কুষ্টিয়ার খোকসা ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়া তরনীর আত্মহননের ৫ দিন পর খাতায় লিখে যাওয়া সুইসাইড নোট থেকে রহস্যের জট খুলতে শুরু করেছে। গত শনিবার রাতে নিজের ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
Advertisement
তাৎক্ষণিক আত্মহত্যার কারণ জানা না গেলেও ঘটনার ৫ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই ছাত্রীর খাতা উল্টাতেই আত্মহননের আগে লেখা একটি সুইসাইড নোট পওয়া যায়। তার লেখা ওই নোটে লেখা আছে আপন মামার শ্বশুর শাহীনের লালসার শিকার হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন তিনি। লিখে যাওয়া নোটে ওই লম্পটের বিচারের দাবিও করেছেন ওই ছাত্রী।
আত্মহননকারী ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অসুস্থ আপন খালাকে দেখতে কুষ্টিয়া জেলা শহরে যাওয়ার জন্য গত শুক্রবার বিকেলে মামার শ্বশুর শাহীনের মোটরসাইকেলে রওনা হয় সুমাইয়া। কিছদূর যাবার পর নতুন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে শাহীন ওই ছাত্রীকে পদ্মা নদীর চরে নিয়ে যায়। সেখানে ভয়ভীতি দেখিয়ে শাহীন তাকে ধর্ষণ করে। পরে রাত সাড়ে আটটার দিকে শাহীন তাকে বাড়ির গেটে নামিয়ে দিয়ে যায়। পরের দিন শনিবার সন্ধ্যায় সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন সুমাইয়া তরনী।
এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। কিন্তু পরিবারের লোকজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়। নিহত কলেজছাত্রীর বাবা আজমল হোসেন খোকসা পৌরসভায় চাকরি করেন। তার বাড়ি উপজেলার কমলাপুর গ্রামে।
Advertisement
একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে মা রেশমী পারভিন বন্যা অনেকটা হত বিহ্বল হয়ে পড়েছেন। কারও সঙ্গে কথা বলেন না। বৃহস্পতিবার মেয়ের সুইসাইড নোট পাওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথম কথা বললেন তিনি। আত্মীয় শাহীনের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে ফিরে আসার রাতেই মেয়ে তরনী ঘটনার সব কথা খুলে বলেছিলেন মাকে। জানিয়েছিলেন কীভাবে, কোথায় তাকে ধর্ষণ করেছে শাহীন। কিন্তু সব ঘটনা শুনে লজ্জার ভয়ে মা বিষয়টি গোপন রাখেন।
নিহত ছাত্রীর চাচা ইস্তেকবাল চয়ন জানান, তারা মেয়ের আত্মহননের কারণ বুঝতে না পেরে থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। সুইসাউড নোট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ওই নোটটি থানায় জমা দেন বলে জানান। এখন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তরনীর আত্মহত্যার পর থেকে শাহীন গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে। নরপশু শাহীন খোকসা হেলথ কেয়ার নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক।
খোকসা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আল-মামুন সাগর/এমএএস/জেআইএম
Advertisement