অসামান্য এক প্রতিভাধর ক্রিকেটার তিনি। যেমনই প্রতিভা, তেমনই ব্যক্তিত্ব। সহজে মানুষকে আপন করে নেয়ার সবগুলো গুণ তার মধ্যে বিদ্যমান। নড়াইলের চিত্রা নদীতে সাঁতরে বেড়ানো সেই দুরন্ত কৌশিক কখন যে হয়ে উঠলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আইকন, পোস্টারবয়- সেটা বোধ করি তার নিজেরও জানা নেই। সেই মাশরাফি বিন মর্তুজা পার করে ফেলেছেন জীবনের ৩৫টি বসন্ত।
Advertisement
১৯৮৩ সালের আজকের এই দিনে নড়াইলের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা। তবে শুধু মাশরাফিরই নয়, মজার বিষয় হলো ছেলে সাহেলের জন্মও একই দিনে। মাশরাফি নিজেই বেশ কয়েকবার বলেছিলেন, ভাগ্যবান বাবা তিনি। ২০১৪ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্ম তার ছেলে সাহেলের। জাগো নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে মাশরাফি এবং ছেলেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দুরন্ত। সারাক্ষণ মেতে থাকতেন বন্ধুদের নিয়ে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে যেতেন ক্রিকেট খেলতে। বাকি সময়টা চলতো ব্যাডমিন্টন আর চিত্রা নদীতে সাঁতার কেটে। এভাবেই একদিন সুযোগ পেয়ে গেলেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। সেখান থেকেই তিনি চোখে পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং কোচ অ্যান্ডি রবার্টসের। তার হাতে পড়েই ক্যারিয়ার বদলে যায় মাশরাফির। যে কারণে, কোনো প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাচ না খেলেই টেস্টে অভিষিক্ত হন তিনি।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর শুরু হওয়া জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। একই বছর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সঙ্গে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সঙ্গে বোলিং ওপেন করে তিনি, ৮.২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে দুই ফরম্যাটেই গ্রান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন মাশরাফির প্রথম শিকার! সেই যে শুরু পথচলা, এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৭টি বছর পার করে ফেলেছেন ক্যারিয়ারের।
Advertisement
ইনজুরি যেন তার আজন্ম সঙ্গী। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে যেভাবে ইনজুরিতে কাটিয়েছেন- তাতে করে বাংলাদেশ হারিয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ারের দিনগুলো। এই সময়গুলো তিনি যদি খেলদে পারতেন, তাহলে নিশ্চিত বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো। নিজের তৃতীয় টেস্ট খেলার সময়ই আঘাত পান হাঁটুতে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন মাঠের বাইরে- প্রায় দুই বছর। এরপর মাঠে ফিরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট; কিন্তু আবারও আঘাত পেলেন হাঁটুতে। এ যাত্রায় তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হয় প্রায় বছরখানেক।
২০০৬ সালে এক পঞ্জিকাবর্ষে মাশরাফি ছিলেন একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার। তিনি ওই বছর নিয়েছিলেন ৪৯ উইকেট। কিন্তু বারবার ইনজুরির থাবা তাকে মাঠের বাইরে ঠেলে দেয়। সব জয় করে তিনি মাঠে ফেরেন। সব দুঃখ, কষ্ট পেছনে ঠেলে তিনি ঠিকই এগিয়ে চলছিলেন; কিন্তু মাশরাফি চূড়ান্ত আঘাতটা পেলেন ২০১১ বিশ্বকাপের সময়। নিজ দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের দলে ঠাঁই না পেয়ে। সেদিন নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। মিরপুরের অ্যাকাডেমি মাঠে অঝোর ধারায় কেঁদেছিলেন।
মাশরাফি সম্ভবত তখনই আরও পোক্ত হয়েছিলেন। নিজেকে মানসিকভাবে আরও শক্ত করে নিয়েছিলেন। দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন, এই উপেক্ষার জবাব দিতে হবে একদিন। তিনি পেরেছেন। চার বছর পর তারই নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ খেলে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল।
এরপর মাশরাফি হয়ে গেলেন যেন পরশপাথর। তার ছোঁয়ায় একের পর এক হাতের মুঠোয় ধরা দিতে থাকলো সাফল্য। পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিকে টেনে নামিয়েছেন মাটিতে। বাংলাদেশ দলকে উঠিয়েছেন নতুন উচ্চতায়।
Advertisement
বিএ/এমএস