মেডিকেল কলেজে ‘ক্যারি অন পদ্ধতি পুনর্বহাল করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে নতুন কারিকুলামে অধ্যয়নরত দুটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের (২০১২-২০১৩ ও ২০১৩-২০১৪) জন্য এ পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে। আগামী নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) বার্ষিক সাধারণ সভায় পরবর্তী ব্যাচগুলোতে ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি বহাল থাকবে কিনা সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে বিএমডিসি এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে নতুন কারিকুলামে অধ্যয়নরত দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার দিনভর বিএমডিসি কার্যালয় ঘেরাও করে রাখে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে গেটে তালা মেরে দেয়। সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা প্রায় ৬টা পর্যন্ত টানা সাত ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবু শফি আহমেদ আমিন, সহ-সভাপতি ও বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলানসহ শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা।কয়েকশ’ শিক্ষার্থী বিজয়নগরের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে মিছিল ও স্লোগান দিতে থাকেন। তারা সাফ জানিয়ে দেন, লিখিতভাবে ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি বাতিলের কাগজ হাতে না পেলে তারা কিছুতেই গেটের তালা খুলবেনা। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি বিএমডিসির কর্মকর্তাদের সাথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় বৈঠক হয়। বিএমডিসির সভাপতি ও মহাসচিব ও বিএসএমএমইউ’র প্রো-ভিসি (প্রশাসন) বিএমডিসি ভবনের নীচে নেমে এসে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মতো তোমাদের ক্ষেত্রেও ‘ক্যারি অন’ অব্যাহত থাকবে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিএমডিসির প্যাডে লিখিতভাবে ‘ক্যারি অন’ পুনর্বহাল হবে একথা লিখে না দিলে সেখানেই অবস্থানের ঘোষণা দেন।এ সময় বিএমডিসির সভাপতি জানান, এ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হয়। কয়েকদিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ফেল করা শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস ও পরীক্ষার সুযোগ দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও সরাসরি সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তিনি বিএমডিসিকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ জানান।বিএমডিসির কার্যনির্বাহী বৃহস্পতিবারের বৈঠকে মন্ত্রীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ‘ক্যারি অন’ পুনর্বহালের বিষয়টি অনুমোদিত হয়। তাদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে হলে এ ধরনের বৈঠক ডেকে অনুমোদন করতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড় থাকেন।এ সময় বিএমডিসির কর্মকর্তারা কয়েক দফায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেন। এক পর্যায়ে সেখানে বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও জলকামান আনা হয়। কিন্তু বিএমডিসির কর্মকর্তারা ধৈর্য ধরে আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকেন। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে শিক্ষার্থীরা তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, বিএমডিসির প্যাডে লিখিতভাবে তাদেরকে ‘ক্যারি অন’ বহাল থাকবে কাগজ দেয়া হয়েছে। বিএমডিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, তাদের জন্য ‘ক্যারি অন’ পুনর্বহাল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও তারা লিখিতভাবে কোন কিছু দেননি। কাগজে কর্মকর্তারা কেউ স্বাক্ষর করেননি বলে তিনি মন্তব্য করেন। যে কারণে আন্দোলন চলছিল:২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে সালে যারা ভর্তি হয়েছিল ১৮মাস পড়াশুনার পর মে মাসে তারা নতুন কারিকুলামে প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষায় শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেন।পুরোনো কারিকুলামে দেড় বছর প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে এনাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি বিষয়ে পড়াশুনা শেষে প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতো। পরীক্ষায় পাস করে তৃতীয় বর্ষে উঠে দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে মোট ৫টি বিষয় ফার্মাকোলজি, প্যাথলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, মাইক্রোবায়োলজি ও কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পেতো। পুরোনো কারিকুলামে প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় কেউ ফেল করলেও তিনি তৃতীয় বর্ষে সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাস ও ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পেতেন। পরবর্তীতে যে বিষয়ে ফেল করেছে সে বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে দ্বিতীয় পেশাগত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতেন। এ পদ্ধতিটিই মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কাছে ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত।কিন্তু নতুন কারিকুলামে ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য সে সুযোগ রাখা হয়নি। যারা ফেল করবে তারা সহপাঠীদের সাথে ক্লাস করার সুযোগ পেলেও ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পাবেননা। ক্লাস চালিয়ে গেলেও সেটি তার শিক্ষাকাল হিসেবে গণ্য হবেনা।যারা ফেল করেছে নতুন কারিকুলাম অনুসারে তারা ওয়ার্ডে রোগী দেখার সুযোগ পাবেননা। তাই তারা পুরোনো ‘ক্যারি অন’ পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষ ঘেরাও, অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন শুরু করেন। গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শর্ত সাপেক্ষে ক্যারি অনের সুযোগ দেন। দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আগামী মে মাসে হলেও তাদের ক্ষেত্রে ‘ক্যারি অন’ বহাল থাকবে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। সে কারণেই বৃহস্পতিবার ফের তারা আন্দোলনে নামেন। এমইউ/এসএইচএস/এমআরআই
Advertisement