>> কর্মসংস্থান ১০ লাখ লোকের>> কল করলেই ঘরে আসছে খাবার >> প্রভাব পড়বে না হোটেল ব্যবসায়
Advertisement
স্বল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় ক্যাটারিং বা খাদ্য সরবরাহের ব্যবসা। এমনকি নিজ বাড়িতে রান্না করে তা সরবরাহ করা সম্ভব। আবার বড় আয়োজনের মাধ্যমে কয়েক হাজার লোকের খাবার সরবরাহও করা যায়। এছাড়া মানুষের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এবং ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকায় এ খাতের প্রসার দিনদিন বাড়ছে। আগামীতে ক্যাটারিং সার্ভিসকে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
ক্যাটারিং ব্যবসা বলতে মূলত খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহের ব্যবস্থাকে বুঝায়। বিভিন্ন অফিস, আদালতে চুক্তির ভিত্তিতে প্রতিদিনের খাবার সরবরাহ করেন খাদ্য সরবরাহকারীরা। আবার বিয়েসহ বিভিন্ন বড় আয়োজনেও ক্যাটারিং সার্ভিস সেন্টারগুলো খাবার সরবরাহ করে। এ ব্যবসার মাধ্যমে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক বেশি। কারণ, বাড়িতে বসে এই ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব। তবে শহরাঞ্চলে বিশেষ করে উপজেলা, জেলা বা বিভাগীয় শহরে এই ব্যবসার সম্ভাবনা বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় হোটেল ও পর্যটন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ পারভেজ আহম্মেদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই খাতের সম্ভাবনা খুব ভালো। এ জন্য আমরা মানবসম্পদ তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং দিয়ে থাকি। বাংলাদেশে ক্যাটারিং সার্ভিসভিত্তিক অনেক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। আরও ডিমান্ড আছে। এই খাতে আরও বড়বড় প্রতিষ্ঠান হবে। তখন প্রচুর লোকের প্রয়োজন হবে।’
Advertisement
তিনি বলেন, এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) বাস্তবায়নে ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে একটি হচ্ছে কর্মসংস্থান বাড়ানো। ক্যাটারিং সর্ভিসকে পেশা হিসেবে নিতে তরুণ প্রজন্ম বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। বর্তমানে ক্যাটারিংয়ের সঙ্গে জড়িত লোকের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। পাশাপশি মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন হয়েছে এবং ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। তাই একটু বেশি খরচ করে হলেও মানুষ হাইজেনিক ফুড খেতে চায়। ফলে ক্যাটারিং সর্ভিসের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, সিঙ্গাপুরের মানুষ ঘরে রান্না করে খায় না। তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যাটারিংয়ের খাবার খান। কারণ রান্না-বান্না করা, থালা-বাসুন ধোয়াকে তারা উপদ্রব মনে করেন। বাংলাদেশেও কিছুকিছু ক্ষেত্রে এ হ্যাবিটটা গ্রো করতে শুরু করেছে। মানুষ চাইলে একটু ফোন করে দিলেই খাবার বাসায় চলে আসছে। আবার অনলাইনেও খাবারের অর্ডার চলে আসছে। তাই মানুষ ধীরে ধীরে চাকরি-বাকরির পর আগামীতে আর রান্না-বান্না করবে না। তখন ক্যাটারিংয়ের চাহিদা আরও বেড়ে যাবে।