জাতীয়

টার্গেট ছিল চট্টগ্রাম আদালত!

ঠিক এক যুগেরও বেশি আগে চট্টগ্রাম আদালতের দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন এবং মহানগর হাকিম আকরাম হোসেনের এজলাসে আত্মঘাতী হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ৩ অক্টোবরের সেই পৈশাচিক ঘটনার ১৩ বছর পূর্ণ হয়েছে দুদিন আগে। আবারও চট্টগ্রাম আদালতে হামলার পরিকল্পনা করেছিল জেএমবি। কিন্তু র‌্যাবের অভিযানে তা ভেস্তে গেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন >> ‘জঙ্গি আস্তানায়’ ছিন্নভিন্ন দুই লাশ, অস্ত্র ও গ্রেনেড উদ্ধার

২০০৫ সালের ৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম আদালতের দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন এবং মহানগর হাকিম আকরাম হোসেনের এজলাসে জেএমবির জঙ্গিরা আত্মঘাতী হামলা চালায়। সেদিন বইয়ের ভেতরে বোমা লুকিয়ে আদালতে এনে প্রায় একই সময়ে ভিন্ন দুটি কক্ষে দুই বিচারকের এজলাসে তা ছুড়ে মারে জঙ্গিরা। তবে বোমা দুটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় বেঁচে যায় শত প্রাণ। ওই হামলার ১৫ দিনের মাথায় ২৯ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের পুলিশ তল্লাশি চৌকিতে আবারও আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় জেএমবি। হামলায় মারা যান সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া এবং আদালতে আসা বিচারপ্রার্থী ফুটবলার শাহাবুদ্দিন। আহত হন কনস্টেবল আবদুল মজিদ, রফিকুল ইসলাম, মাহফুজুর রহমান, শামসুল কবির ও আবু রায়হানসহ মোট ১০ জন।

জোরারগঞ্জের আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ

Advertisement

ঘটনার এক যুগ পর ২০১৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুই বিচারকের এজলাসে বোমা হামলার পৃথক দুটি মামলার রায়ে তিন জঙ্গিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই বিচারের এক বছরের মাথায় আবারও আদালতে হামলার পরিকল্পনা করেছিল নব্য জেএমবি। কিন্তু জোরারগঞ্জে র‌্যাবের অভিযানে তা নস্যাৎ হয়ে গেছে- দাবি র‌্যাবের।

শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘চট্টগ্রাম আদালতে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর জোরারগঞ্জের ‘চৌধুরী ম্যানসন’ নামের বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল নব্য জেএমবির এক পুরুষ ও এক নারী সদস্য। পুরুষ সদস্যের নাম সোহেল বলে জানান বাড়ির মালিক। এর দু–একদিন পর ওই নারী চলে যান। সেখানে বসবাস শুরু করেন চার পুরুষ। এর মধ্যেই তারা বাড়িটিতে গড়ে তোলেন অস্ত্র ও গোলাবারুদের বিপুল মজুদ।’

২০০৫ সালে চট্টগ্রাম আদালতে বোমা হামলার ঘটনায় ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি জাবেদ ইকবাল ওরফে মোহাম্মদ ও শাহাদাত আলী

তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই মাসে র‌্যাব সারাদেশ থেকে ৩০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। তাদের জিঙ্গাসাবাদে জানা যায়, তাদের একটি গ্রুপ চট্টগ্রাম আদালতে নাশকতার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জের ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে একটি অত্যাধুনিক একে ২২ রাইফেল, তিনটি বিদেশি পিস্তল ও পাঁচটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়।’

Advertisement

আরও পড়ুন >> চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানা : দুইজনের মরদেহ উদ্ধার

‘বাড়ির ভেতর থেকে দুই জেএমবি সদস্যের ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, বাড়িতে চার জঙ্গির অবস্থান ছিল। সম্ভবত এর মধ্যে দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।’

এছাড়া বাড়ির মালিক মাজহার চৌধুরী ও কেয়ারটেকার হক সাহেবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ‘জঙ্গি আস্তানা’ হিসেবে ভাড়া নেয়া ‘চৌধুরী ম্যানসন’ বাড়িটির মালিক মাজহারুল হক। মালিক কোনো কাগজপত্র অর্থাৎ জাতীয় পরিচয় পত্র জমা না নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সোহেল নামে এক ব্যক্তির কাছে বাড়ি ভাড়া দেন। এলাকার মানুষ জানতো একজন অসুস্থ মহিলা এই বাড়িতে থাকতেন। এখানে জঙ্গিরা আস্তানা গড়ে তুলতে পারে তা কেউ ধারণা করতে পারেননি।

চট্টগ্রাম আদালত ভবন

র‌্যাব-৭ এর উপ-অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার সাফায়াত জামিল ফাহিম জাগো নিউজকে জানান, কয়েক দিন আগে জঙ্গি সদস্যদের বাড়িটি ভাড়া নেয়ার তথ্য র‌্যাবের কাছে আসে। তারা জানতে পারেন যে, চট্টগ্রাম শহরে বড় ধরনের জঙ্গি হামলার লক্ষ্যে এক নারীসহ অন্তত চার সদস্যের একটি দল এ বাড়িতে উঠেছে।

ওই তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার ভোররাত ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের ‘চৌধুরী ম্যানসন’ নামের ওই একতলা বাড়িতে অভিযান শুরু করে র‌্যাব-৭ সদস্যরা।

আরও পড়ুন >> এক সপ্তাহ আগে বাড়িটি ভাড়া নেয় ‘জঙ্গিরা’

তিনি আরও জানান, অভিযানের শুরুতে বাড়িটি ঘিরে ফেলা হয়। এ সময় জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের জন্য বলা হয়। কিন্তু বাড়ির ভেতর থেকে র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে জঙ্গিরা। জবাবে পাল্টা গুলি ছোড়া হয়। এর মধ্যে বেশকিছু বোমা বাড়ির বাইরে ছুড়ে মারে তারা।

জোরারগঞ্জ আস্তানার আশেপাশে র‌্যাবের তল্লাশি অভিযান

স্থানীয়রা জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ভোররাত ৪টার পরে বাড়ির ভেতরে তিন-চারটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এতে বাড়ির ছাদের বড় একটি অংশ উড়ে গিয়ে প্রায় ৩০ গজ দূরে পড়ে।

র‌্যাব কর্মকর্তা সাফায়াত জামিল জানান, শুক্রবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে বাড়ির ভেতর থেকে দুটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বেলা ১২টার দিকে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

আবু আজাদ/এমএআর/পিআর