী করেন দলের অনেক নেতা-কর্মী।
তবে এবার তিনি অসুস্থ থাকায় নির্বাচন করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই এ আসনে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক এখন শক্তিশালী প্রার্থী। তিনি ইতোমধ্যে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের মূল নেতৃত্বে তার অনুগত নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া তিনি তারেক রহমানের একান্ত বিশ্বস্ত বলে রাজনীতির মাঠে চাউর আছে।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক জাগো নিউজকে জানান, শুধু চাঁদপুর-৩ আসন কেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পাঁচটি আসনেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিজয় উপহার দিতে প্রস্তুত রয়েছে চাঁদপুরবাসী। কিন্তু আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
এছাড়া যুবদলের সাবেক সভাপতি চাঁদপুর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল উদ্দিন, ছাত্রনেতা মোস্তফা খান সফরী ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি রাশেদা বেগম হীরাও মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন মনোনয়ন প্রত্যাশী। গণফোরাম থেকে একক প্রার্থী হিসেবে জেলা সভাপতি ও চাঁদপুর আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সেলিম আকবর নিয়মিত গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
ইকরাম চৌধুরী/এফএ/এমএস