দেশজুড়ে

‘প্রাণ’ বাঁচলে নাটোর বাঁচবে

‘প্রাণ’ বাঁচলে নাটোর বাঁচবে বলে মনে করছেন নাটোরের চাষিরা। প্রাণ-এর বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে জেলার শত শত কৃষক, খামারি ও সরবরাহকারী আজ (বৃহস্পতিবার) মানববন্ধনও করেন।

Advertisement

নাটোর জেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণে তারা এ মানববন্ধন করেন। মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রকাশ করায় যমুনা টেলিভিশন ও যুগান্তরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও প্রদর্শন করা হয় মানববন্ধন থেকে।

মানববন্ধন শেষে চাষিরা নাটোর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন।

স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, ‘প্রাণ’ নাটোর তথা উত্তরবঙ্গের সাধারণ কৃষকের ভাগ্য ফিরিয়েছে। এ অঞ্চলের মেহনতি কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পেত না একসময়। ফসল নষ্ট হতো। নিজের উৎপাদিত ফসল নিজের কাছে গলার কাঁটা হতো। ‘প্রাণ’ দেশীয় পণ্যনির্ভর বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরি করায় কৃষকের দিন বদলে গেছে। এখানকার কৃষকরা এখন স্বাবলম্বী।

Advertisement

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘প্রাণ’ যখন দেশের মানুষের প্রাণে মিশে গেছে, তখন একটি কুচক্রীমহল ‘প্রাণ’ তথা কৃষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এরই ধারাবাহিকতায় যমুনা গ্রুপের যমুনা টেলিভিশন এবং দৈনিক যুগান্তর একের পর এক ষড়যন্ত্রমূলক সংবাদ প্রকাশ করছে। অবিলম্বে এ ষড়যন্ত্র বন্ধের আহ্বান জানান তারা।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, আমরা প্রাণকে আশীর্বাদ হিসেবে জানি। প্রাণের কারণেই আমরা আজ ভালো আছি। উত্তরাঞ্চলের হাজারও কৃষক এখন প্রাণনির্ভর। প্রাণ-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে কৃষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

আরেক সরবরাহকারী আফসার আলী বলেন, সম্প্রতি যমুনা টেলিভিশন এবং যুগান্তর পত্রিকার সংবাদ দেখে অবাক হয়েছি। সংবাদে সত্যতার লেশমাত্র নেই। ‘প্রাণ’ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের আম দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে এবং বাজারের সেরা আমটা আমরাই সরবরাহ করে আসছি। যমুনার এ ষড়যন্ত্র বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছি।

মানববন্ধনে অংশ নেয়া নাটোরের জংলী ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য আম চাষী রোকেয়া বেগম বলেন, ১৪ বছর আগে আমার স্বামী মারা যান। সে সময় আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে কী করবো ভেবে না পেয়ে গার্মেন্টসে কাজ করতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ছেলে-মেয়েদের মুখের দিকে চেয়ে ঢাকায় না গিয়ে পরিত্যক্ত দুই বিঘা জমিতে আমের চাষ করি। ‘প্রাণ’ সেই আম ন্যায্যমূল্যে কিনে নেয়ায় আমার ভাগ্য ফিরেছে। আমার মতো নাটোর তথা উত্তরবঙ্গের হাজারও আম চাষীর ভাগ্য ফিরিয়েছে ‘প্রাণ’। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল সেই ‘প্রাণে’র বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। তবে আমরা তাদের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেবো। বুক আগলে ‘প্রাণ’কে রক্ষা করবো।

Advertisement

পার্শ্ববর্তী নওগাঁর রানীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়ন থেকে আসা সরবরাহকারী আব্দুল হালিম বলেন, একসময় এই অঞ্চলের আম প্রচুর পরিমাণে নষ্ট হতো। গরু-ছাগলও সেগুলো খেতো না। প্রাণ-এর কারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখানকার মানুষের ভাগ্য ফিরেছে। আমরা চাষীদের কাছ থেকে আম কিনে বাছাই করে কারখানায় সরবরাহ করি। সেগুলো নিয়ে অনেক গবেষণা হয়, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। কিন্তু সেই প্রাণের কারখানা নিয়ে এখন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীরা এ ষড়যন্ত্র প্রাণ-এর বিরুদ্ধে করছে না, তারা ষড়যন্ত্র করছে এই অঞ্চলের মাটি ও মানুষের বিরুদ্ধে।

মানববন্ধন শেষে নাটোর জেলা প্রশাসককে দেয়া স্মারকলিপিতে কৃষকরা বলেন, একসময় আমের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত ছিলাম। নাটোরে প্রাণ-এর কারখানা স্থাপিত হওয়ার পর শুধু গুটি আমই নয়, সুমিষ্ট আমেরও সুদিন শুরু হয়। এতে আমের ব্যাপক চাষাবাদের সঙ্গে মসলাজাতীয় ফসলের উৎপাদনেও বিপ্লব হয়। ফলে পাল্টে যায় পুরো নাটোরের চিত্র।

এএসএস/এমবিআর/এনএফ/জেআইএম