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্যাটারিংয়ের প্রসারে তাদের ব্যবসায় ধস নামছে- এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ পারভেজ আহম্মেদ চৌধুরী বলেন, ক্যাটারিং সার্ভিসের খাবার মূলত অফিসের লোকজন খেয়ে থাকেন। অফিসে যারা জব করেন বা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের দুপুরের খাবারের সমস্যা হয়। তারাই ক্যাটারিংয়ের খাবার খান। আর অনেক বড় আয়োজন, যেমন- দুই বা পাঁচ হাজার লোকের খাবারের প্রয়োজন হলে ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে সরবরাহ করা হয়। তবে যারা হোটেলে খাবার খান তারা হোটেলেই খাবেন। কারণ, হোটেলে খাবার খান ভ্রাম্যমাণ লোকেরা। মনে করেন, আপনি কোনো কাজে এমন জায়গায় গেলেন, যেখানে হোটেলের খাবার না খেয়ে আপনার অন্য কোনো উপায় থাকবে না। তখন আপনাকে হোটেলেই খেতে হবে। ফলে ক্যাটারিংয়ের কারণে হোটেল ব্যবসায় ধস নামছে- এটা সঠিক নয়।
তিনি বলেন, যারা রেস্টুরেন্টে ফুড খান, তারা ক্যাটারিংয়ের ফুড খান না। আবার যারা ফাস্টফুড খান, তারা রেস্টুরেন্টের ফুড খান না। এ ক্ষেত্রে হোটেল ব্যবসায়ীদের ভীত হওয়ার কিছু নেই। কারণ এসবের চাহিদা প্রচুর রয়েছে।
Advertisement
ইনস্টিটিউট অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজার ইকবাল আহসান বলেন, এ ব্যবসা শুরু করতে ঝুঁকির বালাই নেই। ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা হলে ব্যবসাটি শুরু করা সম্ভব। ব্যবসা শুরুর জন্য বেশি জিনিসপত্র কেনারও প্রয়োজন হয় না। ব্যবহার করতে পারেন বাসার রান্নার সামগ্রী, হাঁড়ি-কড়াই দিয়ে। তাই ক্রমাগতভাবে ক্যাটারিং ব্যবসার প্রসার ঘটছে। তবে ফাস্টফুড আইটেম তৈরি করতে চাইলে একটি ওভেন, ব্লেন্ডার, ডাইস ইত্যাদির প্রয়োজন হয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সার্বিক অর্থনীতির গতি যেভাবে বাড়ছে তাতে আগামীতে এ খাতের চাহিদা আরও বাড়বে। কর্মসংস্থানও বাড়বে।
এই খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো একটি ভালো ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অল্প পরিসরে নিজের রান্নাঘর থেকেই এ ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। উদ্যোক্তাকে প্রথমে ঠিক করতে হবে, কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা কোন এলাকায় খাবার সরবরাহ করবেন। এরপর খাবারের আইটেম নির্ধারণ করতে হবে। স্থানভেদে খাবারের আইটেমের জনপ্রিয়তার পার্থক্য দেখা যায়।
যেমন- শিক্ষার্থীদের কাছে ফাস্টফুড বা স্ন্যাকসজাতীয় খাবার বেশ জনপ্রিয়। আবার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কেক-বিস্কুট, পিঠাপুলি আর স্ন্যাকসজাতীয় খাবারের চাহিদা বেশি। সুপারশপগুলো সাধারণত বিভিন্ন ফ্রোজেন খাবারের অর্ডার দিয়ে থাকে। বিভিন্ন অফিসে বা বাসায় দুপুর ও রাতের খাবার আইটেমের মধ্যে ভাত, তরকারি, খিচুড়ি ইত্যাদির চাহিদা বেশি। বিকেলের নাশতায় অফিসে কেক, পিঠা, নুডলস সরবরাহ করতে পারেন।
রাজধানীর অনেক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে আজকাল হোমমেড ফুড প্যাকেটে করে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে কেক, কুকিজ, বিস্কুট, পিঠা, পনির, লাড্ডু, মোয়া, মুড়ালি, সিঙ্গারা, সমুচা, স্যান্ডউইচ ইত্যাদি। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেও খাবার সরবরাহ করা যায়। আর অফিসপাড়ায় বরাবরই দুপুরের খাবারের চাহিদা রয়েছে। খাবারের আইটেমের ওপর নির্ভর করে খাবার তৈরিতে ব্যবহার্য সরঞ্জাম কিনতে হবে। অফিসে বা বাসায় বাসায় খাবার সরবরাহের জন্য দু-একজন ডেলিভারি বয় রাখতে হবে।
এছাড়া বড় আকারে ব্যবসা শুরু করা সম্ভাব হলে ক্যাটারিং সর্ভিস সেন্টার করা যেতে পারে। সেন্টারে বেশি সংখ্যক লোকবল নিয়োগ দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানসহ বড় বড় আয়োজনের অর্ডার নিয়ে কয়েক হাজার লোকের খাবার সরবরাহ করাও যায়। বর্তমানে এ ধরনের বড় সেন্টারও হচ্ছে।
এমইউএইচ/জেডএ/জেআইএম