বিশেষ প্রতিবেদন

হোটেলের খাবারে আগ্রহ কমছে কর্মজীবীদের

দিন দিন রাজধানীতে জনপ্রিয় হচ্ছে ক্যাটারিং (খাদ্য প্রস্তুত ও সরবরাহ) ব্যবসা। বিশেষ করে অফিসপাড়ার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বড় অংশ দুপুরের খাবারের জন্য ক্যাটারিং ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর।

Advertisement

একদিকে ঘরোয়া পরিবেশে রান্না, অন্যদিকে হোটেলের তুলনায় খাবারের দাম কম হওয়ায় অফিসপাড়ার ব্যস্ত মানুষগুলো ক্যাটারিং সেবার দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ফলে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে অফিসপাড়ার হোটেল ব্যবসায়।

রাজধানীর ব্যস্ততম অঞ্চল মতিঝিল, ফকিরাপুল ও পল্টনের খাবার হোটেল, ক্যাটারিং সেবাগ্রহণকারী এবং ক্যাটারিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কমপক্ষে ৫০ জনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

ক্যাটারিং সেবাগ্রহণকারীরা জানান, হোটেলের তুলনায় ক্যাটারিং ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করা খাবারের দাম তুলনামূলক কম। স্বাদও ভালো। ভাজাপোড়া তেলও থাকে না।

Advertisement

‘ভাতের সঙ্গে মাছ অথবা মুরগির মাংস এবং ডাল ও সবজি দিয়ে তৈরি একটি প্যাকেজের দাম ধরা হয় ৬০ টাকা। এই খাবার নিম্নমানের হোটেল থেকে নিতে গেলেও দেড়শ টাকার উপরে খরচ হবে’- যুক্তি তাদের।

মতিঝিলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ২০০৫ সাল থেকে কাজ করেন মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি যে অফিসে কাজ করি, রাতেও সেখানেই থাকি। একটা সময় ছিল টাকা বাঁচানোর জন্য বেশিরভাগ দুপুরে ভাত না খেয়ে রুটি-পরোটা খেতাম। কারণ হোটেলে ভাত খেতে গেলে অনেক টাকা খরচ হতো।’

‘তবে ২০০৮ সালে এক খালার সঙ্গে পরিচয় হয়। সেই খালা ২৫ টাকায় দুপুরে ভাত, মাছ, ডাল অথবা ভাজি দিয়ে খাবার দিতেন। দুপুরে যে খাবার দিতেন তা দিয়ে রাতেও হয়ে যেত। ওই খালার কাছ থেকে মাস চুক্তিতে খাবার নিতাম। এতে আমার অনেক টাকা সাশ্রয় হতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেই খালা আর নেই। আরেকজনের কাছ থেকে খাবার নেই। তবে আগের তুলনায় এখন খাবারের দাম কিছুটা বেশি। মাছ অথবা মুরগির মাংস, ডাল, ভর্তা অথবা ভাজি দিয়ে এই খালা খাবার দেন। প্রতিদিনের খাবারের জন্য খালাকে দিতে হয় ৫০ টাকা। তারপরও হোটেলের তুলনায় খালার খাবারের দাম অনেক কম।

Advertisement

মতিঝিলের খাবার হোটেলের মালিক মো. খায়রুল হক। বলেন, এখন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বড় একটি অংশ বুয়াদের (খালা) কাছ থেকে খাবার নেন। শুধু মতিঝিলের অফিসগুলোতে খাবার সরবরাহ করেন এমন বুয়া আছেন শতাধিক। তাদের কারণে কিছুটা হলেও আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

দিলকুশায় ডিম-পরোটার হোটেল দিয়ে বসা মো. কাওসার বলেন, একটা সময় চাকরিজীবীরা দুপুরে আমাদের হোটেলে এসে পরোটা খেতেন। এখন সেই সংখ্যা অনেক কমে গেছে। নিয়মিত যারা অফিস করেন, তারা এখন দুপুরে সরবরাহ করা খাবার নেন। ফকিরাপুল ও এর আশপাশের বুয়ারা এগুলো সরবরাহ করেন।

দৈনিক বাংলার মোড়ে দীর্ঘদিন ধরে খাবার হোটেলের ব্যবসা করেন ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, আগে অনেকে এখানে এসে দুপুরের খাবার খেতেন। কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কর্মচারী, কম-বেশি সবাই আসতেন। কিন্তু এখন সেভাবে তারা আসেন না। কারণ বুয়ারা তাদের খাবার সরবরাহ করেন।

‘মতিঝিলে এখন যারা অফিসিয়াল কাজে আসেন বিশেষ করে কর্মচারী শ্রেণির, তারা দুপুরের খাবার খেতে আসেন। ফলে আগের মতো ব্যবসা আর নেই’- যোগ করেন তিনি।

মতিঝিলের অফিসে অফিসে খাবার সরবরাহ করেন রোকসানা বেগম। বলেন, হোটেলের রান্নার চেয়ে আমাদের রান্নার মান অনেক ভালো। দামেও কম। বাসা-বাড়িতে নিজেদের খাবার যেভাবে তৈরি করি, অফিসের সাহেবদের জন্য একইভাবে রান্না করি। কোনো বাসি খাবার বা পোড়া তেল ব্যবহার করি না। প্রতিদিন বাজারে গিয়ে টাটকা সবজি, মাছ কিংবা মাংস কিনে আনি। সুতরাং হোটেলের তুলনায় আমাদের খাবারের মান ভালো। আমরা যে খাবার দেই সেই খাবার হোটেলে খেতে গেলে তো দেড়শ-দুইশ টাকা পড়বে। কিন্তু আমরা রাখছি তার অর্ধেকের চেয়েও কম। এ কারণে অফিসার থেকে কর্মচারী পর্যন্ত সবাই আমাদের খাবার পছন্দ করেন।

এমএএস/জেডএ/এমএস