একসময় আওয়ামী লীগ-বিএনপির ‘হেভি ওয়েট’ প্রার্থীর আসন ছিল চাঁদপুর-১ আসন। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে এ আসনে সংসদ সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর একক আধিপত্য বিস্তার করছেন। অপরদিকে বিএনপির হেভি ওয়েট প্রার্থী এহসানুল হক মিলন মামলার কারণে দেশের বাইরেই আছেন। তবে বিএনপি থেকে মিলনেরই মনোনয়ন পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত বলে দাবি নেতাকর্মীদের।
Advertisement
অভিযোগ রয়েছে, ড.মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কর্মী বাহিনীর দাপটে এ আসনে বিএনপি কোনো কর্মকাণ্ডই করতে পারে না। শুধু তা-ই নয়, এখানে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও কোনো প্রচার-প্রচারণা করতে পারছেন না।
তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনে এখন পর্যন্ত শুধু ড.মহীউদ্দীন খান আলমগীরের প্রচারণাই লক্ষণীয়। তারপরও এ আসনে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সচিব আলহাজ্ব মো. গোলাম হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। আর এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
চাঁদপুর-১ কচুয়া আসন ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৭২৩ জন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও আলোচনার ঝড় বইছে। এছাড়া এলাকায় আসতে না পেরে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
Advertisement
জানা গেছে, কচুয়ায় মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আলহাজ্ব মো. গোলাম হোসেন মাঠে আসায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে গোলাম হোসেন এলাকায় শক্ত অবস্থান করতে চাইলেও মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কর্মীরা তার ও কর্মীদের উপর বেশ কয়েকবার হামলা চালায় ও গাড়ি ভাঙচুর করেন।
এদিকে এ আসনের বর্তমান এমপি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টেকনোকেট কোটায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হন। ২০০৮ ও পরবর্তীতে ২০১৪ সালে দু’বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই কচুয়ার উন্নয়নের নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। বিশেষ করে অবহেলিত কচুয়ার প্রতিটি প্রান্তে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। এই উন্নয়ন ধরে রাখার স্বার্থে আবারও ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে প্রার্থী হিসেবে পেতে আগ্রহী তারা।
নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি সপ্তাহের বিভিন্ন দিন নির্বাচনী এলাকায় ছুটে আসছেন। যোগ দিচ্ছেন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও সভা সমাবেশে। এ ব্যাপারে কচুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী পাটওয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর অবহেলিত কচুয়াকে উন্নয়নে সম্পৃক্ত করেছেন। আমার বিশ্বাস আগামীতে তিনিই আবারও নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ও সচিব আলহাজ্ব মো. গোলাম হোসেন। তিনি সম্প্রতি আওয়ামী লীগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় এলাকায় ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। পাশাপাশি এলাকায় মহিলা কলেজ, হাসপাতালসহ বেশ কিছু সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।
Advertisement
বিশেষ করে কচুয়ার কোনো কর্মকাণ্ড করতে না পারলেও নিজ এলাকায় তার বাড়িতে প্রতি সপ্তাহে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সভা সমাবেশ, কর্মীসভা করে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয়ভাবেও তিনি ‘গ্রিন সিগনালে’ রয়েছেন বলে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। আগামী নির্বাচনে তিনিই আওয়ামী লীগের একক মনোনয়ন পাবেন বলে তার সমর্থকরা দাবি করছেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান হাতেম জাগো নিউজকে বলেন, জনগণ, তৃণমূল ও দলীয় নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আলহাজ্ব গোলাম হোসেনকে নৌকার মনোনয়ন দেবেন বলে আমরা আশাবাদী।
এ ব্যাপারে গোলাম হোসেন জাগো নিউজকে জানান, রাজনীতি হচ্ছে সব মানুষের সেবা করার সর্বোচ্চ মাধ্যম। কিন্তু এলাকায় কাজ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। তারপরও কাজ করে যাব। বিচার করবে জনগণ। অন্যদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি সরকারের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন বেশ কিছু মামলার আসামি হয়ে বর্তমানে দেশের বাইরেই অবস্থান করছেন।
বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, এ আসনে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহসানুল হক মিলনের বিকল্প নেই।
এছাড়া এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কচুয়া উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি প্রকৌশলী আ হ ম মনিরুজ্জামান দেওয়ান মানিক, মালয়েশিয়া শাখা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন। নেতাকর্মীদের নিয়ে বিভিন্নভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
তবে নেতাকর্মীদের দাবি বিএনপি থেকে আ ন ম এহসানুল হক মিলনেরই মনোনয়ন পাওয়া অনেকটা নিশ্চিত। যদি কোনো কারণে মিলন নির্বাচন করতে না পারেন তাহলে তার স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবী মনোনয়ন পেতে পারেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির একক মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কচুয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মো. এমদাদুল হক রুমন।
এফএ/পিআর