আইন-আদালত

আধা ঘণ্টার কথা বলে একঘণ্টা, এভাবে চললে মামলা ‘ক্লোজ’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ড নিয়ে খালেদার আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেছেন, আধা ঘণ্টার কথা বলে একঘণ্টা হয়ে গেল। সিনিয়র কেউ আসলেন না। এভাবে চললে কিন্তু মামলা ‘ক্লোজ’ করে দেব।

Advertisement

খালেদার আপিল শুনানির সময় এক ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও বিএনপি প্যানেলের সিনিয়র আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ায় খালেদার জুনিয়র আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত একথা বলেন।

বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে বেলা ২টায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। এজন্য দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান নির্ধারিত সময়েই আদালতে উপস্থিত হন। তবে, খালেদা জিয়ার পক্ষে সিনিয়র কোনো আইনজীবী তখনও উপস্থিত হননি। কিন্তু সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর চেম্বারের একজন জুনিয়র আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হয়ে আদালতের কাছে আধা ঘণ্টা সময় চান। আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করেন।

এরপর অন্যান্য মামলার শুনানি হয়। কিন্তু এক ঘণ্টা সময় চলে গেলেও সিনিয়র কেউ উপস্থিত না হওয়ায় খালেদার পক্ষে উপস্থিত জুনিয়র আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, আধা ঘণ্টার কথা বলে একঘণ্টা হয়ে গেল। সিনিয়র কেউ আসলেন না। এভাবে চললে কিন্তু মামলা ‘ক্লোজ’ কর দেব। আদালত বলেন, শুধুই কী একা এ জে মোহাম্মদ আলী? আরো তো অনেক সিনিয়র আইনজীবী আছেন এ মামলায়। তারা কোথায়?

Advertisement

এ সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে জুনিয়র আইনজীবী বলেন, মাই লর্ড। আরেকটু বিবেচনা করুন। সিনিয়র এসে যাবেন।

আদালত বলেন, এভাবে তো দুইমাস ধরে বিবেচনা করছি। আর কত? এভাবে চললে আদালত চালাতে পারব না। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলা। তাতে যদি সিনিয়ররা না থাকেন তাহলে আদালত কী করতে পারে? আপনারা আদালতে আসছেন না। প্রতিদিনই এ অজুহাত, ওই অজুহাত দেখাচ্ছেন। এরপর আদালত বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকেন। তখন সময় বিকেল ৩টা ৪২ মিনিট। এ সময় আদালতে উপস্থিত হন খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল। তিনি আদালতে বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে একটি রিট হয়েছে। সিনিয়ররা সেখানে শুনানি করছেন। এটা আজই শুনানি শেষ হয়ে যাবে। তাই একটু বিবেচনা করুন। এ সময় আদালত বলেন, আপনারা আদালতকে সহযোগিতা করুন। তা না হলে আদালত আদালতের মতোই চলবে।

জবাবে ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, আমরা সহযোগিতা করছি। আরও করতে চাই। এই মামলায় এ জে মোহাম্মদ আলী সিনিয়র। তিনি ছাড়া আর কেউ কথা বলতে চান না। এসময় আদালত দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর মতামত নিয়ে আজ সকালে শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন।

এ পর্যায়ে খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মৌখিক আবেদন জানান ব্যারিস্টার বাদল। এ সময় আদালত বলেন, জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আপনাকে পাওয়া গেছে। জামিনে থাকলে তো আপনাকেও পাওয়া যেত না। তাছাড়া জামিন বাড়িয়ে লাভ কী! জামিন নিয়েতো কাজ হয়নি। এটাতো কার্যকর হয়নি।

Advertisement

জবাবে ব্যারিস্টার বাদল বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে যা হচ্ছে তা শুনলে অবাক হয়ে যাবে এই আদালত। জামিনযোগ্য মামলায় খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হচ্ছে না। জামিন আবেদন দিনের পর দিন শুনানি না করে ফেলে রাখা হচ্ছে।

এসময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, জামিন বাড়ানোর দরকার নেই। মূল মামলায় যুক্তি উপস্থাপন করছেন না। আবার জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করছেন, এটা হতে পারে না। আগে মূল মামলার শুনানি হোক। আপিল বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে। এনিয়ে খালেদা জিয়া ও দুদকের আইনজীবীদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আদালত বলেন, আপনাদের ঝগড়া করে লাভ কী! আদালত খালেদা জিয়ার আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মূল মামলার শুনানি করবেন না? অথচ জামিন বাড়ানোর আবেদন করবেন, এটা হয় না। আদালত বলেন, আপনারা সবাই আসুন। সবাই মিলে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। আদালত বলেন, সবক্ষেত্রেই দেখা যায়, জামিন হয়ে গেলে মূল মামলার শুনানি করার জন্য আর কাউকে পাওয়া যায় না।

এফএইচ/জেএইচ/জেআইএম