দেশজুড়ে

জামায়াতের বাধায় ব্যারিস্টার আমিনুল, ফারুক চৌধুরী একা

তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিরোধের মুখে পড়েছেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। আর এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হকের প্রধান বাধা জামায়াত।

Advertisement

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এই দুই হেবিওয়েট প্রার্থী ছাড়াও আরও ডজনখানেক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে ভোটের মাঠে।

এর মধ্যে ফারুক চৌধুরী বাদে আওয়ামী লীগেরই রয়েছে সাত মনোনয়ন প্রত্যাশী। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরীর দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতে এই সাত নেতার জোট সক্রিয়ভাবে মাঠে।

এরা হলেন, তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি মতিউর রহমান, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আতাউর রহমান খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বদরুজ্জামান রবু মিয়া, অ্যাডভোকেট মোকবুল হোসেন খান, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও গোদাগাড়ী পৌর মেয়র মনিরুল ইসলাম বাবু এবং জেলা কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আখতারুজ্জামান।

Advertisement

এই সাত নেতা গত ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী বরাবর এমপি ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সাংগঠনিক অনিয়মের ২৩ দফা লিখিত অভিযোগ দেন। সেই থেকে কেন্দ্রে জোর তৎপরতাও চালাচ্ছেন এরা।

২৩ দফা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, ৯৯ জন সার ডিলার নিয়োগ, ১০ টাকার চালে ডিলার নিয়োগ, স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ, খাসপুকুর ইজারায় নজিরবিহীন দুর্নীতি, সরকারি গুদামে ধান ও গম ক্রয়, গভীর নলকূপের অপারেটর, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরি নিয়োগে দুর্নীতি, টিআর -কাবিখা বন্টনে দুর্নীতি ও অনিয়ম, উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতা প্রভৃতি।

এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও পুনর্বাসনেরও অভিযোগ করা হয়েছে। ফারুক চৌধুরীর হাতে দল নিরাপদ নয় দাবি করে নতুন কাউকে মনোনয়ন চেয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সম্প্রতি এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী নানান কারণে কোণঠাসা হয়ে রয়েছেন। এছাড়া নতুন করে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গে বিরোধেও জড়িয়েছেন তিনি।

Advertisement

দলীয় সূত্র বলছে, গত দুই মেয়াদের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর চারপাশে এখন বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা লোকজন। আওয়ামী লীগ নামে এরাই বিরোধী পক্ষের উপর চড়াও হচ্ছেন। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর গোদাগাড়ীর পিরিজপুরে মনোনয়ন প্রত্যাশী গোলাম রাব্বানীর শোডাউনে হামলা হয়। এর আগে গত ১৮ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনা সভা থেকে ফেরার পথে গোদাগাড়ী-কাঁকনহাট সড়কের সাধুর মোড়ে হামলার শিকার হন আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মতিউর রহমান।

অভিযোগ উঠেছে, সুবিধাবাদীরা এমপিকে সামনে রেখে এরা নানান অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব কর্মকাণ্ডে কোণঠাকা ওমর ফারুক চৌধুরী। ফলে আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়েও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি।

অন্যদিকে, এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার আমিনুল হক। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য তিনি। বিএনপির মন্ত্রী সভায় দুই মেয়াদে মন্ত্রীও ছিলেন। ব্যাপক উন্নয়ন করে এলাকার চেহারা বদলে দেয়া আমিনুল হকের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত।

জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানও হতে পারেন জোটের প্রার্থী। ১৯৮৬ সালে এই আসন থেকেই এমপি নির্বাচিত হন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।

তবে এখন পর্যন্ত ভোটের হিসাবে জোট আনছেন না বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, এই আসনে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বিকল্প নেই। তিন মেয়াদের এমপি এবং দুই মেয়াদের প্রভাবশালী মন্ত্রী থাকায় নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। এলাকায় রয়েছে তার ক্লিন ইমেজ।

এই আসনে বিএনপির মনোনয় চাইছেন দলটির চেয়ারপারনের সাবেক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত সচিব জহুরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক যুববিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান মার্কনি ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ক্যালিফোর্নিয়া বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক শাহাদৎ হোসেন শাহিন।

গোদাগাড়ী পৌর মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বাবু বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে রাজনীতি করছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। তার চারপাশে এখন জামায়াত-বিএনপি থেকে আসা নব্য আওয়ামী লীগ। এদেরই চাকরি দিচ্ছেন এমপি। তাদের সঙ্গে নিয়ে এলাকায় উন্নয়নের নামে লুটপাট করছে। অথচ দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্ছনার শিকার হচ্ছে।

তবে এমপি সমর্থক গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামানের দাবি, ভোটের আগে এমন অনেক কথাই আসে। তৃণমূলসহ সব পর্যায়েই ওমর ফারুক চৌধুরীর অবস্থান আগের মতই। মাঝে যে অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো ঘটছে সেগুলো বিচ্ছিন্ন। মূল দলের কোনো নেতা কিংবা এমপির তাতে সম্পৃক্ততা বা ইন্ধন নেই।

তিনি আরও দাবি করেন, দীর্ঘদিন এমপি থাকায় ওমর ফারুক চৌধুরীকে কেন্দ্র করেই এতদিন রাজনীতি করতেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সম্প্রতি তাদের সঙ্গে এমপির ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কেন্দ্রের দৃষ্টি আর্ষণের চেষ্টা করছেন। এমপি ও দলীয় নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে দল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

নেতাকর্মীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে গত সোমবার থেকে বুধবার বিকেল ৪টা ১০ মিনিট পর্যন্ত একাধিকবার উনার ব্যবহৃত নম্বরে কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এমএএস/এমএস